প্রয়োজনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আবারও মাঠে নামবেন, বললেন শিক্ষার্থীরা
ভারতের 'প্রেসক্রিপশনে' পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, ভারতীয় আধিপত্যকে রুখতে জুলাইয়ের আন্দোলনের মতো আবারও প্রয়োজন হলে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নামবেন।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে 'স্টুডেন্টস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (এসএডি)—চট্টগ্রাম মহানগর'-এর আয়োজনের 'জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি: পাওয়া না পাওয়া' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসএডির চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাজিদের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র মাসুমুল করিম রোহান ও সদস্য উম্মে হাবিবা ঝুমার সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলী আর রাজী।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগং এর প্রতিনিধি শাহজালাল ফারুক, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মহিউদ্দিন ফারুক, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং এর মোহাম্মদ ইউনুচ মিয়া সাজিব, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের চৌধুরী সিয়াম ইলাহী, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির পুষ্পিতা নাথ, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এ কে এম ফাহিম চৌধুরী, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদ তাওসিফ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আবু জুনায়েদ আসাদ, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পিইউএসএবি) সাকিন শাবাব এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহেদ মুহিবুল্লাহ।
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, '২৪-এর জুলাইয়ে যখন সব বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হলো, তখন ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামেন। পুরো আন্দোলনের ফুয়েলের মতো কাজ করেঙ। ভারতের প্রেসক্রিপশনে দেশেকে আবারও অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বৈরাচারের দোসররা সংখ্যালঘু ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষে আবারও পড়ার টেবিলে বসেছি। প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামব ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে।'
পিইউএসএবির সাকিন শাবাব বলেন, 'পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দূরে রাখা হয়েছে। পাওয়ার মধ্যে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এখনও কীভাবে বসে আছেঙ? আমি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আহ্বান জানাই। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের পাশে থাকবে।'
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা বলেন, '৫ আগস্টের পর আমাদের দূরে রাখা হয়েছে। আমরা মিডটার্ম, ক্লাস টেস্টসহ পড়ার টেবিলে ফিরে গেছি। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র গঠনের নীতিনির্ধারণে আমাদের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজল। তা নিশ্চিত হয়নি। অথচ এখনও কাঠামোগত সংস্কার পিছিয়ে। আমরা ভেবেছিলাম বিপ্লবী সরকার আসবে, কিন্তু এসেছে নমনীয় সরকার। দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে না। কাঠামোগত সংস্কার করে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে।'
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলী আর রাজী বলেন, 'বেসরকারি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলে আমরা নতুন বিভেদ তৈরি করতে চাই না। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিকরণ করা হয় জ্ঞানের ভিত্তিতে, যেন সমস্যা সমাধান করা যায়। কিন্তু তা যদি বিভেদ তৈরি করে, তাহলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা দেখেছি, স্বৈরাচারবিরোধী অভ্যুত্থানে দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দেশকে বাঁচাতে জীবন দেওয়ার উৎসবে পরিণত করেছিল আন্দোলনকে। তাই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন জীবনবোধ নিয়ে কাজ করতে হবে।'
আলোচনায় উঠে আসে জুলাই অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা, তাদের সংকট ও সম্ভাবনা এবং দেশের ক্রান্তিকালে তাদের কার্যকর অংশগ্রহণের ভবিষ্যৎ। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ঐক্য এবং বৃহত্তর সমাজে তাদের অবদান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের সংস্কারে তাদের ভূমিকা নিয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়।
আলোচনা সভায় অতিথি ছিলেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক চৌধুরী রাসেল ও তাহের সেলিম, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রেদোয়ানুল হক ও আসমা আল আমিন, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক সিদরাতুল মুনতাহা তৃণা, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাভেদ আরফাত, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগং-এর শিক্ষক এস এম শহিদুল আলম ও এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের শিক্ষক শাহাদাত হোসেন।