ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বাতিল, বাইডেন সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার পথে হাঁটছেন
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থা প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বাইডেন প্রশাসন। নতুন অভিবাসন পরিকল্পনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিপরীত পথে হাঁটছে হোয়াইট হাউজ। সম্প্রতি, নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে আসা ৪৬ পৃষ্ঠার খসড়া অভিবাসন পরিকল্পনা বা ব্লুপ্রিন্টে লিখিত ভাবে বাইডেনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আবেদনকৃত গ্রিনকার্ডের অনুমোদন পেতে দ্বিগুণ সময়ের প্রয়োজন হয়। ২০১৪ সালের পর থেকে নয় লাখের বেশি নাগরিকত্ব আবেদন জমে থাকায় ব্যাকলগের পরিমাণ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়া কঠিন, ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়।
তবে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।
নতুন খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুধু অভিবাসন নীতি বাতিলই নয়, বরং পুরো প্রক্রিয়াকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া, বাইডেনের পূর্বসূরীদের দায়িত্বকালে জমে থাকা আবেদন এবং বিলম্বিত প্রক্রিয়ার বিষয়ও বিবেচনায় আনা হয়েছে।
নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আবেদনকারীদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন ধাপ হ্রাস পাবে। অন্যান্য দেশের নাগরিকরা সহজেই পরিবারের সাথে মিলিত হবার সুযোগ পাবেন। কর্ম ভিসা পাওয়াও সহজ হবে।
গত ৩ মে প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) খসড়া অভিবাসন পরিকল্পনা। "বৈধ ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে ডিএইচএসের পরিকল্পনা" শীর্ষক এই খসড়ায় নতুন উদ্যোগসমূহ তালিকাবদ্ধ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রকে 'সম্ভাবনার ক্ষেত্র এবং স্বাগত জানাতে প্রস্তুত' যে দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন তা বাস্তবায়িত করতেই অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করতে গৃহীত হবে নতুন এসব পরিকল্পনা।
খসড়া অনুযায়ী, আমেরিকায় বৈধভাবে বহিরাগতদের আগমণ নিশ্চিত করতে অভিবাসন প্রক্রিয়া পুনঃসংস্কার এবং প্রসারণ করাই বাইডেনের মূল লক্ষ্য।
সাতটি খণ্ডে বিভক্ত ওই নথিপত্রে নতুন নীতিমালা সংক্রান্ত প্রস্তাব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক, পাচারের শিকার ভুক্তভোগী, আমেরিকানদের বিদেশে বসবাসরত পরিবার, কানাডায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আমেরিকান, শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী এবং কৃষিকর্মীসহ অন্যান্য দেশের মানুষ সহজেই যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হতে পারবেন।
ইমিগ্রেশন আবেদনের ক্ষেত্রে বাধা হ্রাস করতে অভিবাসীরা কম খরচে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। এমনকি তারা ভিসা অব্যাহতির সুযোগও পাবেন। 'যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জীবনে অভিবাসীদের পূর্ণ অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে' বিধিমালাগুলো যাচাই এবং পুনঃসংস্কার করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
অভিবাসন নিয়ে পরিচালিত অধিকাংশ গবেষণায় দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি দেশটির অর্থনীতির জন্য লাভজনক। বিশেষ করে, দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেতে থাকায় বিষয়টি আরও জরুরি।
জনমত জরিপ অনুযায়ী বেশিরভাগ আমেরিকান অভিবাসন বৃদ্ধিকে সমর্থন করলেও ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন বহু রিপাবলিকান ভোটার।
অভিবাসন বিরোধীদের মতে, মহামারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারকালে বহিরাগতদের সুযোগ বৃদ্ধিতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় নাগরিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়বে।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় কাজ জমে থাকার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তুলতে প্রশাসন ইলেকট্রনিক আবেদন এবং ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার গ্রহণের পাশাপাশি আবেদনকারীদের জন্য বিভিন্ন প্রমাণাদি প্রদর্শনের বিষয়েও শীথিলতা আনার পরিকল্পনা করছে।
বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের জন্য এইচ ওয়ান বি ভিসার সুযোগ বৃদ্ধির পরিকল্পনাও করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর বাইরে, বহিরাগত উদ্যোক্তা যারা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ব্যবসা চালু করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে আগ্রহী তাদের জন্যও নতুন সুযোগ সৃষ্টির কথা ভাবছে বাইডেন প্রশাসন।
ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হলে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদানের নীতিমালা নিয়েও কাজ করছেন কর্মকর্তারা।
এছাড়া, নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অন্যান্য দেশের এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হলে বা সেসব দেশে সমলিঙ্গ বিবাহ ব্যবস্থা স্বীকৃত না হলে তারাও শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
এছাড়া, বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশকে সহযোগিতা বা আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে সহায়তাকারী অনিবন্ধিত অভিবাসীরাও নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ পাবেন।
তবে, সমালোচকরা বলছেন যে, বাইডেন প্রশাসন উন্মুক্ত অভিবাসন প্রক্রিয়ার নেতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নীতিমালা সস্তায় বহিরাগত কর্মী আমদানিতে উদ্ধুদ্ধ করবে বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। ফলে, সংকোচিত হবে কর্মসংস্থান। অন্যদিকে, নিগৃহীতদের আশ্রয় প্রদানের ফলে লাখ লাখ অতিরিক্ত জনগোষ্ঠী যুক্ত হবে।
বহিরাগতদের জন্য নিরাপত্তাজনিত যাচাই শিথিল করা উচিত হবে না বলে জোর দিয়েছেন রিপাবলিকানদের অনেকেই। তবে কর্মকর্তাদের দাবী, তারা সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম ও অন্যান্য হুমকিজনিত বিষয়গুলো কঠোরতার সাথে যাচাই করা অব্যাহত রাখবে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের এই খসড়া নথির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা। তবে, তারা জানিয়েছেন যে এ ধরনের খসড়া নথি আরও কয়েক ধাপ সংস্করণের মধ্য দিয়ে যাবে। আর তাই, বৈধ অভিবাসন নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়গুলো এখনও সুনির্দিষ্ট নয়। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছেন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস