বিলাসী ঘড়ির ভবিষ্যৎ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়। বলতে পারেন, সময়ই সেই অদৃশ্য শক্তি, যা বদলে দেয় সবকিছুকে। আর মজার ব্যাপার হলো, সময়ের এমন ছোবল থেকে রক্ষা পায় না সময়কে ধারণ করে যে, সেই ঘড়িও।
চেষ্টা অবশ্য করেছিল ঘড়ি নির্মাতারা। তারা চেয়েছিল অতীত ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রাখতে। কেননা আজকাল মাত্র হাজার টাকা দামি মোবাইলেও অনায়াসে সময় দেখা গেলেও, ঘড়ি হলো এমনই বিলাসবহুল একটি পণ্য, যার আবেদন কখনো ফুরায় না, যার জন্য লোকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতেও পিছপা হয় না। সুতরাং, এমন একটি জিনিসের ক্ষেত্রে সস্তার আধুনিকতার চেয়ে যদি শ্বেত হস্তিসম অতীতটাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!
তবে যা বলছিলাম, দীর্ঘদিন ধরে ঘড়ি নির্মাতারা অতীতসর্বস্বতাকেই বিশুদ্ধতার স্বরূপ বলে ভেবে এলেও, অবশেষে পরিবর্তন আসছে তাদের চিন্তাধারায়। এখন তারা প্রস্তুত ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করতে, নতুন সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে।
স্বভাবতই কৌতূহলী মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটতে শুরু করেছে, কেমন হবে একটি বিলাসদ্রব্য হিসেবে ঘড়ির ভবিষ্যৎ? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আমরা এই লেখায়। তবে অবশ্যই কোনো অনভিজ্ঞ নবিশের দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়। এই লেখায় ফুটে উঠবে তিনজন বিশেষজ্ঞের অভিমত। তাদের মধ্যে একজন ভোক্তা মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, একজন রিটেইল ফিউচারিস্ট, এবং অন্যজন শৈখিন ঘড়ি বিষয়ক প্রকাশনার সম্পাদক।
চলুন তবে শুরু করা যাক।
মহামারির প্রভাব ভোক্তা মনস্তত্ত্বে
চলমান করোনা মহামারি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রেতাদের মতো, ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে শৌখিন ক্রেতাদের মনেও। বিদ্যমান পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা, ভঙ্গুরতায় ভীতসন্ত্রস্ত তারাও এখন তৃষ্ণার্ত হয়ে রয়েছে স্থিতিশীলতার। চাতক পাখির মতো তারা পথ চেয়ে বসে আছে, কবে বদলাবে সময়।
অনেকে হয়তো ভাবছেন, শৌখিন ক্রেতাদের পকেটে তো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, উপচে পড়ছে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স। তাদের আর চিন্তা কী! তবে এটি একদমই ভুল ধারণা। অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারাও।
করোনাকালীন এই ঘোর অমানিশায় কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্য যেকোনো ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভীতি রয়েছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে চাকরি কিংবা স্থানীয় ব্যবসা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাও।
সব মিলিয়ে সুখে নেই তারা। ভবিষ্যতের চিন্তায় বিলাসদ্রব্যের চাহিদা পূরণের ইচ্ছাকে এই মুহূর্তে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে, দমিয়ে রাখতে কিংবা কম গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে তারাও। ফলে বিলাসদ্রব্যের বাজারেও চলছে এক অভূতপূর্ব মন্দা।
ব্র্যান্ডগুলোর করণীয়
একটি ব্র্যান্ড যত বড়ই হোক না কেন, সম্ভাব্য ক্রেতাদের মন জুগিয়ে চলাটা তাদের অবশ্য করণীয়। তাই চলমান মহামারিতে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের মিথস্ক্রিয়ার ধরন কেমন হবে, এ ব্যাপারে জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকেরই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রেতাদের মিথ্যা আশা দেখানো হবে ব্র্যান্ডগুলোর জন্য নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মারার সামিল। মৃত্যুভয় এখনো জনসাধারণের মনে জেঁকে বসে আছে। তাই কোনো ব্র্যান্ড যদি তাদের বিজ্ঞাপনে বলে, 'আর কোনো ভয় নেই, করোনা চলে গেছে,' সেটি কেউই ভালোভাবে গ্রহণ করবে না।
সুতরাং, ব্র্যান্ডগুলোকে হতে হবে সংবেদনশীল। বিপদাপন্ন বন্ধুকে সান্ত্বনা দেয়ার ক্ষেত্রে যেমন মিছে আশ্বাসের চেয়ে তার বিষাদময়তাকে স্বীকার করা বেশি কার্যকর, ব্র্যান্ডগুলোকেও তেমনই ক্রেতাদের দুরবস্থাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে হবে, শব্দচয়নেও মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়টি। কেবল তবেই ব্র্যান্ডগুলো পারবে এই চরম দুঃসময়েও ক্রেতাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে।
ক্রেতাদের আগ্রহ যেখানে
সাধারণত দুটি বিষয়ে ক্রেতাদের সজাগ দৃষ্টি থাকে — ডিজাইন ও ফিচার। তবে এখন যেহেতু অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়, তাই অন্য একটি বিষয়কে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেটি হলো বিনিয়োগ মূল্য। অর্থাৎ কোনো একটি পণ্যের পেছনে তারা যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, তা যুক্তিসঙ্গত কিনা। সহজ বাংলায় বলতে গেলে, তারা মনে মনে ভাবছে, 'পয়সা উসুল হবে তো?'
মহামারির একশোটা বাজে প্রভাব থাকতে পারে, কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে এই মহামারি মানুষকে তুলনায় অনেক বেশি দায়িত্বশীল করে তুলেছে। আরও করেছে বাস্তববাদী।
এই নব-অর্জিত গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে যেকোনো বিলাসদ্রব্য কেনার ক্ষেত্রেও। ক্রেতারা এখন আর শুধু বলছে না, 'বাহ, এই জিনিসটার রঙ তো অনেক সুন্দর!' বরং তারা নিরাপত্তাকে এগিয়ে রাখছে। জিনিস কেনার আগে বলছে, 'হ্যাঁ, এটা হয়তো অনেকদিন টিকবে।'
অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে নতুন, সমসাময়িক বা আধুনিক ডিজাইন ও ফিচার ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পণ্যের গুণগতমান, স্থায়িত্ব, বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরবধিতা অটুট থাকবে, ক্রেতারা নতুন ধরনের নিরীক্ষাকেও সাদর সম্ভাষণ জানাবে।
বিলাসদ্রব্য কেনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন
মহামারির কারণে অন্য অনেক জিনিসের মতো বিলাসদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের পদ্ধতিও ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। তবে ডিজিটালি বিলাসদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়কে আর দশটা সাধারণ জিনিসের ই-কমার্সের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে হবে না।
বিলাসদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় সাধারণত 'ক্লিক করলাম ও অর্ডার হয়ে গেল' জাতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে না। এক্ষেত্রে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওয়ান-অন-ওয়ান অ্যাপয়েন্টমেন্ট, যার মাধ্যমে আগ্রহী ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে পণ্যের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়, কিংবা দ্রব্যটিকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সে প্রক্রিয়া শিখে নেয়। আগে সেটি সশরীরে হতো। হয় ক্রেতা দোকানে যেত, নয়তো বিক্রেতা ক্রেতার বাড়িতে চলে আসত। কিন্তু এখন পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে প্রধানত জুম বা ফেসটাইমের মাধ্যমে।
এক্ষেত্রে যে সুবিধাটি হচ্ছে তা হলো, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই নিজস্ব ঘরোয়া আবহে অবস্থান করেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সেরে নিতে পারছে। ক্রেতা হয়তো নিজের বাড়িতেই থাকছে, আর বিক্রেতা তার শো-রুমে। কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের সামনে বসে চাইলেই ক্রেতা বিক্রেতাকে বলতে পারছে, 'আমাকে তিন নম্বর তাকের বাঁ থেকে দ্বিতীয় ঘড়িটা একটু দেখাবেন, প্লিজ!'
বিলাসদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়েও যে এমনটি সম্ভব, আগে তা জানা ছিল না অধিকাংশ মানুষেরই। কিন্তু যেহেতু মহামারিকালে তারা এভাবে ক্রয়-বিক্রয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে, তাই ধারণা করা যায় যে ভবিষ্যতে সাধারণ সময়েও এই চর্চা জারি থাকবে। ফলে বিলাসদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ে অতীতে মুখোমুখি সাক্ষাতের যে ঝক্কি ছিল, তা অনেকটাই কমে যাবে। আর বলাই বাহুল্য, ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনই যদি কোনো পদ্ধতিতে উপকৃত হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে উন্নতি হয় ওই খাতের ব্যবসারও।
পণ্য সারাইয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন
উৎপাদন খাতে বেশ অনেক বছর ধরেই একটি ধারণা ঘোরাফেরা করছে। সেটির নাম দেয়া হয়েছে 'ডিজিটাল টুইন'। ব্যাপারটি এমন যে, কোনো একটি দ্রব্যের একটি ডিজিটাল সংস্করণ, সেটির যাবতীয় ডেটা সমেত, উপস্থিত থাকবে অনলাইনে। তাই যদি পণ্যটির কোনো সমস্যা দেখা যায় কিংবা কোনো একটি অংশ ভেঙে যায়, ডিজিটাল টুইনের সাহায্যে ব্যবহারকারী নিজেই সক্রিয়ভাবে সেটি সারাতে পারবে।
একটি মূল্যবান বিলাসদ্রব্য হিসেবে ঘড়ির ক্ষেত্রেও এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে যে প্রতিটি ইউনিটেরই একটি ডিজিটাল টুইনের অস্তিত্ব থাকবে ক্লাউডে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঘড়ির ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার পরও ব্র্যান্ড বা উৎপাদকদের সঙ্গে ওই ঘড়ির পরোক্ষ যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে, তারা দূর থেকে ঘড়িটির পারফরম্যান্সের উপর নজর রাখতে পারবে, এবং যদি ঘড়িতে কোনো সমস্যা তাদের নজরে আসে, তৎক্ষণাৎ তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা ব্যবহারকারীর দৃষ্টিগোচর হওয়ার পূর্বেই চলে আসবে সেটির সমাধান। এর ফলে প্রত্যেক ক্রেতারই ঘড়ি ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
ইতোমধ্যে অনেক পণ্যেই সেন্সর, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মেশিন লার্নিংয়ের মতো পরিষেবা চালু হয়েছে। তবে ঘড়ির ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলোর পূর্ণাঙ্গ সংযুক্তির জন্য আরো ১৫ থেকে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেট অভ থিংসের যে জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে, তাতে আরো অনেক আগেই ব্যাপারটি দৃশ্যমান হয়ে যেতে পারে।
শেয়ারে বিলাসদ্রব্য ক্রয়
হ্যাঁ, শুনতে বেশ অদ্ভুতই লাগছে বটে। কিন্তু বর্তমানে ওটিস বা এ ধরনের কিছু কোম্পানি চালু হয়েছে, যারা শিল্পদ্রব্য থেকে শুরু করে ক্রেজি স্নিকার্স, এমন অনেক মূল্যবান দ্রব্যই প্রথমে নিজেরা ক্রয় করে; এরপর ইন্ডিভিজুয়াল ক্রেতারা সেগুলোর শেয়ার বা অংশ বিশেষের মালিক হতে পারে। ঠিক যেমনটি দেখা যায় স্টক মার্কেটের ক্ষেত্রে। এবং এক্ষেত্রেও, ব্যক্তি মালিকানায় থাকা শেয়ার বা সম্পদের মূল্য পরবর্তীতে বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে।
এখন অনেকেই ভাবতে পারেন, স্টক মার্কেটের মতো ঘড়ি বা অন্যান্য বিলাসদ্রব্যের শেয়ারের পেছনে লোকে কেন অর্থ বিনিয়োগ করবে। এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, লোকে মনে করে এর মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, অনেকে এমন শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে তাদের প্যাশন বা ইন্টারেস্টের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারছে, যা ইতঃপূর্বে অসম্ভব ব্যাপার ছিল।
মানে ধরুন, একটি বহু মূল্যবান ঘড়ি হয়তো কোনো ক্রেতা একা কিনতে পারত না। অথচ সেটির প্রতি তার বরাবরই ছিল অপরিমেয় আগ্রহ। এখন সে ওই ঘড়িটির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে নিজেকে ওই ঘড়িটির মালিক বলে ভাবতে পারবে, ঘড়িটির খুঁটিনাটি পরখ করে দেখে নিজের কৌতূহল মেটাতে পারবে, এমনকি বছরে হয়তো একদিনের জন্য ঘড়িটি হাতে পরতেও পারবে, যা তাকে এক অসাধারণ মানসিক পরিতৃপ্তির স্বাদ আস্বাদ করাবে।
বিলাসদ্রব্যের ডিজিটাল সংস্করণ
আজকাল অনেক বিলাসদ্রব্যের শারীরিক সংস্করণের পাশাপাশি ডিজিটাল সংস্করণও বের হচ্ছে, যার ফলে সেগুলো অনেক বেশি ভোক্তার দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছে।
বিষয়টি কেমন? মনে করুন, আপনি গুচ্চির ভক্ত। কিন্তু আপনার বয়স সবে ১৪, তাই আপনার পক্ষে গুচ্চির হ্যান্ডব্যাগ কেনা সম্ভব না। কিন্তু এখন আপনি গুচ্চির একটি হ্যান্ডব্যাগের ডিজিটাল সংস্করণ কিনতে পারছেন। ফলে আপনার ডিজিটাল অবতার পাবে দিনের একটা বেশ বড় সময় ওই গুচ্চি হ্যান্ডব্যাগ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা।
ঠিক এরকম হতে পারে ঘড়ির ক্ষেত্রেও। ফলে যারা শারীরিকভাবে অতিমূল্যবান কোনো ঘড়ি হাতে পরার সুযোগ কোনোদিন লাভ করবে না, তারাও পারবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে!
বর্তমানে যে ঘড়ি নির্মাতা সবচেয়ে যুগোপযোগী
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে, নতুন ধরনের উদ্ভাবনের পথ দেখাচ্ছে, এমন ঘড়ি নির্মাতার ক্ষেত্রে বলতে হবে জ্যাকব অ্যান্ড কো-র কথা।
কোম্পানিটির দৈনন্দিন দেখভালের দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন জ্যাকব আরাবো, এবং বর্তমানে তার জায়গায় এসেছেন তার পুত্র বেনজামিন। সবে ২৮ বছর বয়স বেনজামিনের। শুরুতে পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না তিনি। মেতে ছিলেন প্রযুক্তি নিয়ে। অবশ্য উপদেষ্টা ছিলেন জ্যাকব অ্যান্ড কো-র।
তো যা-ই হোক, প্রযুক্তি জগতের সঙ্গে বেনজামিনের হৃদ্যতার কারণে, জ্যাকব অ্যান্ড কো-ই হলো অন্যতম প্রথম লাক্সারি ব্র্যান্ড, যারা রক্ষণশীলতা ভুলে অনলাইনের মাধ্যমে ভোক্তা পরিষেবার ব্যবস্থা চালু করেছে।
এর ফলাফল যা দাঁড়িয়েছে তা হলো, তরুণ প্রজন্মের কাছে আগের চেয়েও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্র্যান্ডটি। টিকটকেও এটিই বিলাসী ঘড়ির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয়।
সৌন্দর্য (সুইস ঘড়ি) নাকি উপযোগিতা (অ্যাপল ওয়াচ)?
বিলাসী ঘড়ির ব্যাপারে আগ্রহী অনেকেই আজকাল এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে, আবার নিজেরাই নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উত্তরও খুঁজতে চায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি অহেতুক বৈপরীত্য। তারা বিশ্বাস করেন, ভোক্তা বা ক্রেতাকে আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বাধ্য করা উচিত না।
এক্ষেত্রে প্রধান যুক্তি হলো এই যে, কেন একটি উপকারী দ্রব্য একই সঙ্গে দারুণ সুন্দরও হতে পারবে না? ঠিক এমনটিই কয়েক বছর আগে ভেবেছিল মন্টব্লাঙ্কও, যখন তারা বাজারে নিয়ে এসেছিল তাদের ই-স্ট্র্যাপ। সেটি ছিল একটি ইলেকট্রনিক মডিউল, যা যান্ত্রিক ঘড়িতেও ফিট করা যেত।
সুতরাং ঘড়ির মতো একটি বিলাসদ্রব্যের ক্ষেত্রে আপ্তবাক্য হওয়া উচিত এমন : ক্রেতাকে ক, খ, গ ও ঘ-এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা যাবে না। তাদের জন্য রাখতে হবে অন্য একটি অপশন, 'সবগুলোই'!