এরদোয়ানের প্রতিপক্ষ কেমাল কিলিচদারওলু কি তুরস্কের গান্ধী!
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট বেধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তুরস্কের বিরোধী দলগুলো। বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি, যাকে 'তুর্কি গান্ধী'-ও বলা হয়। বিশ্লেষণ ইন্ডিয়া টুডের
প্রথম দফার নির্বাচনে কেমাল কিলিচদারওলু ৪৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোটের সীমা অর্জন না করায়, নির্বাচন গড়িয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। আগামী ২৮ মে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হবে। প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ানকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না দেওয়াটাকেই কেমালের বড় কৃতিত্ব বলে মনে করা হচ্ছে।
নম্র-স্বভাবের নেতা বলেই পরিচিত কেমাল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মহাত্মা গান্ধীর আধুনিক রূপ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। 'তুর্কি গান্ধী' বা 'কেমাল গান্ধী' নামেও তাকে ডাকেন সমর্থকরা।
মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাদৃশ্য
সরকারি কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিতে আসা ৭৪ বছরের কেমালের সাথে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের জনক মহাত্মা গান্ধীর বেশ সাদৃশ্য রয়েছে।
পাতলা গড়ন, সাধারণ পোশাক-পরিচ্ছদ ও গোঁফের দিক থেকে কেমাল কিলিচদারওলুর দারুণ মিল খুঁজে পাওয়া যায় মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে। বিশেষত, গান্ধী যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ওকালতি করতেন, তার তখনকার স্যুট-টাই পরিহিত ছবির সাথে কেমালের তুলনা করলে – চেহারার এই মিলটি ভালোভাবেই চোখে পড়ে।
অবশ্য শুধু চেহারা, বা নম্র স্বভাবের মিলের কারণেই তাকে 'তুর্কি গান্ধী' বা 'কেমাল গান্ধী' বলা হয় না। তুরস্কে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথেও রয়েছে মহাত্মার রাজনীতির মিল।
মহাত্মা গান্ধীর মতোই স্বচ্ছল এক পরিবারে জন্ম কেমালের। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী, আর মা গৃহিণী।
দৈনন্দিন জীবন সাদামাটাভাবে কাটাতে ভালোবাসেন কেমাল। মহাত্মা গান্ধীর মতোই বিশ্বাস করেন কৃচ্ছ্রসাধনে। একবার তিনি বলেওছিলেন, 'আমাদের (বাড়িতে) কোনো ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন আর ডিশ ওয়াশার নেই'।
গান্ধীর রাজনীতির সাথে মিল যেভাবে
রাজনীতির ক্ষেত্রেও মহাত্মা গান্ধীর সাথে কিলিচদারওলুর তুলনা করা যায়।
গান্ধী 'সর্ব ধর্ম সদ্ভাব' বা সকল ধর্মের জন্য সমান মর্যাদা ও সহাবস্থানে বিশ্বাস করতেন। দলের ধর্মীয় নীতিকে প্রসারিত করে একই পথে হাঁটছেন কেমাল। যাকে তিনি বলেছেন, দেশের সর্ব বর্ণকে ধারণের নীতি।
২০১৭ সালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত ৪৩২ কিলোমটার পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন তিনি। কামাল তখন বলেছিলেন, 'উদারবাদ-বিরোদী লোকরঞ্জনের উত্থান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় এই লংমার্চ'।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইনের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধী লংমার্চ করে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেন। কেমালের লংমার্চও যেন গান্ধীরই পদাঙ্ক অনুসরণ।