চন্দ্রাভিযান হল না ভারতের
পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করার ৪৭ দিনের মাথায় চাঁদের পৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি গিয়ে অবতরণের মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। থমকে যায় কোটি কোটি ভারতীয়ের স্বপ্ন। ব্যর্থ হয় চন্দ্রাভিযান।
এর মধ্যে দিয়ে প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের রোভার নামানোর চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ১টা ৫৩ মিনিটে চন্দ্রযান-২ এর চাঁদে অবতরণের কথা ছিল। তার এক মিনিট আগে চাঁদের ছবি পাঠানোর কথা ছিল নিয়ন্ত্রণকক্ষে। টানটান উত্তেজনা নিয়ে সেই চরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিয়ন্ত্রণকক্ষের সবাই।
সারাদেশ থেকে কুইজের মাধ্যমে ৭০ জন স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়েছিল। তাদেরকে, সে সঙ্গে একদল বিজ্ঞানীকেও পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) কন্ট্রোল রুমে বসেছিলেন। সেখান থেকে দেখছিলেন অবতরণের ঘটনাটি।
কিন্তু ইসরোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের স্ক্রিনে যে বিন্দু আর রেখায় বিক্রমের অবস্থান দেখানো হচ্ছিল, সেটা হঠাৎ থমকে গেল। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ল্যান্ডার বিক্রমের উচ্চতা তখন ২.১ কিলোমিটার। চন্দ্রযান-২ অভিযান কার্যত শেষ হয়ে গেল সেখানেই।
তবে সে সময় বিজ্ঞানীদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে মোদী বললেন, ‘‘আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। বিজ্ঞানের সেবার মধ্যে দিয়ে আপনারা মানবজাতির সেবা করেছেন।’’
শুক্রবার সকালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার কার্যালয়ে বসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদী।
অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন ইসরোর চেয়ারম্যান ও বিজ্ঞানী ডা. কে সিভান। তাকে জড়িয়ে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘লক্ষ্যে না পৌঁছুনো পর্যন্ত আমরা সরে দাঁড়াব না। আমরা আত্মবিশ্বাসী, সফল হবই। আমাদের কেউ রুখতে পারবে না।’’
এর আগে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দাবি করেছিল, চাঁদের যে অংশে ল্যান্ডার বিক্রম যাচ্ছে তাতে আজ পর্যন্ত কেউ পা রাখেনি। এতদিন সব অভিযান চাঁদের উত্তর মেরু বা গোলার্ধ এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে হয়েছে। এ প্রথম ভারত উপগ্রহের দক্ষিণ গোলার্ধ বা মেরুতে পা রাখতে অভিযান চালিয়েছে।
এর আগে চীন থেকে পাঠানো এক মহাকাশযান চাঁদের উত্তরের অংশে অবতরণ করেছিল। চীন বর্তমানে চাঁদের অন্ধকার দিকে একটি রোভার অবতরণ করিয়েছে। চন্দ্রযান-২ সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চাঁদে পৌঁছানো দেশ হিসেবে ভারত চতুর্থ হতে পারত। যাহোক, এ দফায় সেটা আর হল না।
২৩ জুলাই অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপিত এই মহাকাশযানটি ৪৪ মিটার দীর্ঘ এবং উচ্চতায় ১৫ তলা ভবনের সমান।