যেভাবে কাবুল ছেড়ে পালাচ্ছে কূটনীতিকরা
সময়টা ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল; পশ্চিমা সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনাম রাষ্ট্রের অবসান ঘটে এদিন। সমাজতন্ত্রী গেরিলারা ঢুকে পড়ে রাজধানী সায়গনে। ওই সময় তড়িঘড়ি করে গোপনীয় অনেক দলিল-দস্তাবেজ পেছনে ফেলেই হেলিকপ্টারে করে পালাতে হয় মার্কিন কূটনীতিকদের।
দীর্ঘ পাঁচ দশক পর তালেবান আগ্রাসনের মুখেও যেন একইভাবে কাবুল ছাড়ছেন মার্কিন কূটনীতিকরা।
মার্কিন বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো সায়গনের মতো করেই আজ রোববার (১৫ আগস্ট) দিনের প্রথমভাগে কাবুলে অবস্থিত দূতাবাসের ছাদ থেকে মার্কিন কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।
শিনুক হেলিকপ্টারগুলো কাবুলের ওপর দিয়ে যেভাবে উড়েছে তা যেন ১৯৭৫ সালের দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি। ওই সময় মার্কিন নৌসেনার হেলিকপ্টার সায়গন থেকে মার্কিন কূটনীতিক ও নাগরিকদের উদ্ধার করে।
আজ সকালে মার্কিন দূতাবাস থেকে ধোয়ার কুণ্ডলীও উঠতে দেখা গেছে; কারণ কূটনীতিক কর্মকর্তারা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ- এর নথিসহ অন্যান্য গোপনীয় দলিল-দস্তাবেজ পুড়িয়ে ফেলছেন। আসন্ন বিপদের মুখে দূতাবাস ছাড়ার মুহূর্তে এমনটাই করার নিয়ম। আর যুক্তরাষ্ট্র চায় না, তাদের গোপন দলিল তালেবানের প্রচারণাকে শক্তি যোগাক। এতে করে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আজ দিনের মধ্যে দূতাবাস থেকে মার্কিন পতাকা নামিয়ে ফেলা হবে, বলে জানা গেছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের হতচকিত করে কল্পনার চেয়েও দ্রুতগতিতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে তালেবান। এই অবস্থায় উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কাবুলের উপকণ্ঠে দিনের শুরুতে শোনা গেছে গুলির শব্দ। তারপরই, শহরের অভ্যন্তরে কয়েকটি এলাকায় প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা। এ ঘটনাও বিস্মিত করেছে সকলকে।
অতি-সাম্প্রতিক এক গোয়েন্দা তথ্যের পুনঃবিশ্লেষণে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছিলেন, কাবুল অন্তত তিন মাস টিকে থাকতে পারবে। আর ব্রিটিশ মন্ত্রীরা ধারণা করেন, আর বড়জোর একমাস। কিন্তু, সবার ধারনাই ভুল প্রমাণ করেছে তালেবান। রুদ্ধশ্বাসে তাই কাবুল ছাড়তে হচ্ছে কূটনীতিকদের।
তালেবান অবশ্য আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করে সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে কাবুল সমর্পণের দাবি করেছে।
এসময় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, "আমরা কোনোপ্রকার অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করিনি।" অর্থাৎ, শেষ মুহূর্তের এ আলোচনায় কাজ না হলে তারা গায়ের জোরেই কাবুলের দখল নেবে।
সব মিলিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান ছাড়ার চাপ পড়েছে বিদেশিদের ওপর। এরমধ্যেই ১০ হাজার মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার কাজ বিদ্যুৎগতিতে চলছে। একাজে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনাও মোতায়েন করেছে জো বাইডেন প্রশাসন।
আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্রিটিশ সরকারও নিশ্চুপ বসে নেই। দেশটির অভিজাত ১৬তম এয়ার অ্যাসল্ট ব্রিগেডের ৬০০ সেনাকে উদ্ধার চলাকালীন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও মোতায়েন করা হয়েছে ১৫০ জন ছত্রীসেনা। মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ঘাঁটি থেকে উড়ে আসছে রয়্যাল এয়ারফোর্সের সামরিক পরিবহন বিমান। এসব বিমানে কাবুলে কর্মরত পাঁচ শতাধিক ব্রিটিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার রাত নাগাদ রাষ্ট্রদূত লরি ব্রিস্টোসহ মাত্র ১০ জনের মতো কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা বাকি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, আজ রাতের মধ্যেই স্যার লরি ও বাকি দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল