চীনে কোভিড-১৯ এর বর্তমান প্রাদুর্ভাবই সবচেয়ে মারাত্মক
২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান শহরে প্রথম কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যার ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু, সম্প্রতি দেশটিতে যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তা উহানের ঘটনার পরই সবচেয়ে বেশি প্রদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে অনিশ্চিত সময় পার করছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি।
এবারের প্রাদুর্ভাবের মূল উৎস অতি-সংক্রামক ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের বেশকিছু কঠোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই চীনের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ১৯টিতেই স্থানীয়দের মধ্যে ডেল্টা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
গত বুধবার (৩ নভেম্বর) বিভিন্ন প্রদেশে ৯৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় চীন, এরমধ্যে ১১ জন হন উপসর্গহীন আক্রান্ত। মধ্য চংকিং, হেনান ও পূর্ব উপকূল এ তিনটি প্রদেশে নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কোভিড সংক্রমণ রোধের বিরুদ্ধে 'শূন্য সহনশীলতা নীতি' সত্ত্বেও সংক্রমণের তীব্রতা দ্রুত মাথাচাড়া দিচ্ছে। এমনকি ইতঃপূর্বে যেসব প্রতিরোধ প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল, সেগুলোও এখন ফাঁকি দিয়ে ভাইরাসের বিস্তার বাড়ছে।
ডেল্টা ভেরিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোন বিকল্প নেই, চীনের পাশপাশি সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেেলিয়ার মতো কিছু দেশও এখন টিকাদান কর্মসূচির চাইতে কঠোর ব্যবস্থা প্রণয়নে ঝুঁকছে।
বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়েও ৯ জনকে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে সেখানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ জনে উন্নীত হয়েছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে ব্যাপক সংক্রমণের পর এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এ শহরে।
সংক্রমণ ছড়াচ্ছে শিক্ষা প্রতিস্থানেও। বেইজিংয়ে একজন স্কুল শিক্ষক পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে আসা দুজন শিশু শিক্ষার্থীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ওই শিক্ষক সম্প্রতি টিকা নেন। তিনি যে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিয়েছিলেন সেখানে আরও ১৬টি স্কুলের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। এসব স্কুলও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আসন্ন শীত মৌসুমে সংক্রমণ 'নাটকীয় হারে' বাড়ার আশঙ্কা থেকে গত সপ্তাহে নাগরিকদের নিত্যপণ্য মজুদ করার পরামর্শ দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সময়ে কঠোর লকডাউন চালু করা হলে মানুষ যেন পণ্য সংকটে না পড়ে, সেজন্যই এমন পরামর্শ দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবের নতুন শিকার চংকিং পৌর এলাকায় রাতারাতি কোভিড-১৯ গণপরীক্ষা শুরু করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। প্রথম কেস শনাক্তের পর ২৪ ঘণ্টাকে বলা হয় 'গোল্ডেন আওয়ার'- এই সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে নিয়ন্ত্রণে আসে ভাইরাসের বিস্তার। ঠিক সে কারণেই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, জিয়াংশু প্রদেশের চাংঝৌ শহরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে তিন দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে অনলাইনে।
কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে চীন। গত শনিবার সাংহাই ডিজনিল্যান্ড বিনোদন কেন্দ্রে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এসময় পার্কটিতে ভ্রমণকারীরা মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বাধ্য হন। এর আগে একজনকে শনাক্ত করা হয়, যিনি ওই পার্কে গিয়েছিলেন, সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয় স্থানীয় প্রশাসন।
এছাড়া, মিয়ানমার থেকেও চীনে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করছে চীন সরকার। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রুই শহরের বাসিন্দাদের ওপর কয়েক মাস ধরে অন্যান্য স্থানে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিজিটিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনের শীর্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ঝং নানশান অবশ্য আশাপ্রকাশ করেছেন যে, তার দেশ আগামী এক মাসের মধ্যেই নতুন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে।
তবে ভাইরাসে চীনের কঠোর বিধিনিষেধে দেশটির অর্থনীতিকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। ঝং জানান, তারা বর্তমানে নিরুপায়, কারণ দেশ-বিদেশের পর্যটন চালু করা হলে এবং বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলে লাগামহীনভাবে ভাইরাসের বিস্তার বাড়বে, ফলে অর্থনীতিও চরম দুর্দশায় পড়বে তখন।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ