ট্রাম্প অধ্যায়ের অবসান: যা করতে এসেছিলাম তাই করে যাচ্ছি
বিদায়ী বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, "আমরা যা করতে এসেছিলাম, তার সবটাই করেছি।"
ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন যে, 'অনেক কঠিন লড়াই মোকাবেলা করেছি, সবচাইতে শক্ত লড়াই মোকাবেলা করেছি ...কারণ আপনারা আমাকে এজন্যই নির্বাচিত করেছিলেন।''
গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হলেও এখনো সেই ফলাফল পুরোপুরি মেনে নেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আজ বুধবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন।
মঙ্গলবার শেষভাগে র্যাপার লিল ওয়েন ও কোডাক ব্ল্যাককে ক্ষমা ঘোষণা করেন ট্রাম্প । এদের উভয়ের ওপরই অস্ত্র মামলার অভিযোগ দায়ের করা ছিল। দুর্নীতি মামলার অভিযোগে ২৮ বছরের জন্য কারাদন্ড প্রাপ্ত ডেট্রয়েটের প্রাক্তন মেয়র কোয়ামে কিলপ্যাট্রিককেও ক্ষমা তালিকায় রেখেছেন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, অফিস ত্যাগের আগে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পকে তার প্রাক্তন উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননসহ আরও ডজনখানেকের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করতে হবে।
ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, "রাজনৈতিক সহিংসতা আমেরিকানদের আকাঙ্ক্ষিত সব কিছুর ওপর আক্রমণ"। তবে এই ভিডিওতে একটিবারের জন্যও তিনি তার উত্তরসূরি জো বাইডেনের নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি আগের অবস্থান বজায় রেখে বাইডেনকে কোনো অভিনন্দনও জানাননি।
এদিকে অভিষেকের প্রাক্কালে বাইডেন সেই ৪ লাখ মার্কিনির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন যারা কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণ করেছেন।
সূর্যাস্তের সময় ওয়াশিংটন ডিসির লিংকন মেমোরিয়ালসের সামনে ৪০০ বাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও যা বলেছেন:
বিদায়ী বার্তায় ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে 'বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।'
"আমাদের কোন ডানপন্থী বা বামপন্থী এজেন্ডা ছিল না, এটা রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাটের বিষয় নয়, এটা পুরো জাতির মঙ্গলের জন্য, পুরো জাতিরই জন্য,'' ট্রাম্প বলেছেন।
তবে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে যাচ্ছেন, তখন তার জনসমর্থনের হার ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা কোন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বনিম্ন হারের রেকর্ড।
ট্রাম্প সেই প্রেসিডেন্ট যে 'সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে' অভিশংসিত হয়েছেন ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগে আগে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি দুইবার অভিশংসিত হয়েছেন।
প্রথমবার অভিশংসন থেকে সিনেটে তিনি অব্যাহতি পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার যদি তিনি সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে আর কখনো কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
করোনাভাইরাসে চার লাখ আমেরিকানের মৃত্যু আর দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হলেও সেসব ছাড়িয়ে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা।
বাইডেন যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন
জো বাইডেন এবং তার স্ত্রী জিল বাইডেন মঙ্গলবার তাদের ডেলাওয়ারের বাসভবন ছেড়ে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। ২০০৮ সালে বারাক ওবামার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ৩৬ বছর যাবত সিনেটর থাকার সময় এখানেই থাকতেন জো বাইডেন।
এর আগে বাইডেন এক আবেগী বিদায়ী বার্তায় বলেছেন, ''যখন আমি মারা যাবো, ডেলাওয়ারের কথা আমার হৃদয়ে লেখা থাকবে।''
বুধবার স্থানীয় সময় ১২টায় তিনি হোয়াইট হাউজে যাবেন। বাংলাদেশ সময় রাতের বেলায় ক্যাপিটল ভবনের সামনের চত্বরে তার অভিষেক অনুষ্ঠান হবে।
তবে এর আগে এভাবে আর কোন অভিষেক অনুষ্ঠান হয়নি। ক্যাপিটলে দাঙ্গার পর থেকে পুরো ওয়াশিংটন কড়া নিরাপত্তায় ঢেকে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং হোয়াইট হাউজের চারদিকে ধাতব বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
সাধারণত যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে, সেখানে শপথ গ্রহণ দেখার জন্য মাত্র গুটিকয়েক মানুষকে ক্যাপিটলের সামনের ন্যাশনাল মলে আসতে দেয়া হবে।
এমনকি এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকছেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ১৮৬৯ সালে সর্বশেষ অ্যান্ড্রু জনসনের পর এই প্রথম আবার এ ধরণের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। বুধবার সকালেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে ফ্লোরিডায় তার অবকাশযাপন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
[সূত্রঃ বিবিসি]