রাশিয়ার সস্তা তেলের ক্রেতা হতে চলেছে ভারত
ইউক্রেন আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে রাশিয়ার ওপর। বিশেষ করে রুশ তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণ সংক্রান্ত প্রধান ব্যবস্থা 'সুইফট' থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তবে, বহির্বিশ্ব থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার পশ্চিমা চেষ্টার মধ্যেও দেশটির সঙ্গে সুষ্ঠু বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধরে রাখতে চায় ভারত।
ভারতীয় দুই কর্মকর্তার মতে, আন্তর্জাতিক অবরোধের ফলে সস্তায় অপরিশোধিত তেল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য কেনার রুশ প্রস্তাব ভারত গ্রহণ করতে পারে শীঘ্রই।
অস্ত্র ও গোলাবারুদ থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ফাইটার জেট পর্যন্ত সমস্ত কিছুর জন্য দিল্লি অনেকাংশেই মস্কোর ওপর নির্ভরশীল। এরপরেও যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত যেন রাশিয়ার কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
তবে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি ভারত। এমনকি চলমান আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘে ভোটদান থেকেও বিরত থেকেছে দেশটি।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' হিসেবে অভিহিত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত করতেই এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তার মতে, পশ্চিমাবিশ্ব ভারতের অবস্থান ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তারা জানে, চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক বিরোধের মধ্যে ভারতের সামরিক বাহিনীকে অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত রাখতে রাশিয়াকে আমাদের প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ভারতের তেল চাহিদার মোটামুটি ৮০ শতাংশই আমদানি হয় বিদেশ থেকে। এরমধ্যে রাশিয়া থেকে আমদানি হয় মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে চলমান সংকটকে কেন্দ্র করে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তাই ভারত সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচ কমাতে রাশিয়ার তেলের দিকে নজর দিচ্ছে। সংকটের কারণে রাশিয়ার তেল সস্তায় পেলে ভারত তার আমদানির পরিমাণ বাড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
ভারতীয় এক কর্মকর্তা বলেন, "সস্তায় তেল ও অন্যান্য পণ্য কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। আমরা এটি গ্রহণ করতে পারলে খুশি হব।"
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের বাণিজ্যের জন্য পরিবহন, বীমা ব্যবস্থাসহ প্রস্তুতিমূলক অন্যান্য কাজ ঠিকভাবে সম্পাদন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ সবকিছু নিশ্চিত হতে পারলেই রাশিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করবে ভারত।
তবে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে রাশিয়া কী পরিমাণ তেল এবং মূল্যছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তা প্রকাশ করেননি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা। পাশাপাশি এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ে ই-মেইল করা হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে।
এদিকে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বজায় রাখতে রাশিয়াকে বন্ধু দেশ হিসেবে অভিহিত করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতীয় কর্মকর্তারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চালিয়ে যেতে রাশিয়ার সঙ্গে রুপি-রুবেল (দুই দেশের মুদ্রা) কেন্দ্রিক একটি ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করছেন।
তেল ছাড়াও রাশিয়া ও তার মিত্র দেশ বেলারুশের কাছ থেকে ভারত সস্তায় সার খুঁজছে বলেও জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
- সূত্র: সিএনএন