মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ইথিওপিয়াকে বাণিজ্য কর্মসূচি থেকে বাদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন বাণিজ্য কর্মসূচি থেকে ইথিওপিয়াকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার তিনি জানান, টাইগ্রে অঞ্চলে প্রায় এক বছরব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইথিওপিয়া ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই যুদ্ধকে মানবাধিকারের 'ঘোর লঙ্ঘন' বলে উল্লেখ করেছেন বাইডেন।
কংগ্রেসে পাঠানো একটি চিঠিতে বাইডেন লিখেন, আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের (এজিওএ) যোগ্য সুবিধাভোগী হিসেবে থাকার প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করেনি ইথিওপিয়া। সাব-সাহারার আফ্রিকান দেশগুলো এই প্রোগ্রামের আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক-মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে আফ্রিকান দেশগুলোকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাধা দূর করা এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের দিকে অগ্রগতিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে এর অধীনে।
শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা হারালে ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশটি আরও ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই নিষেধাজ্ঞা।
ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিনে গত মাসের এক মন্তব্যে ইথিওপিয়ার প্রধান বাণিজ্য আলোচক মামো মিহরেতু লিখেন, "ইথিওপিয়ার নতুন উৎপাদন খাত অস্তিত্বের হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। তাছাড়া, বাইডেনের নতুন এ পদক্ষেপ সাধারণ ইথিওপিয়ানদের অবস্থাকে কেবল আরও খারাপের দিকেই নিয়ে যাবে। ইথিওপিয়ার সংঘর্ষের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তাদের।"
তিনি জানান, ২০০০ সালে এজিওএ'র অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২কোটি ৮০ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে ইথিওপিয়া। এরপর ২০২০ সালে এই সংখ্যাটি প্রায় দশগুণ বেড়ে ৩০ কোটির কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। এজিওএ'র অধীনেই এর প্রায় অর্ধেক মূল্য রপ্তানি হয়েছে।
এজিওএ থেকে ইথিওপিয়াকে অপসারণ করার ফলে লক্ষাধিক নিম্ন আয়ের শ্রমিক ঝুঁকিতে পড়বে বলে উল্লেখ করেন মামো মিহরেতু।
ইথিওপিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকান দেশ গিনি ও মালিকেও প্রয়োজনীয় নিয়ম না মানা দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন বাইডেন। তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন' চলছিল ইথিওপিয়াতে।
এদিকে, হোয়াইট হাউজের এই পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইথিওপিয়ার সরকার। তবে, এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লবিং করেছিল তারা।
সম্প্রতি ইউএস হর্ন অব আফ্রিকা (আফ্রিকায় মার্কিন দূত) জেফরি ফেল্টম্যান সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধরত দলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতি বা কোনো আলোচনার 'ধারেকাছেও নেই'। টাইগ্রের মানবিক পরিস্থিতিকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, "এতে কোনো প্রশ্ন নেই যে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সত্যি বলতে, এ পরিস্থিতি দেখে শঙ্কিত আমরা।"
টাইগ্রে অঞ্চলে ইথিওপিয়ান সরকারের অবরোধের পাশাপাশি গত চার মাসে প্রতিবেশী আমহারা এবং আফার অঞ্চলে টাইগ্রে বাহিনীর তাণ্ডবের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম ছিল ইথিওপিয়া। কিন্তু, বর্তমানে চলমান যুদ্ধ সেই গতিকে থামিয়ে দিয়েছে।
- সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট