পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে কী করবে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ?
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তৈরি 'জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ'-টি পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ লাখ মাইল দূরে তার নিজস্ব কক্ষপথে গিয়ে পৌঁছেছে। কয়েক বছরের প্রচেষ্টার পরে মহাবিশ্বকে নতুনভাবে উন্মোচনের উদ্দেশ্যে নাসা কর্তৃপক্ষ টেলিস্কোপটি তৈরি করেছে।
ইউএস স্পেস এজেন্সিটির সূত্র থেকে জানা যায়, উৎক্ষেপণের এক মাসের মাথায় সূর্যের চারদিকে নির্ধারিত কক্ষপথ পয়েন্টে যাওয়ার জন্য টেলিস্কোপটি সেটির ধাক্কাপ্রদানকারী থ্রাস্টার ইঞ্জিনটি চালু করেছে।
প্রাচ্যীয় সময় রাত দু'টোর কাছাকাছি টেলিস্কোপটি প্রায় পাঁচ মিনিট (২৯৭ সেকেন্ড) যাবত থ্রাস্টার ইঞ্জিন চালু রেখেছিল। এর ফলে সেটি কক্ষপথে প্রবেশের জন্য নিক্ষেপ পরবর্তী চূড়ান্ত পরিবর্তন সম্পন্ন করল।
এই অর্জনে নাসার পরিচালক বিল নেলসন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং পুরো টিমকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে, 'এর মধ্য দিয়ে নাসা মহাবিশ্বের মহারহস্যময় রূপ উন্মোচনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।'
জেমস ওয়েব (জেডব্লিউএসটি) টেলিস্কোপ পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দ্বিতীয় ল্যাগরেঞ্জ বিন্দুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ বিন্দুটিকে বলা হয় এল-২। ল্যাগরেঞ্জ বিন্দুতে যেকোন বস্তু পৃথিবীর সাথে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকে কোনো মধ্যাকর্ষণ প্রভাব ছাড়াই। আমাদের সৌরজগতে মোট পাঁচটি ল্যাগরেঞ্জ বিন্দু চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর নামকরণ করা হয় ফ্রেঞ্চ-ইতালিয় গণিতবিদ জোসেফ লুইস ল্যাগরেঞ্জের নামানুসারে।
আশা করা হচ্ছে, এল-২-তে পৌঁছে জেমস ওয়েব ব্রহ্মাণ্ডের আরো নিখুঁত ছবি ধারণ করতে পারবে।
এরপর কী হবে?
নাসা জানিয়েছে, এবার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ হবে টেলিস্কোপের অপটিক্সকে ন্যানোমিটারের কাছাকাছি সূক্ষ্মতায় সমানতালে নিয়ে আসা। এটি তিনমাস সময়কালীন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
জেমস ওয়েবের মহাকাশ সংক্রান্ত প্রথম প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে এখনও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মিরর সেগমেন্ট উৎক্ষেপণের সময়ই সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন এটির অপরিহার্য ১৮টি মিরর সেগমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে। এর ফলে টেলিস্কোপের ফোকাসিং থেকে বিম্ব গঠন পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া সূক্ষ্মভাবে সম্পাদিত হবে।
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে জেডব্লিউএসটি প্রজেক্টের ম্যানেজার বিল ওকস বলেন, গত মাসে জেডব্লিউএসটি অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলেও এই প্রজেক্টের পেছনে অনেক মানুষ গত কয়েক বছর ধরে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এই সাফল্য তাদের প্রতি একপ্রকার শ্রদ্ধার্ঘ।'
তিনি আরো বলেন, 'আমরা জেডব্লিউএসটি-র দর্পনগুলো সমরেখায় আনা, যন্ত্রপাতি চালুকরণ, কমিশনিং এবং এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচনের একদম প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।'
- সূত্র: ইয়ন নিউজ