মহামারিতে ধারণার চেয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কর্মসংস্থান: জাতিসংঘ
মহামারির ধাক্কায় বিশ্বে কর্মসংস্থান ধারণার চেয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। একইসঙ্গে ধনী ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর পুনরুদ্ধার গতিতে পার্থক্যের জন্য অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়েও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রধান গাই রাইডার বলেন, "শ্রমবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার প্রক্রিয়া এখন মন্থর গতিতে চলছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় একটি পার্থক্য তৈরি হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতির নিম্নগামী হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "ভ্যাকসিন বিতরণে বৈষম্য এবং আর্থিক সক্ষমতার পার্থক্যের কারণে নাটকীয়ভাবে এই প্রবণতা বাড়ছে। দুটো ক্ষেত্রেই জরুরিভাবে নজর দেওয়া উচিত।"
মহামারি শুরু হওয়ার আগে, ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালে বৈশ্বিক কর্মঘণ্টা ৪.৩ শতাংশ কমবে বলে অনুমান করেছিল আইএলও, যা ১২ কোটি ৫০ লাখ পূর্ণকালীন চাকরির কর্মঘণ্টার সমান।
জুন মাসে আইএলও ১০ কোটি পূর্ণাকালীন চাকরি বা ৩.৫ শতাংশ কর্মঘণ্টা কমার কথা অনুমান করেছে।
তবে, এক্ষেত্রে উচ্চআয়ের দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশগুলোতে কর্মঘণ্টা ৩.৬ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার কথা জানিয়েছে আইএলও।
নিম্ন আয়ের দেশে এই হার ৫.৭ শতাংশ এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে এই হার সবচেয়ে বেশি ৭.৩ শতাংশ।
অঞ্চলভেদে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় কর্মসংস্থান সংকোচনের হার সবচেয়ে কম। আরব দেশগুলোতে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদন অনুসারে, ভ্যাকসিন বিতরণ এবং নগদ প্রণোদনা প্রদানে পার্থক্যের কারণে এই বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া, তরুণরা বিশেষ করে তরুণ নারী কর্মীরা মহামারির কারণে কর্মসংস্থান হ্রাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আইএলও'র প্রতিবেদন অনুসারে, নিম্ন আয়ের দেশগুলো আরও সহজে ভ্যাকসিন পেলে তিন মাসের মধ্যেই কর্মঘণ্টার পুনরুদ্ধারে ধনী দেশগুলোর সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে পূর্ণাঙ্গভাবে ভ্যাকসিন গ্রহণকারী প্রতি ১৪ জন ব্যক্তির জন্য বিশ্ববাজারে একটি পূর্ণকালীন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।
অক্টোবরের শুরুতে উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর ৫৯.৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী দুই ডোজ বা পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনের আওতায় আসে। আইএলওর প্রতিবেদন অনুসারে, নিম্ন আয়ের দেশে এই হার মাত্র ১.৬ শতাংশ।
প্রেস কনফারেন্সে রাইডার আরও বলেন, "২০২১ সালের শেষ তিন মাসের কর্মঘণ্টা পুনরুদ্ধারের মন্থর গতির কারণে সামনের সম্ভাবনার দিকে তাকালে 'দুর্বল ও অনিশ্চিত' ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে।"
এছাড়া, অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ এবং নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোর আর্থিক সীমাবদ্ধতা উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
- সূত্র: এএফপি