কেউ জীবাণুনাশক খেলে তার দায় আমার নয়: ডোনাল্ড ট্রাম্প
কেউ যদি জীবাণুনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়, তাহলে সে দায় তার নিজের। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখানে আমার কোনো ভুমিকা নেই; গতকাল সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই যেন নিজের আগের বক্তব্যকে অস্বীকার করলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই জীবাণুনাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে শরীরে ঢুকিয়ে এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তিলাভ করা যেতে পারে, এমন কথাই বলেছিলেন। ওই বক্তব্য শুনেছে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ নাগরিক।
ওই বক্তব্যের পরে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নাগরিক জীবাণুনাশক খাওয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে নেওয়ার চেষ্টা করেন শরীরে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবার হেল্পলাইনে এমন হাজার হাজার কল আসতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে দেশটির সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্পের 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' বক্তব্যের বিষয়ে। খবর ডেইলি মেইলের
এনিয়ে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জীবাণুনাশক সংক্রান্ত প্রায় সকল প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন মার্কিন রাষ্ট্রপতি, উল্টো বলেন 'ঠাট্টাচ্ছলে' তিনি নাকি এমন কথা বলেছিলেন!
এসময় তাকে সাংবাদিকেরা মেরিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হোগানের বিবৃতির বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।
এর আগে ল্যারি হোগান জানান, ট্রাম্পের বক্তব্যের পর থেকেই তার রাজ্যের হেল্পলাইনে জীবাণুনাশক খেলে সত্যি কাজ হবে কিনা! - এমন কথা জানতে চেয়ে হাজার হাজার ফোনকল আসে স্বাস্থ্য সেবার জরুরি হটলাইনে।
এর দায় তিনি নেবেন কিনা গণমাধ্যম কর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'আমি বুঝতে পারছি না কেন? কেন এটা আমার ওপর বর্তাবে? না আমি এমন কোনো কিছুর জন্য মোটেও দায়ি নই।'
ট্রাম্পের জীবাণুনাশক সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে এখন ক্ষুদ্ধ সেদেশের সচেতন মানুষও। তারা বলছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের কবলে যখন যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন- ঠিক তখনই ট্রাম্প তার মুখের বাধন আরও আলগা করা শুরু করেছেন। আতঙ্কের এই পরিস্থিতিতে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছেন আরও নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে।
সিবিএস নিউজের 'ফেস দ্য নেশন' অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এবিষয়ে নিজের ক্ষোভ স্পষ্ট প্রকাশ করেন গভর্নর হোগান।
তিনি বলেন, 'পুরো দেশবাসী এখন ভীতসন্ত্রস্ত। তারা প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে এমন আশা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সেই বিবেচনা করে বক্তব্য দেওয়া উচিত।'
শুধু মেরিল্যান্ড নয়, ট্রাম্পের বক্তব্যের ফলাফল তুলে ধরেছেন ইলিনয় রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. এনগোজি এজিকে'ও।
গত শনিবারের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বেশ কিছু ফোনকলের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্যটির বাসিন্দাদের কেউ কেউ মাউথওয়াশের বদলে 'ব্লিচ' দিয়ে কুলি করে, কেউবা নিজের নাকের ভেতরে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে করে বিপদে পড়ার পর এসব ফোন আসে।
এজিকে সতর্ক করে বলেন, 'শরীরে ইঞ্জেকশন দিয়ে হোক, খেয়ে বা তা নাকের মধ্যে নিয়ে- বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সকল প্রকার পরিষ্কারক পণ্যের এমন ব্যবহার অতি-বিপদজনক। এতে প্রাণহানির ঝুঁকিও থাকে।'
এক টুইট বার্তায় এনিয়ে সতর্ক করেন নিউইয়র্ক রাজ্যের হেলথ কমিশনার নিজেও।
ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই নানা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের অনুরোধে গৃহস্থালি পরিষ্কারক রাসায়নিকের বৃহৎ দুটি ব্র্যান্ড লাইজল এবং ক্লোরোক্স এক বিবৃতি দেয়। সেখানে তারা যেকোনো প্রকারে তাদের উৎপাদিত পরিষ্কারক ও জীবাণুনাশক না খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
ট্রাম্পের কথায় কান না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে টুইট করেছেন হিলারি ক্লিনটনসহ আরও অনেকে রাজনীতিবিদ।
এতকিছু যাকে ঘিরে হয়েছে সেই ট্রাম্প অবশ্য ছিলেন ভাবলেশহীন। তিনি যেন বলেই দিলেন, আমিতো ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারিনা। তবে দায় আমার কেন?