সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করা কর্মীদের তালিকায় ৪র্থ অবস্থানে বাংলাদেশ
চাকরিজীবীদের কর্মঘণ্টা বা কাজ করার সময় একেকে দেশে একেক রকম। কোন দেশের কর্মীরা দিনে গড়ে কতক্ষণ অফিসে কাজ করবেন, বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে তা ঠিক করতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এক্ষেত্রে একজন কর্মী কোন কর্মক্ষেত্রে কতক্ষণ কাজ করছেন, তা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের সবর্ত্র সাপ্তাহিক কাজের গড় সময় এক নয়। উন্নত দেশগুলোতে একজন কর্মীকে অফিসে যতক্ষণ সময় দিতে হয়, উন্নয়নশীল দেশে সাধারণত তারচেয়ে বেশি সময় দিতে হয়।
তবে তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, এশিয়ার দেশগুলোর কর্মীদের অনেক বেশি সময় অফিসে কাটাতে হয়। নানা সময় নানা অজুহাতে এসব দেশে কর্মীদের অফিসে কাজ করার সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই যেমন ক্ষমতায় বসেই পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সরকারি কর্মচারীদের কাজের সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ দাবি ছিল কর্মঘণ্টা কমানোর। শাহবাজ শরিফের দাবি, মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানো ও অর্থনৈতিক খাতকে চাঙা করার জন্যই এ ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এখন থেকে পাকিস্তানের সরকারি চাকরিজীবীদের দিনে ১০ ঘণ্টা অফিস করতে হবে। এছাড়া পাকিস্তানের সরকারি চাকরিজীবীদের সাপ্তাহিক ছুটিও একদিন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তারা শুধু রোববার সাপ্তাহিক ছুটি পাবেন।
অথচ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ইউরোপের দেশগুলোর চাকরিজীবীরা গড়ে অনেক কম সময় কাজ করে থাকেন।
আর সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কাজ করেন যেসব দেশের চাকরিজীবীরা, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করা চাকরিজীবীদের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে আছে।
আবার উত্তর বা ল্যাতিন আমেরিকার চাকরিজীবীদেরও এশীয়দের চেয়ে কম কাজ করতে হয়। অবশ্য এসব দেশের চাকরিজীবীরা ইউরোপীয় দেশগুলোর চেয়ে বেশি সময় কাজ করেন।
তবে কিছু কিছু দেশে আবার কর্মঘণ্টা কমানোর চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। এই যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি বছর থেকে দৈনিক কাজের সময় কমিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা করা হয়েছে।
কোন দেশের চাকরিজীবীরা কত ঘণ্টা কাজ করেন?
কর্মক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের কত সময় ব্যয় করতে হয়? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একটু মুশকিলেই পড়তে হবে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে চাকরিজীবীদের গড়ে কম সময় কর্মক্ষেত্রে কাটাতে হয়। অন্যদিকে মধ্যম-আয়ের বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাধারণত বেশি সময় দিতে হয় কর্মক্ষেত্রে।
ওয়ার্ল্ড পপিউলেশন রিভিউ-এর তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে সময় অফিসে কাটাতে হয় কম্বোডিয়ার চাকরিজীবীদের। দেশটির কর্মীদের সপ্তাহে গড়ে ৪৭.৬ ঘণ্টা ব্যয় করতে হয় অফিসে।
কম্বোডিয়ার পরেই রয়েছে মায়ানমার (৪৭.১ ঘণ্টা)।
মায়ানমারের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চাকরিজীবীদের সপ্তাহে গড়ে ৪৬.৫ ঘণ্টা অফিসে কাজ করতে হয়।
এর পরে স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর (৪৪.৮ ঘণ্টা) ও মালয়েশিয়া (৪২.৩ ঘণ্টা)।
শীর্ষ দশের তালিকায় আছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। দেশটিতে সপ্তাহে গড়ে ৪২.১ ঘণ্টা কাজ করতে হয় চাকরিজীবীদের।
সবচেয়ে বেশি কাজ করা চাকরিজীবীদের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে আছে চীন। দেশটির চাকরিজীবীদের প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪১.৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
যেসব দেশের চাকরিজীবীদের সবচেয়ে কম সময় কাজ করতে হয়
ওয়ার্ল্ড পপিউলেশন রিভিউয়ের তথ্য বলছে, গড়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে চাকরিজীবীরা সবচেয়ে কম সময় অফিসে কাটান।
ওয়েবসাইটটির তথ্যানুসারে, বিশ্বের ৬৫ দেশের মধ্যে জার্মানির কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ২৫.৬ ঘণ্টা কাজ করে সবচেয়ে কম কাজ করা দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
জার্মানির পরেই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্কের অবস্থান। দেশটিতে কর্মীদের সপ্তাহে গড়ে ২৫.৯ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
অফিসে সবচেয়ে কম কাজ করা দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ের। নরওয়েজিয়ান চাকরিজীবীরা সপ্তাহে গড়ে ২৬.৩ ঘণ্টা অফিসে কাজ করেন।
এর পরেই রয়েছে গ্রেট ব্রিটেন (২৬.২৯ ঘণ্টা) ও নেদারল্যান্ডস (২৬.৯ ঘণ্টা)। সবচেয়ে কম কাজ করা দেশগুলোর শীর্ষ তালিকায় আরও রয়েছে আইসল্যান্ড, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, উরুগুয়ে, সুইজারল্যান্ড।
- সূত্র: ওয়ার্ল্ড পপিউলেশন রিভিউ