কী চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনায়?
মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের বৈঠকের তিন দিন পর আলোচনার বিস্তারিত ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধ থামাতে রাশিয়া তার 'চূড়ান্ত' প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেনকে। এই প্রস্তাব ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির গ্রহণ বা প্রত্যাখানের ওপরেই নির্ভর করছে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। ইসরায়েলভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবটি 'কঠিন' বলে মনে করা হলেও তা 'অসম্ভব' কিছু নয়। যদিও রাশিয়ার আক্রমণের আগে জেলেনস্কি যা পেতেন তার চেয়ে এখন ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা বেশি হয়েছে, তবে রাশিয়ার এ প্রস্তবে আগের দাবিগুলোই জানানো হয়েছে।
সূত্রের তথ্যমতে, এ সময় পুতিন তার বাহিনীকে সংঘাত থামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন; জেলেনস্কির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে এবং সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অনুমান, ইউক্রেন রাশিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, 'সামনের দিনগুলোতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির' মুখোমুখি হতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে, পুতিন তার সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দিতে পারেন, যার পরিণামে বদলে যেতে পারে ইউক্রেনের চেহারা।
জেলেনস্কি এখন অনেকটাই বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য জেরুজালেম পোস্টের তথ্যসূত্র। অন্যদিকে আবার, সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে না গিয়ে, সম্মুখে থেকে রুশ বাহিনীর মোকাবেলা করায় ব্যাপক জনপ্রিয়তাও উপভোগ করছেন তিনি; অনেকের কাছেই তিনি হয়ে উঠেছেন নিখুঁত চে গুয়েভারা। তবে, আর্জেন্টিনার এই বিপ্লবী গেরিলা নেতার পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল তা নিশ্চয়ই জেলেনস্কি জানানেন!
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতাকে মজবুত করতে হলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে এর বড় মূল্য চুকাতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত তিনি বিতর্কিত ডনবাস অঞ্চলের দাবি ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের রুশপন্থী ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে স্বীকৃতি দেবেন, সেইসঙ্গে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদান করবে না এমন অঙ্গীকার করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে সঙ্কুচিত করে ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ ঘোষণা করবেন। কিন্তু যদি তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তবে এর ফলাফল ভয়ানক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হাজার হাজার ইউক্রেনীয়র মৃত্যুর পাশপাশি পুরো ইউক্রেনই রাশিয়ার কাছে সার্বভৌমত্ব হারাতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা।
আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেটের মস্কো সফরের উদ্দেশ্য রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতা বা সমঝোতা করা ছিলনা; বরং বর্তমান পরিস্থিতে পুতিনের অবস্থান কী, তার মনের অবস্থা কেমন তা বুঝে এ বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করাই ছিল এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল আলোচনা চলছে সরাসরি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। আর আলোচনার বিষয়ে পশ্চিমারা যা বলেছে, এটি তারচেয়েও অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। আলোচনায় কী কথা হয়েছে সে বিষয়ে পশ্চিমাদেরকে কিয়েভ তেমন কিছুই জানায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ সম্পর্কিত এই জরুরী অনুভূতিকে নষ্ট করতে চায় না।
তবে রাশিয়া কী চায় সে সম্পর্কে ইউক্রেনীয়রা খুব ভালোভাবেই জানে এবং সামনের দিনগুলোতে মস্কোর দাবি 'মেনে নেওয়া' বা 'না নেওয়ার' সিদ্ধান্ত তাদের জন্য কী ফলাফল বয়ে আনতে পারে, সে সম্পর্কেও ইউক্রেন অবগত।
ইউক্রেনের ওপর কেউ কোনো চাপ দেবে না বলে জানিয়েছে সূত্র। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলেনস্কি।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, পুতিন যুদ্ধের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আক্রমণের পর থেকে ক্রমবর্ধমান জটিলতা বা নিষেধাজ্ঞা তাকে টলাতে পারবে না। মস্কোর দাবি মেনে না নিলে তিনি যুদ্ধ থেকে পিছ পা হবেন না। আর এতে করে সংঘাত আরও বাড়বে। সেইসঙ্গে বাড়বে হতাহতের সংখ্যা।
- সূত্র: দ্য জেরুজালেম পোস্ট