ইমরান খান আউট- কে হচ্ছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী, শাহবাজ?
শেষ পর্যন্ত গদি রক্ষা করতে পারলেন না পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে হেরে গেলেন তিনি।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হলেন ইমরান।
অনাস্থা ভোটে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভোটের দরকার ছিল ১৭২টি। ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শনিবারের মধ্যে অনাস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সময় রাত প্রায় ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
তবে চরম নাটকীয়ভাবে এরপর স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি পদত্যাগ করেন।
এরপর পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ার প্যানেলের সদস্য আয়াজ সাদিক স্পিকারের দায়িত্ব নেন। মধ্যরাতের আগেই তিনি অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
এরইমাঝে মধ্যরাতে দুই মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতবি করে রোববার ফের শুরু হয় নতুন অধিবেশন। এরপর রবিবার ভোর রাতে ১৭৪-০ ভোটের ব্যবধানে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত করা হয় ইমরান খানকে। এর আগে ইমরানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা অ্যাসেম্বলি ত্যাগ করেন।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটের মাঝেই মধ্যরাতে দরজা খোলা হয় পাক সুপ্রিম কোর্টের। পাক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আস্থা ভোট না হলে ইমরান খান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে গভীর রাতে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করে আসেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার।
এরপর পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় অ্যাসেম্বলি ভবনে পৌঁছান স্পিকার আসাদ কায়সার। ততক্ষণে পাক অ্যাসেম্বলির বাইরে প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়। এই আবহে ইমরানের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন স্পিকার আসাদ কায়সার।
পদত্যাগের মুহূর্তে কায়সার বলেন, '৩০ বছর ধরে ইমরান খানের সঙ্গে আছি। ছাত্র অবস্থায় পিটিআই-তে যোগ দিয়েছি। কীভাবে অনাস্থা ভোটের নির্দেশ দিই!'
এছাড়াও তিনি ইমরানের 'ষড়যন্ত্রে'র তত্ত্বের উপর জোর দিয়ে একটি সাদা কাগজ দেখিয়ে দাবি করেন, এতেই প্রমাণ রয়েছে যে 'বিদেশি শক্তি' পাক সরকারের পতনের নেপথ্যে রয়েছে।
এদিকে আস্থা ভোট থেকে শুরু হতেই সর্বপ্রথম ভোট দেন পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি।
এরপর একে একে আরও ১৭৩ জন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।
এরই মাঝে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবন ছেড়ে চলে যান। অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটির ফল প্রকাশ হতেই শাহবাজ শরিফ বলেন, 'পাকিস্তানে নতুন ভোর হতে চলেছে।'
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সোমবার, এগিয়ে শাহবাজ
ইতোমধ্যে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী এখন কে হবেন, সেই জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। উঠে এসেছে একাধিক রাজনৈতিক নেতার নাম। জানা গেছে, সোমবারেই (১১ এপ্রিল) নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বসছে দেশটির জাতীয় পরিষদের অধিবেশন। ওই অধিবেশনেই স্থির হবে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগামী ১১ এপ্রিল স্থানীয় সময় বেলা ২টায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বসবেন সংসদ সদস্যরা। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের আয়াজ সাদিক। তিনি জানান, রোববার দুপুর ২টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ৩টা নাগাদ শুরু হবে স্ক্রুটিনি বা বাছাই প্রক্রিয়া। প্রথমে সোমবার সকাল ১১টায় একটি অধিবেশনে বসার আহ্বান জানান সাদিক। জানান, এরপরই শুরু হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া। পরে অবশ্য পাকিস্তান পার্লামেন্টের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়েছে, অধিবেশন বসবে সোমবার দুপুর ২টায়।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এ নিয়ে জল্পনায় একাধিক নাম সামনে আসলেও বাকিদের থেকে দৌড়ে এগিয়ে আছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ'র সভাপতি শাহবাজ শরিফ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ ইমরান খান সরকারের পতনের পর জানান, তিনি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না।
"আমরা কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেব না, কারো প্রতি অবিচার করব না এবং কাউকে জেলে পাঠাব না, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে", যোগ করেন শাহবাজ।
- সূত্র: ডন, জিও নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমস