ব্রিটেনে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি সরানোর দাবি উঠল
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনের ঢেউ গিয় পড়েছে ব্রিটেনেও। এবার এই আন্দোলনের পক্ষ থেকে মহাত্মা গান্ধীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে তাঁর মূর্তি অপসারণের দাবি তোলা হয়েছে মধ্য ইংল্যান্ডের লিসেস্টার শহরে।
শহরটির বেলগ্রেভ গোল্ডেন মাইল এলাকায় ভারতের স্বাধীনতার নেতা মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর একটি ভাস্কর্য রয়েছে।
তার এই ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার এক আবেদনের পক্ষে প্রায় ৬,০০০ লোক সই করেছেন। অনলাইন ওই পিটিশনে মহাত্মা গান্ধীর বিরুদ্ধে 'বর্ণবাদের' অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এই আবেদনপত্রে গান্ধীকে একজন "ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী এবং যৌন নির্যাতনকারী" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
গত ১ জুন অনলাইনে পিটিশনটি করা হয়। change.org ওয়েবসাইটে এই পিটিশনটি করেন সমাজকর্মী কেরি পাঙ্গুলিয়ার। মাত্র ১৫ দিনেই ৫ হাজার ৯৮০ জন গান্ধীর মূর্তি সরানোর পক্ষে এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের জন্য মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যটি ২০০৯ সালে বেলগ্রেভ রোডে স্থাপন করা হয়।
কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এবার এই মূর্তি সরিয়ে ফেলার আবেদন করলেন কেরি।
১৯৪৮ সালে গান্ধী আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারত বিভক্তির সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য অপরিসীম দুর্ভোগ বয়ে এনেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন আবেদনের লেখক কেরি।
কেরি জানান, ১৫ দিনেরও কম সময়ে ৫ হাজার স্বাক্ষর হওয়ার পর সিটি কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সর্বশেষ খবর, "আমি লিসেস্টার সিটি কাউন্সিলের কাছ থেকে একটি আপডেট পেয়েছি। তারা আমাকে আবেদনটির যুক্তি উপস্থাপন এবং সমস্ত স্বাক্ষরসহ আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দিতে বলেছেন। এই পিটিশনে সমর্থন, স্বাক্ষর এবং পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আমি আপনা্দের ধন্যবাদ জানাতে চাই।' জানিয়েছেন কেরি।
একই সময়ে শহরের অনলাইন গণমাধ্যম লিসেস্টারশায়ারলাইভে এই আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। ১১৩৩ জন (৩৯ শতাংশ) এই আবেদনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৩৫ জন (৪৬ শতাংশ) মূর্তিটি যেমন আছে তেমনই রাখার পক্ষে ভোট দেন। আর বাকি ৪৫১ জন (১৫ শতাংশ) জানিয়েছেন- যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, এতে তাদের কিছুই যায় আসে না।
বিবিসি জানাচ্ছে,, এর আগে ব্রিস্টলে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকারীরা সপ্তদশ শতকের দাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কোলস্টনের মূর্তি নামিয়ে ফেলে। এর পরপরই গান্ধীর মূর্তি অপসারণে পিটিশন দাখিলের বিষয়টি প্রথম সামনে আসে।
এর আগে গত বছর ম্যানচেস্টারের কিছু শিক্ষার্থী গান্ধীর বিরুদ্ধে একই দাবি তুলেছিলেন। সেখানেও তাঁর বিরুদ্ধে 'কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বর্ণবাদী মনোভাবের' অভিযোগ তোলা হয়। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই একই অভিযোগে, আন্দোলনের মুখে ঘানার ঘানা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে থাকা গান্ধীর মূর্তি অপসারণ করা হয়।
বেলগ্রেভ রোডের গান্ধী মূর্তিটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লিসেস্টার ইস্টের প্রাক্তন সাংসদ, কিথ ভ্যাজ। তিনি এ মূর্তি অপসারণের দাবির প্রবল বিরোধিতা করে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে রক্ষা করবেন।
তিনি বলেন: "এটি একটি ভয়ঙ্কর আর্জি যা লিসেস্টার এবং দেশের সম্প্রদায়গুলিকে বিভক্ত করতে চায়।
"লিসেস্টার এবং লন্ডনে গান্ধীর মূর্তিগুলি শান্তি, সম্প্রীতি এবং অহিংসার প্রতীক হিসেবে আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।"
আবার লিসেস্টার ইস্টের এমপি ক্লডিয়া উইবি এই পিটিশনকে 'ভয়াবহ বিভ্রান্তি' আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে পথচ্যুত করবে।
তিনি বলেন, 'মার্টিন লুথার কিংয়ের মতোই একটি আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলেন গান্ধী। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার যেমন, তেমনি তাঁর অহিংস আন্দোলনও ছিল পথ পরিবর্তনের এক অনন্য শক্তি।'