পংগং-সো হ্রদের দক্ষিণ পাড়েই ১০ হাজার সেনা, লাদাখে মোট ৫০টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন চীনের
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সম্মুখভাগের সেনা সংখ্যা গত এক সপ্তাহ জুড়ে আরও বাড়িয়েছে চীন। ফলে মোতায়েনকৃত মোট সেনাসংখ্যা এখন প্রায় ৫২ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে, ১০ হাজার সেনা আবার মোতায়েন করা হয়েছে পংগং-সো হ্রদের দক্ষিণ পাড়ে। গত ২৯-৩০ আগস্ট থেকেই এই দক্ষিণ পাড়ে ভারত ও চীন উভয়েই সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করতে তৎপর।
নিজ দেশের সেনাসূত্র এবং লাদাখে নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহের দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস। গণমাধ্যমটি বলছে, পারস্পরিক চোখ-রাঙ্গানিমূলক বিরোধ চরমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দুই পক্ষই যেভাবে সেনা বাড়িয়েছে, সেটা বিশ্লেষণ করে তারা এসব জানতে পেরেছে। চীনের আগ্রাসী মোতায়েনের সাথে তাল মিলিয়ে ভারতও একইভাবে সেনা বাড়াচ্ছে সেখানে।
ইকোনমিক টাইমসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, লাদাখে চীনা গণমুক্তি ফৌজ (পিএলএ) এই এক সপ্তাহে তাদের মোতায়েনকৃত ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ৩৫টি থেকে ৫০টি'তে উন্নীত করেছে। প্রতি ব্যাটালিয়নের রয়েছে ১০০০-১২০০ জন সেনা। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্মুখভাগের অবস্থানের খুবই কাছে চলে এসেছিল পিএলএ, যা ছিল চরম বিপজ্জনক এক ঘটনা। এরপরই সেদিন রাতে শূন্যে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ফিরে যায় তারা।
ভারতীয় সেনার এক শীর্ষ কর্মকর্তার জানান, ''এরপর গত এক সপ্তাহে কোনো প্রকার অনুপ্রবেশ বা মুখোমুখি সংঘাত হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা যায়নি। তবে পিএলএ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সেনা এবং সরঞ্জাম অগ্রভাগে মোতায়েন করেছে।''
সূত্রটির আরও দাবি, চীনা সেনারা সীমান্ত ভূমির বিতর্কিত অংশের মালিকানা আরও বেশি করে নিজ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও, ভারতীয় সেনাবাহিনী সে চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় পক্ষ পংগং-সো হ্রদের দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক চারটি স্থানে অবস্থান নিয়েছে, বলে জানানো হয়।
''সংঘাত বাঁধতে পারে এমন এলাকা বাড়ার কারণে দুই পক্ষের সেনা সদস্যদের মধ্যে তীব্র অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। উত্তেজনা নিরসনে চলতি সপ্তাহে সামরিক পর্যায়ে যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা; তার উপরই পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা অনেকটা নির্ভর করবে। সীমান্তে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সকল শাখা উচ্চ সতর্কতা বজায় রেখেছে, আমরা সার্বিক নজরদারিও বহুগুণে বাড়িয়েছি। হ্রদের দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত উচ্চ পর্বত শৃঙ্গে উত্তেজনা নিরসনের আগঃপর্যন্ত অবস্থান নেওয়া অব্যাহত রাখব আমরা,'' অজ্ঞাত ওই সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি অবসানের অংশ হিসেবে বৈঠকে 'ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন' (ডব্লিউএমসিসি) পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হবে।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর মস্কোতে অনুষ্ঠিত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ এস জয়শঙ্করের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্তে সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান হ্রাসে পাঁচদফা এই সমঝোতার শর্তসমূহ নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছান তারা। এর জেরেই চলতি সপ্তাহের বৈঠকে শীর্ষ সামরিক কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে ডব্লিউএমসিসি নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে সামরিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক তার মাঝেই চীনা গণমুক্তি ফৌজের বিরুদ্ধে লাগাতার সমঝোতার শর্তভঙ্গের অভিযোগ করছে ভারত।
দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের দাবি, 'প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপাড়ে ভারতীয় সেনা কখনোই অনুপ্রবেশ করেনি বা কোনো ধরনের আগ্রাসী আচরণও প্রদর্শন করেনি। আমরা গুলিও ছুড়িনি,'' দাবি করেন তারা।