মোদির জন্য অপেক্ষা করবেন পুতিন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’দিনের এক সফরে বুধবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের পঞ্চম আয়োজনে যোগ দেবার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে। সাইবেরিয়ার ভ্লাদিভোস্তকে হচ্ছে এ আয়োজন।
ভ্লাদিভোস্তক রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের অঞ্চলগুলোর রাজধানী। ‘রাশিয়ান ফার ইস্ট’ নামে পরিচিত এ অঞ্চল রাশিয়ার একদম পূর্বদিকের এলাকা, যেটির অবস্থান পূর্ব সাইবেরিয়ার বৈকাল হৃদ ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি।
মঙ্গোলিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এ অঞ্চলের ভূভাগগত সীমানা রয়েছে। আর দক্ষিণ-পুবে এটির সমুদ্র-সীমানা জাপানের সঙ্গে, যেমন উত্তর-পুবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
ভৌগলিকভাবে সাইবেরিয়ার অংশ হলেও, একে সাধারণত আলাদা করে উল্লেখ করা হয়।
এই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার এ পূর্বাঞ্চল সফরে এলেন। ভারতীয় সময় ৪.৩০এ সেখানে পৌঁছান মোদি।সকালে দু’নেতার সাক্ষাৎ হয়। সাড়ে নটার দিকে তারা একটি শিপ-বিল্ডিং কমপ্লেক্সে পরিদর্শন করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় (আইএসটি) দু’নেতা ডেলিগেটদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন। এরপর নানা চুক্তি সাক্ষরের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
পুতিনের আমন্ত্রণটিকে তাঁর প্রতি অনেক বড় সম্মানের বিষয় বলে জানালেন মোদি। বললেন, “দুটো দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবার ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটি।”
পুতিনকে ধন্যবাদ জানালেন তাঁকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব দেবার জন্য। দু’দেশের বন্ধুভাবাপন্ন জনগণের মধ্যেকার সৌহার্দ্যের প্রকাশ এভাবেই পেয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। আর ভারতের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের জন্যও অনেক বড় সম্মান সেটি এ কথা বলতেও ভুললেন না।
দু’দেশের যৌথ আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য। জানা গেল, বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হবে তাদের মধ্যে।
রাশিয়া ভারতে আরও বিশটি পরমাণু কেন্দ্র স্থাপন করবে। চেন্নাই ও ভ্লাদিভস্তকের মধ্যে একটি সমুদ্র-যোগাযোগ চ্যানেলের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের প্রতি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ও তাদের কারিগরি সহযোগিতার বিষয়টি আরও সম্প্রসারিত হবে বলে জানালেন পুতিন। রাশিয়া ভারতের নৌবাহিনীর আধুনিকায়নেও কাজ করবে।
ওদিকে, মহাশূণ্যে যোগাযোগ বাড়তে যাচ্ছে তাদের মধ্যে। দু’দেশ জানিয়েছে, কৌশলগত সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খুলবে সেখানে।
ভারত ও রাশিয়া দু’দেশই বিশ্বের বহুমেরুকরণে বিশ্বাসী। ব্রিকস (বিশ্বের প্রধান পাঁচ উদীয়মান শক্তির একটি সহযোগিতা-সংক্ষেপে BRICS) ও এসসিও (SCO-সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন)এর মতো বেশ কটি বৈশ্বিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করছে দু’দেশ।
যৌথ কনফারেন্সে কাশ্মীর প্রশ্নে নয়াদিল্লির অবস্থানকেই সমর্থন দিলেন পুতিন-- যখন পাশে দাঁড়িয়ে প্রচ্ছন্নভাবে পাকিস্তানকে আক্রমণ করলেন মোদি এ কথা বলে যে, “দু’দেশই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কারও নাক গলানোর বিরুদ্ধে।”
দুজন নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে যে আছেন এবং থাকবেনও, সেটা বললেন মোদি। পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রসঙ্গে বললেন, “নানা ইস্যুতে আমরা প্রায়ই ফোনে কথা বলি। আপনাকে ফোন দিতে কখনও ইতস্তত বোধ করি না।”
পুতিন মোদিকে ‘রাশিয়ার বড়মাপের বন্ধু’ বলে অভিহিত করে তাদেরকে মস্কোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সমর্থন দিয়ে যাবার কথা বললেন। তারপর তাঁকে ধন্যবাদ জানালেন তাঁর আহ্বান গ্রহণ করে মস্কোতে ২০২০ সালের মে মাসে অনুষ্ঠেয় গ্রেট প্যাট্রিওটিক ওয়ারে রুশীদের বিজয়ের ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির প্রতিশ্রুতি দেবার জন্য। কনফারেন্স শেষ করলেন তিনি এভাবেই, “আপনার জন্য অপেক্ষা করব আমরা।”
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এটি ২০তম দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন। বৃহষ্পতিবার মোদি ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ সম্মেলনে তিনিই যে প্রধান অতিথি।