ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ১২ তলা আবাসিক ভবন ধস, নিখোঁজ ৯৯
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামিতে একটি ১২ তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে কমপক্ষে ৯৯ জন, এছাড়া আহত হয়েছে ১১ জন।
ধসের সময় ভবনের ভেতরে ঠিক কতজন ছিলেন তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ধসের ফলে চ্যাম্পলাইন টাওয়ার নামক ভবনটির ১৩০ ইউনিটের অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিয়ামির সার্ফসাইড শহরে ওই ভবনটি ১৯৮০ সালে নির্মিত হয়।
ওই ভবনে বাস করা বেশ কয়েকজন লাতিন আমেরিকান অভিবাসী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে তাদের কনস্যুলেট।
প্যারাগুয়ের ফার্স্টলেডি সিলভানা লোপেজ মোরেইরার কয়েকজন আত্মীয়ও নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন। প্যারাগুয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফার্স্টলেডির বোন, তার স্বামী, তিন সন্তান ও গৃহকর্মীর কোন খোঁজ পাচ্ছেন না উদ্ধারকর্মীরা।
ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে ৩৫ জনকে টেনে বের করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দলগুলো ধ্বংসস্তূপের নীচে একটি পার্কিং গ্যারেজ থেকে কাজ করছে।
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের প্রধান রাইদ জাডাল্লাহ বলেন, উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় একবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে ২০ মিনিটের মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
উদ্ধারকাজে বিশেষ ক্যামেরা ও প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ধ্বংসস্তূপের খন্ড-বিখন্ড পাথর ও অন্যান্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা রেখে প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে সার্ফসাইডের মেয়র চার্লস বুরকেট বলেছেন, ভবনের পেছন দিকের অংশ পুরোপুরি ধসে গেছে।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, "টেলিভিশনের ফুটেজে ভয়াবহতার সঠিকতা আঁচ পাওয়া সম্ভব না। এমন একটি প্রকাণ্ড কাঠামো যেভাবে ধসে পড়ল তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক"।
এদিকে ভবন ধসের ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, "ফ্লোরিডার জনগণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তাদের যতটুকু সাহায্য প্রয়োজন, সরকার দেবে। আমরা অপেক্ষায় আছি। আপনারা সাহায্য চাওয়ামাত্র আমরা সেখানে পৌঁছে যাব"।
'৯/১১-এর মতো মনে হয়েছিল'
১২ তলা চ্যাম্পলাইন টাওয়ারগুলোর অবস্থান ৮৭৭৭ কলিন্স অ্যাভিনিউতে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মিয়ামি সমুদ্র সৈকতের উত্তরে সার্ফসাইড শহরে এই কলিনস অ্যাভিনিউ।
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তিনি ভবনটি ধসে পড়ার শব্দ শুনতে পান।
তিনি বলেন, "প্রথমে একটা গমগম শব্দ শুনে আমি ভেবেছিলাম হয়তো কোন মোটরসাইকেলের শব্দ। ঘুরে তাকাতেই দেখি রীতিমত একটা ধুলোর কুণ্ডলি আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে।"
"আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে, আসলে হচ্ছেটা কী! আমরা আমাদের শার্ট দিয়ে মুখ ঢেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং নিরাপত্তা কর্মীর কাছে জানতে চাই যে 'কী হয়েছে?' তিনি বলেন যে, ভবনটি ধসে গেছে। "
প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে ধ্বংসস্তূপ দেখে সিএনএনকে জানান যে, "দেখে মনে হয়েছিল ৯/১১ এর মতো ঘটনা"। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর সেটি ধসে পড়ে।
ধসে পড়া ভবনটি পাশের এক বাসিন্দা সিবিএসের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, "ভবনটি কাঁপতে লাগল এবং তারপরে আমি জানালার বাইরে তাকালাম। প্রথমে কিছু দেখতে পারলাম না, আমি ভেবেছিলাম ঝড়ের মতো কিছু হয়েছে।"
"ধুলো পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর দেখি এত বড় ভবনটির পিছনের দুই-তৃতীয়াংশ ধসে পড়েছে।"
- সূত্র-বিবিসি