কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্যে মুসলিমদের দায়ী করছে ব্রিটেন!
করোনাভাইরাস মহামারি হয়ে এসেছে বিশ্ববাসীর জন্য। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। অথচ এই সর্বগ্রাসী ভাইরাসকে নিয়েও নানা ধরনের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই আক্রমণের নতুন শিকার ব্রিটেনের সংখ্যালঘু মুসলিমরা।
সিএনএন এর এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকার উত্তর ইংল্যান্ডের কিছু এলাকায় হঠাৎ করে লকডাউনের নির্দেশনা দেয়। এই ঘোষণা এমন সময় আসে যখন সেখানকার মুসলিম কমিউনিটি ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন এর পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেটার ম্যানচেস্টার, বার্নলি, ব্ল্যাকবার্ন, ব্র্যাডফোর্ড ও লাইচেস্টার- এই এলাকাগুলোতে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর এই জায়গাগুলোতেই লকডাউন দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় মুসলিম নেতারা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, 'এই সময়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন ঘোষণা এলে মুসলিমদের মনে আঘাত লাগবেই।'
আকবর নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'সরকার ঠিক ঈদের আগে এটা করলো, তার মানে সাধারণ মানুষ ধরেই নেবে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি করোনা ছড়াচ্ছে।'
এমন আলোচনার ভেতর ক্রেইগ হুইটেকার নামের এক স্থানীয় এমপি সংবাদমাধ্যমে বলেন, সংখ্যালঘুরা করোনার বিধিনিষেধ মানছে না। মুসলিমদের কথা বলছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রেইগ বলেন, 'অবশ্যই!'
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে হুইটেকারের এই বক্তব্য নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "সব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের কাজ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাই ঠিকমতো নিয়ম মেনে চলছে কি না সেটা তো দেখতেই হবে।"
পরে ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র জানান, যেসমস্ত মুসলিম নাগরিক ঈদুল আজহা উদযাপন করতে পারেননি, তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বরিস জনসন। আর এইসমস্ত এলাকায় নিয়ম-শৃংখলা বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে মসজিদের ইমাম প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
লকডাউন দেওয়ার জন্য যে সময়টি বেছে নিয়েছে প্রশাসন, তার সমালোচনা করেছেন স্থানীয় রাজনিতিবিদ ও মুসলিম নেতারা। ব্রিটেনে মুসলিম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে এমন একটি সংস্থা 'টেল-মামা'। হুইটেকারকে নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য বলে এই সংগঠনটি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, 'এভাবে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে কোন নিয়ম তৈরি করাটা অন্যায়। একজন এমপির এই কাজ মানায় না'।
সংগঠনের প্রধান ইমান আতা বলেন, মহামারির শুরুতে মার্চে লকডাউনের সময় থেকেই মুসলিমদের দায়ী করে আসছে ব্রিটেনের ডানপন্থী দলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকেও 'ইসলামোফোবিক' বলে মনে করেন অনেকেই। ২০১৮ সালে নিজের এক লেখায় মুসলিম নারীদের বোরকা সম্পর্কে বরিস লেখেন, বোরকা পরা নারীরা দেখতে 'ডাকবাক্সের' মতো, তাদের দেখলে মনে হয় 'ব্যাংক ডাকাতি' করতে এসেছেন।
যদিও পরবর্তীতে নিজের এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন জনসন।
ব্রিটেনের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই রোগে সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটি বেশি ভুগছে। তাদের মৃত্যুহার শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশিদের অভিযোগ, ব্রিটিশ সরকার তাদের স্বাস্থ্যের দিকে যুগ-যুগ ধরে কোনো নজর দেয়নি।