সাধারণ করদাতাদের চেয়ে অনেক কম হারে কর দেয় আমেরিকার শীর্ষ ৪০০ ধনী পরিবার
আমেরিকার শীর্ষ ৪০০ ধনী পরিবার ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যে হারে কর প্রদান করেছে, তা একজন গড়পড়তা সাধারণ করদাতার চেয়ে অনেকটাই কম। এমন বিস্ময়কর তথ্য বেরিয়ে এসেছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হোয়াইট হাউজের এক বিশ্লেষণে।
কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্স এবং অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের অর্থনীতিবিদরা সম্মিলিতভাবে এ বিশ্লেষণটি করেছে।
আমেরিকার শীর্ষ ৪০০ ধনী পরিবার দেশটির সব করদাতার ০.০০০২ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নিজেদের ফেডারেল ব্যক্তিগত আয়ের উপর কর প্রদান করেছে গড়ে ৮.২ শতাংশ।
সব মিলিয়ে উল্লিখিত নয় বছর সময়কালের মধ্যে তাদের ১.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের উপর যে হারে কর প্রদান করা হয়েছে, তা হোয়াইট হাউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যান্য সাধারণ করদাতাদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে 'বেশ কম'।
ট্যাক্স ফাউন্ডেশন বলছে, ২০১৮ সালে গড়ে একজন আমেরিকান তার আয়ের ওপর কর প্রদান করেছে ১৩.৩ শতাংশ (এই সংখ্যাটিতে শীর্ষ ৪০০ ধনী করদাতাসহ সকলেই অন্তর্ভুক্ত, পাশাপাশি এখানে বার্ষিক বিনিয়োগ লাভকেও গণ্য করা হয়নি)।
এই বিশ্লেষণের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে এমন একটি সময়ে, যখন ডেমোক্র্যাটরা ধনী ব্যক্তি ও কর্পোরেশনগুলোর উপর আরোপিত করের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছে যাতে শিক্ষা, বেতনভুক্ত ছুটি, স্বাস্থ্যসেবা, শিশুসেবা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী উদ্যোগের জন্য বিনিয়োগের তহবিল ৩.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হয়।
রিপাবলিকানরা অবশ্য এ ধরনের বিস্তৃত ট্যাক্স প্যাকেজের বিরোধী, কেননা এই প্যাকেজ বাস্তবায়িত হলে ২০১৭ সালে রিপাবলিকানদের করা কর আইনের অনেকগুলো বিষয়ই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে।
সম্প্রতি প্রো-পাবলিকা তাদের তদন্তের মাধ্যমে যেসব তথ্য প্রকাশ করেছিল, তার সঙ্গে হোয়াইট হাউজ কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্লেষণটি অনেকাংশেই মিলে যায়। প্রো-পাবলিকার তদন্তে উঠে এসেছিল, বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন ধনী (যার মধ্যে রয়েছেন জেফ বেজোস, মাইকেল ব্লুমবার্গ, ওয়ারেন বাফেট, কার্ল ইকাইন, ইলন মাস্ক, জর্জ সরোজ) তাদের মোট সম্পদের খুবই সামান্য অংশ কর হিসেবে প্রদান করে থাকেন।
ইন্টার্নাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) এর গোপন তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে করা ওই তদন্তে বলা হয়েছিল, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আমেরিকার শীর্ষ ২৫ ধনীর নিট মূল্য ৪০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধির বিপরীতে তারা সত্যিকারের ফেডারেল কর দিয়েছে ৩.৪ শতাংশ।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ তাদের আয়করের অধিকাংশই দেয় চাকরির বেতন থেকে। অন্যদিকে, সর্বোচ্চ ধনী আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি আয় করেন বিনিয়োগ করে, যা এক বছরের বেশিদিন স্থায়ী হলে, সেগুলোর উপর কর ধার্য করা হয় সাধারণ বেতন করের চেয়ে অনেক কম হারে।
বেতনের ওপর সর্বোচ্চ ফেডারেল আয় করের হার ৩৭ শতাংশ, অন্যদিকে লভ্যাংশ ও সম্পদ (যেমন স্টক ও বাড়ি) বিক্রির ওপর ধার্যকৃত করের হার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ।
এদিকে ধনীরা একটি সম্পদের অ্যাপ্রেশিয়েটেড ভ্যালুর (কোনো সম্পদের বর্ধিত মূল্য) ওপর আরোপিত কর থেকেও বাঁচতে পারে, যদি তারা ওই সম্পদ বিক্রি করে না দেয়। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় হলো নিজেদের বিনিয়োগগুলোকে 'স্টেপ আপ'-এর ভিত্তিতে তাদের উত্তরাধিকারদের কাছে হস্তান্তর করে দেওয়া।
হোয়াইট হাউজের বিশ্লেষণটি সচরাচর যে ধরনের বিশ্লেষণ হয়ে থাকে, তার থেকে ভিন্নধর্মী। তারা 'আনরিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনস'-ও (অর্থাৎ, কর-অনারোপিত প্রবৃদ্ধি) খতিয়ে দেখেছে।
তবে, বিশ্লেষণের মাধ্যমে হিসাবকৃত ৮.২ শতাংশ করের হার যে পুরোপুরি সঠিক না-ও হতে পারে, সে কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন এর রচয়িতারা। তাদের মতে, প্রকৃত হারটি সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যা হতে পারে।
'আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, শীর্ষ ধনীদের করের হারের ওপর করা যেকোনো হিসাব অনিশ্চিত হতে পারে, এবং সেগুলো পরিমার্জনের জন্যও উন্মুক্ত,' বলেছেন কাউন্সিল অভ ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্সের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ গ্রেগ লিসারসন এবং অফিস অভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড্যানি ইয়াগান। তারা উভয়ই প্রতিবেদনের সহ-রচয়িতা।
বিশ্লেষণটিতে গণ্য করা হয়নি এস্টেট করের মতো করসমূহও। এস্টেট করের ক্ষেত্রে বিবাহিত দম্পতিদের ২৩.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক মূল্যমানের এস্টেটের উপর ৪০ শতাংশ কর ধার্য করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রস্তাব দিয়েছেন, যাদের করের হার ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক, তাদের ক্যাপিটাল গেইন (পুঁজি প্রবৃদ্ধি) ও অন্যান্য লভ্যাংশের ওপর করের হার যেন ৩৯.৬ শতাংশে (যা বেতনের উপর ধার্যকৃত সর্বোচ্চ করের হারের সমান) উন্নীত করা হয়। এছাড়া তিনি 'স্টেপ আপ' ভিত্তিটিকেও পুরোপুরি ছেঁটে ফেলতে চেয়েছেন।
এদিকে হাউজ ডেমোক্র্যাটস দিয়েছে একদম ভিন্ন একটি প্রস্তাব। তারা চায় 'স্টেপ আপ' যেন অপরিবর্তিত থাকে, এবং ক্যাপিটাল গেইনের উপর সর্বোচ্চ করের হার রাখা হয় ২৫ শতাংশ।
- সূত্র: সিএনবিসি