পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন: তৃতীয়বারের মতো জয়ের পথে মমতার তৃণমূল
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিকে পরাজিত করে জয়ের পথে বাংলার মেয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস।
ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ২৯২টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২১১টি আসনে ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস যার মধ্যে ২টি আসনে দলটির জয় নিশ্চিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি এগিয়ে আছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৮টি আসনে। এছাড়া অল ঝাড়খাণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন পার্টি একটি আসনে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২টি আসনে এগিয়ে আছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আট পর্বের ভোটগ্রহণ শেষে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হচ্ছে আজ রোববার (২রা মে)। গত দশ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যটি দখলে রাখতে পারবে, না কি তাদের হটিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসবে, সে দিকেই গত কয়েক মাস ধরে সবার নজর ছিল।
কড়া নিরাপত্তা ও ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতীয় সময় আজ সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সাড়ে ৮টা) থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২টি আসনের ভোট গণনা শুরু হয়।
বস্তুত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ভোট গোনা হয় ভারতের আরও চারটি রাজ্য- তামিলনাডু, কেরালা, পন্ডিচেরি ও আসাম রাজ্যে। কিন্তু সবার ছিল নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকেই যার মূল লড়াই ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে।
সকালে পোস্টাল ব্যালটে প্রথমে গণনা শুরু হয়। প্রবীণ, অসুস্থ মানুষ এবং ভোটকর্মীরাই মূলত পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান করেন। তবে পোস্টাল ব্যালটের হিসেব দেখে ভোটের ফলাফল বোঝা সম্ভব নয় বলেই মত দিয়েছিলেন ভোট বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই পোস্টাল ব্যালট খানিকটা হলেও আত্মবিশ্বাস জোগায় তৃণমূলকে।
রবিবার ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষার ফল বলছে, সার্বিক ফলে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি বেশ পিছিয়ে। সময় যত গড়াচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপির ব্যবধান ততই বাড়ছে।
তৃণমূলের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বালিগঞ্জ কেন্দ্রে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে ফিরহাদ হাকিম, ভবানীপুর কেন্দ্রে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েটরা এগিয়ে রয়েছেন বড় ব্যবধানে।
২৯২টি আসনের জন্য রাজ্য জুড়ে ১০৮টি গণনাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গণনাকেন্দ্র রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। সেখানে ৩১টি আসনের জন্য ১৫টি গণনাকেন্দ্র করা হয়েছে। সবচেয়ে কম আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ১টি করে গণনাকেন্দ্র রয়েছে।
এমন সময়ে এ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে যখন গতকালই ভারতে চার লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতির জন্য গত বারের তুলনায় এ বার গণনাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কাউন্টিং হলের সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ বার মোট ৭০৬টি হলে ভোট গণনা হবে। গণনাকেন্দ্র বেশি হওয়ার ফলে রাউন্ডের সংখ্যাও বেশি হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি রাউন্ড গণনা হবে হুগলির চুঁচুড়া বিধানসভার আসন। সেখানে মোট ৩২ রাউন্ড গণনা হবে। সব চেয়ে কম ১১ রাউন্ড গণনা হবে মেটিয়াবুরুজ আসনের। তবে ২৯২টি আসনের জন্য কমিশন সর্বনিম্ন গড় রাউন্ড ১৮ এবং সর্বোচ্চ গড় রাউন্ড ২৬ বলে জানিয়েছে। রাউন্ডের সংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য চূড়ান্ত ফলাফল আসতে দেরি হবে বলেও মনে করছে কমিশন।
প্রসঙ্গত, ২৯২টি আসনে আট দফায় হয়েছে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। গত ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল ভোট প্রক্রিয়া। যা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়ায় সে দুই আসনে নির্দিষ্ট দিনে ভোট হয়নি। আগামী ১৬ মে সেখানে ভোট হবে। ফলপ্রকাশ হবে আগামী ১৯ মে। সার্বিকভাবে ২৯৪ আসন-বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১৪৮।
বাড়ি থেকেই ভোট গণনায় নজর রাখবেন মমতা
১৭তম বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিন কালীঘাটের বাড়িতেই থাকবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বারের ভোটে দল প্রত্যাশিত জয় পাবে বলে গতকাল শুক্রবারই প্রার্থীদের অভয় দিয়েছেন মমতা।
কোভিড সংক্রমণের কারণে মমতার কালীঘাটের বাড়িতে সকলের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ফলপ্রকাশের পরেও দলীয় নেতা-কর্মীদের তার বাড়িতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, ২০১১ ও ২০১৬ সালের ফল সম্পূর্ণ ঘোষণার আগে থেকেই ঢল নেমেছিল মমতার কালীঘাটের বাড়িতে।
কিন্তু এ বার তেমন পরিস্থিত এড়াতে চাইছে প্রশাসন। সূত্রের খবর, কালীঘাট ও তৃণমূল ভবনে পৃথক দু'টি কন্ট্রোলরুম করা হচ্ছে ফলাফলের উপর নজর রাখতে। গণনাকেন্দ্রের জন্য চালু করা হেল্পলাইন নম্বরটি কালীঘাটের একটি অফিস থেকেই পরিচালিত হবে। যদিও, সেটি তৃণমূল নেত্রীর বাসভবনে করা হচ্ছে না বলেই খবর। বাড়িতে বসেই যাতে তার কাছে গণনা সংক্রান্ত সব রকম খবরাখবর পৌঁছায়, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
নন্দীগ্রামেও এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নন্দীগ্রামে এগিয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট গণনার শুরু থেকেই পিছিয়ে ছিলেন তিনি। এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। সকাল থেকে পোস্টাল ব্যালটেও এগিয়ে ছিলেন শুভেন্দু।
প্রথম রাউন্ড শেষে ১৪৯৭ ভোটে এগিয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী। দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষে শুভেন্দুর লিড বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৬০। তৃতীয় রাউন্ড শেষে ৮ হাজার ২০৬ ভোটে এগিয়ে যান শুভেন্দু। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যবধান কমতে থাকে। সর্বশেষ পঞ্চদশ রাউন্ড শেষে সাড়ে ৪ হাজার ভোটে এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বামজোট কোন আসনে এগিয়ে নেই
ভারতের যে রাজনৈতিক জোট টানা সাতবার বা টানা ৩৪ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে, সেই বামফ্রন্ট (পশ্চিমবঙ্গ) এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত একটিও আসন পায়নি।
দুপুর একটা পর্যন্ত ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেস ২৮৪টি আসনের মধ্যে ২০২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
বিজেপি পেতে চলেছে ৭৭টি আসন।
স্বতন্ত্র দুইটি, ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন একটি, কংগ্রেস একটি আর রাষ্ট্রীয় সেকুলার মজলিস পার্টি একটি আসন পেলেও, ৩৪ বছরের শাসক দলের নামে একটিও আসন মেলেনি।
- নির্বাচনের নতুন নতুন ফলাফল আসায় ও আগের ফল পরিবর্তন হওয়ায় লেখাটি বারবার আপডেট হচ্ছে।
- বিবিসি বাংলা, হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে