কোন দেশগুলি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ পাসপোর্ট দেয়?
আনুষ্ঠানিক নথিতে, ব্যক্তির স্বতন্ত্র লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণে আছে অনেক দেশের অনীহা। বাংলাদেশের পাসপোর্টে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি লিঙ্গ পরিচয় জানাতে পাসপোর্ট আবেদনকারীর ক্ষেত্রে 'অন্যান্য' লিঙ্গ উল্লেখ করার মতো অন্তুর্ভুক্তি আছে। অথচ, কেবল সে পথে পা বাড়িয়েছে আমেরিকা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। দেরিতে হলেও গত ১১ এপ্রিল এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্টে তৃতীয় লিঙ্গ যোগ করার ঘোষণা দিয়েছে।
লিঙ্গ নিয়ে রাজনীতিতে বিভাজিত আমেরিকার পাসপোর্টে এখন থেকে নারীর জন্য ইংরেজি 'এফ' (ফিমেল) বা পুরুষের 'এম' (মেল) অক্ষরের সাথে থাকবে তৃতীয় লিঙ্গের পরিচায়ক 'এক্স'।
এই সিদ্ধান্তকে 'অবিস্মরণীয়' বলে অভিনন্দন জানিয়েছেন, দেশটির এলজিবিটিকিউআই প্লাস অধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি জেসিকা স্টার্ন।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি বৈষম্য না করে, তাদের লিঙ্গ পরিচয় তুলে ধরার সুযোগ করে দেওয়াই নিরপেক্ষতা বা জেন্ডার নিউট্রালিটি। তাই এ ধরনের পাসপোর্টকেও বলা হয় জেন্ডার-নিউট্রাল।
বাংলাদেশে 'অন্যান্য' শ্রেণি থাকলেও সরাসরি তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ নেই। কিন্তু, অনেক দেশেই তেমনটাই রয়েছে। কিছু দেশ আমেরিকার প্রায় এক দশক আগেই নিয়েছে এ যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দ্য ইকোনমিস্টের সংগৃহীত তথ্যে, এমন আরো ১৬টি দেশের কথা জানানো হয়। যাদের মধ্যে, ২০১৩ সালে পাসপোর্টে প্রথম 'এক্স' বিকল্প রাখা দেশ হয় জার্মানি। ২০১৭ সালে তা গ্রহণ করে আটলান্টিকের অপর পাড়ের কানাডা।
লিঙ্গ-নিরপেক্ষ পাসপোর্ট ইস্যুকারী বেশিরভাগ দেশ ইউরোপেই। তবে অন্যান্য মহাদেশের কয়েকটি দেশও এ সুবিধা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার পাসপোর্টে আছে তৃতীয় লিঙ্গ নির্বাচনের সুযোগ। দক্ষিণ এশিয়ায় সে সুবিধাটি দেয় ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান। এপর্যন্ত আফ্রিকার কোনো দেশ এই অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়নি।
তবে ইতিহাসের কোনো অধিকারই বিনা লড়াইয়ে আসে না। আমেরিকাতেও হয়নি তার ব্যতিক্রম। পাসপোর্টে 'নারী' অথবা 'পুরুষ' এই দুটি অপশনের একটি বেঁছে নিতে হতো আগে, আর তাতে অস্বীকৃতি জানান তৃতীয় লিঙ্গের ডানা জ্জেইম। একারণে তাকে পাসপোর্টও দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ডানা এরপর আদালতের আশ্রয় নেন এবং দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে শেষপর্যন্ত লাভ করেছেন দেশটির প্রথম 'এক্স' লিঙ্গ পরিচয়ের পাসপোর্ট।
ডানা একাই নন, মামলা করেছেন আরো অনেক তৃতীয় লিঙ্গের আমেরিকান। ডানার আগে আদালতের হস্তক্ষেপে তারা যেসব বিশেষ পাসপোর্ট পেতেন সেখানে জন্মের সময় তাদের যে লিঙ্গ পরিচয় নথিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, কোনোপ্রকার মেডিকেল নথি ছাড়াই তার বিপরীত লিঙ্গ দাবি করে সে অনুসারে পাসপোর্ট পেতেন। অর্থাৎ, কেউ জন্মসনদে নারী হিসাবে জন্মালেও পরে তিনি পুরুষ হিসেবে পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ পেতেন আইনিপ্রক্রিয়ায়। পাসপোর্টে ছিল না তৃতীয় লিঙ্গের সরাসরি স্বীকৃতি।
তবে অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে জন্মকালীন লিঙ্গের চেয়ে ভিন্ন দাবি করলে, তার জন্য প্রমাণ দিতে হয়। এজন্য মনোবিশেষজ্ঞ বা শারীরিক মেডিকেল পরীক্ষার নিয়মও রয়েছে কোথাও কোথাও।
নিজেদের যারা নারী বা পুরুষ—এ দুইয়ের কোনো কাতারভুক্তই মনে করেন না, তাদের ব্যাপারে আমেরিকায় সরকারি তথ্য খুবই অপর্যাপ্ত। তাই এবিষয়ে সঠিক নীতিপ্রণয়নও কঠিন হয়ে পড়ে।
বলতে গেলে এই সেদিন বা ২০১৩ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য জরিপে ভিন্ন লিঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করে আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। কিন্তু, তবুও জাতীয় পর্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি বা মিশ্রলিঙ্গের মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয় না।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এলজিবিটিকিউ প্লাস থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলিয়ামস ইনস্টিটিউটের প্রক্ষেপণ অনুসারে, প্রায় ১২ লাখ আমেরিকান হলেন নন-বাইনারি। তাদের মধ্যে প্রতিবছর অন্তত ১৬,৭০০ জন এখন তৃতীয় লিঙ্গের "এক্স' স্বীকৃতির জন্য পাসপোর্ট আবেদন করতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
- সূত্র: ফরেন পলিসি