ভয়েজার ১ সক্রিয় আছে: ১৫ বিলিয়ন মাইল দূর থেকে পৃথিবীতে সংকেত পাঠালো নাসার মহাকাশযানটি
ভয়েজার ১ সৌরজগতের বাইরে মহাকাশের অনেক গভীরে বিচরণ অব্যাহত রেখেছে। তবে বহু বছরের পুরোনো এ মহাকাশযানটি একটি নীরব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
গত ২৪ অক্টোবর সাময়িক নীরবতা ভেঙে পৃথিবীর সাথে আবার যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে এ দূরবর্তী মহাকাশযানটি।
১৬ অক্টোবর হঠাৎ-ই ভয়েজার ১-এর 'ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম' সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে মহাকাশযানটি সীমিত শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি চালু হলে অনেক সময় মহাকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। যার ফলে যানটির অবস্থান সম্পর্কে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
নাসা জানিয়েছে, মহাকাশযানটির একটি রেডিও ট্রান্সমিটার বিকল হয়ে গেছে এবং প্রকৌশলীরা এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। মহাকাশযানটির ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ট্রান্সমিটারটি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।
মহাকাশযানটির স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম নিজেকে রক্ষা করার জন্য অপ্রয়োজনীয় সিস্টেমগুলো বন্ধ করে দেয়।
অপ্রত্যাশিত শাটডাউন
সংকেত পাওয়ার পরই নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির ফ্লাইট দল দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা টেলিমেট্রি ডেটা বিশ্লেষণ করে যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন। তারা ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েজার ১-এ কমান্ড সিকোয়েন্স পাঠায় এবং মহাকাশযানটির প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে।
তবে এ যোগাযোগ সম্পন্ন হতে প্রায় দুই দিন সময় লাগে। একটি সংকেত পৃথিবী থেকে ১৫ বিলিয়ন মাইল (২৪ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে ভয়েজার ১-এর কাছে পৌঁছাতে প্রায় ২৩ ঘণ্টা সময় নেয় এবং ফেরত আসতেও ২৩ ঘণ্টা লাগে।
১৬ অক্টোবর একটি রুটিন কমান্ডের কারণে মহাকাশযানটির সিস্টেম অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। রুটিন কমান্ডের উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশযানটির একটি হিটার সক্রিয় করা।
নাসার প্রকাশিত ব্লগে বলা হয়, "যদিও ভয়েজার ১ এর হিটার পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি থাকার কথা ছিল, তবুও কমান্ডটি ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক ভয়েজার ১-এর সংকেত শনাক্ত করতে না পারায় দলটি ১৮ অক্টোবর সমস্যাটি সম্পর্কে অবগত হয়।"
এতদিন মহাকাশযানটি এক্স-ব্যান্ড রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করে এসেছে।
ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম চালু হয়ে যাওয়ায় শক্তি সংরক্ষণের জন্য মহাকাশযানটির এক্স-ব্যান্ড ট্রান্সমিটারটির ডেটা ট্রান্সমিশন হার কমিয়ে দেয়। এই ডেটা হারের পরিবর্তনের ফলে এক্স-ব্যান্ডের সংকেত পরিবর্তিত হয়। ফলে ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের জন্য ভয়েজার ১-এর সংকেত শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
নাসা আরও জানিয়েছে, "প্রকৌশলীরা ঘটনার পরের দিন সংকেতটি শনাক্ত করেন। তার আগ পর্যন্ত তারা মনে করছিলেন যে ভয়েজার ১ স্থিতিশীল অবস্থায়ই রয়েছে। ফ্লাইট দলটি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।"
চার দশক পর ভয়েজার ১-এর এস-ব্যান্ড চালু
তবে সমস্যা এখানেই থেমে থাকেনি। ১৯ অক্টোবর ভয়েজার ১ আবারও নীরব হয়ে পড়ে।
ফ্লাইট দল মনে করে যে মহাকাশযানটির ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম আরও দুবার সক্রিয় হওয়ায় এর এক্স-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
এসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন এক্স-ব্যান্ডের পরিবর্তে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত থাকা ব্যাকআপ সিস্টেম এস-ব্যান্ড ট্রান্সমিটারটি চালু করা হয়।
এস-ব্যান্ড ট্রান্সমিটারটি কম শক্তি ব্যবহার করে কাজ করতে পারে এবং তুলনামূলক দুর্বল সংকেত পাঠাতে পারে।
দূরত্ব ও দুর্বল সংকেতের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক সফলভাবে এস-ব্যান্ডের সংকেত শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এখন ফ্লাইট দলটির মূল মনোযোগ হচ্ছে ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার কারণ নির্ণয়ে ডেটা সংগ্রহ করা এবং ভয়েজার১-কে তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে নেওয়া।
ভয়েজার ১ ও ২ হচ্ছে একমাত্র মহাকাশযান যেগুলো মহাকাশে সৌরজগতের বাইরে অনেক গভীরে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। এগুলোর বয়স বাড়ার কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অসংগতি দেখা দিতে শুরু করেছে।
এ বছরই ভয়েজার ১ একাধিকবার যোগাযোগ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।