ক্রিস্টিনা ও জেসিকা সবার প্রেরণা হতে চান
কথা ছিল, আগামী সপ্তাহে মহাশূন্যে হেঁটে রেকর্ডটি করবেন তাঁরা। রেকর্ডটি হল, মহাশূন্যে মানুষের পদচারণার অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘শুধু নারীরা নিজেরা’ মহাকাশ স্টেশনের বাইরে আসবেন।
কিন্তু একটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিন দিন আগেই তাদের মহাশূন্যে বের হতে হল। আর তাতেই হল ইতিহাস।
শুক্রবার বৈদ্যুতিক সংযোগের ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে একসঙ্গে বেরিয়ে এলেন নাসার দুই নারী নভোচারী-- ক্রিস্টিনা কোচ ও জেসিকা মেইয়ার। সে হিসেবে তাঁরা এখন মহাশূন্যে হাঁটাহাটি করা বা স্পেসওয়াকে অংশ নেওয়া ‘বিশ্বের প্রথম নারী নভোচারী দল’।
গত সপ্তাহেই ক্রিস্টিনা কোচ ও অ্যান্ড্রু মরগান তিনটি নতুন ব্যাটারি বসিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটির পুরনো চার্জার বদল করতে শুক্রবার একসঙ্গে বেরোতে হল ক্রিস্টিনা ও জেসিকাকে।
জেসিকা মেইয়ার অবশ্য এই প্রথম হাঁটলেন মহাশূন্যে। তিনি ২২৮তম ব্যক্তি এবং ১৫তম নারী হিসেবে মহাশূন্যে হেঁটেছেন।
অন্যদিকে, ক্রিস্টিনা কোচ মহাশূন্যে হেঁটেছেন চতুর্থবারের মতো। তিনি মহাকাশ স্টেশনে সপ্তম মাস অতিক্রম করছেন। পুরো ১১ মাসের মিশন সম্পন্ন করলে তিনি প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশ স্টেশনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানের ইতিহাস তৈরি করবেন।
প্রসঙ্গত, মহাশূন্যে নারীদের স্পেসওয়াকে অংশ নেওয়া বা হাঁটাহাঁটির রেকর্ড বেশ পুরনো। ৩৫ বছর আগে, ১৯৮৪ সালের ২৫ জুলাই প্রথম নারী হিসেবে স্পেসওয়াকে অংশ নেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নভোচারী সভেতলানা সভিৎস্কায়া।
তিনি অবশ্য আরও দুটো ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন আরেক সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশে যাবার ১৯ বছর পর, ১৯৮২ সালে মহাকাশ ঘুরে এসে দ্বিতীয় নারী নভোচারীর সম্মানের অধিকারী হন সভেতলানা।
শুধু তাই নয়, ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সময়কালে দুবার মহাশূন্যে ঘুরে তিনি প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে ‘দুবার মহাশূন্যযাত্রার ইতিহাস’ গড়লেন।
আমেরিকান নারী নভোচারীদের জন্যও স্পেসওয়াকে অংশ নেওয়ার ইতিহাস পুরনো। ক্যাথি সুলিভান ৩৫ বছর আগে মহাশূন্যে হেঁটেছিলেন। তাঁর স্পেসওয়াকটি ছিল ১৯৮৪ সালের ১১ অক্টোবরের।
‘অল-উইমেন স্পেসওয়াক’এর জন্য নভোচারীদ্বয়কে অভিনন্দন জানিয়ে অনেকে আশা করছেন, ভবিষ্যতে এটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হবে।
অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ভুল করলেন ট্রাম্প
মজার বিষয় হল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নভোচারীদ্বয়কে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন। তখন তিনি ওদের বলেন, “এই প্রথম মহাকাশ স্টেশনের বাইরে বেরুলেন নারী নভোচারীরা।”
এই বলে নভোচারীদ্বয়কে নার্ভাস হতেও মানা করলেন ট্রাম্প। বললেন, “সারবিশ্বের টেলিভিশনে আপনাদের দেখা যাচ্ছে। তাই নার্ভাস হবেন না।”
এ সময় প্রেসিডেন্ট তাঁর কথোপকথনে পাঁচ মিনিটের বিরতি দিলে নভোচারী জেসিকা মেইয়ার বিনয়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ভুল সংশোধন করে দেন।
তিনি বলেন, “আমরা খুব বেশি কৃতিত্ব নিতে চাই না। কারণ এর আগেই অনেক নারী মহাকাশে হেঁটেছেন। তবে এবারই প্রথম ‘শুধু নারী নভোচারীরা’ একসঙ্গে মহাকাশে হাঁটলেন। আমাদের জন্য এটা খুব আনন্দের। ছ’বছর ধরে এজন্য আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
মেইয়ার অবশ্য এই কৃতিত্বের ভাগ তাদের আগে মহাশূন্যে পা রাখা নারীদের সবাইকে দিতে চান।
তিনি বললেন, “নারী বিজ্ঞানী, আবিস্কারক, প্রকৌশলী ও নভোচারীদের দীর্ঘ তালিকা দেখে আমরা তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করেছি। আজকে যেখানে আমরা রয়েছি, আশা করি সেখান থেকে সবাইকে প্রেরণা জোগাতে পারব-- শুধু নারীদের নয়-- আমরা প্রেরণা হব তাদের যারা স্বপ্ন দেখতে চায়, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কঠোর পরিশ্রমও করতে চায়।”