আমেরিকান গণতন্ত্র গুরুতর বিপদে আছে: নোয়াম চমস্কি
নোয়াম চমস্কি। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তাঁর নামটাই আসে সবার আগে। যুক্তরাষ্ট্রের সক্রেটিস হিসেবে সমাদৃত এই মহান বুদ্ধিজীবী। সাহস, জ্ঞান, প্রজ্ঞা—এই তিনের অসাধারণ মিশেলের নাম নোয়াম চমস্কি। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার জন্য জন্মভূমিকে চমস্কি বদমাশ পরাশক্তি হিসেবেই বিবেচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার তিনি। মার্কিনীদের অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবিরত কথা বলে গেছেন—সাক্ষাৎকারে, বক্তৃতায়, লেখায়। এ কারণে 'সিস্টেম'ও তাঁকে 'আপদ' হিসেবে দেখে।
৯৩ বছর পূর্ণ হয়েছে চমস্কির। এ বয়সে পৌঁছে বয়সের ভারে, জরায় ন্যুব্জ হয়ে পড়ে অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু এই বয়সেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো তরুণের চেয়ে উচ্চকণ্ঠ তিনি। এখনও লিখছেন দেদারসে; বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন; নিজের বিবেচনায় যা কিছুকে ন্যায় মনে হচ্ছে, তার পক্ষে সোচ্চার হচ্ছেন। এই বয়সেও বিপুল কর্মশক্তিতে টগবগ করছেন ৯৩ বছর বয়সি তরুণ নোয়াম চমস্কি।
ইউরোপীয় প্রগতিশীল আন্দোলন ডায়েম২৫-এর সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তিনি, ট্রাম্পবাদের রমরমা সময়েও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জনকও তিনি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চমস্কি, রিচার্ড নিক্সন তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও পেন্টাগন পেপারস ফাঁসের সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি, ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমেরিকানদের।
সম্প্রতি স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন চমস্কি। সেখানে তিনি কথা বলেন নিজের শৈশব নিয়ে, ট্রাম্প ও বাইডেন সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ অনূদিত হলো ইজেল-এর পাঠকদের জন্য।
প্রশ্ন: শুনেছি মাত্র ১০ বছর বয়সে আপনি প্রথম প্রবন্ধ লিখেছিলেন, আর সেটা ছিল স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে। এটা কি সত্যি?
নোয়াম চমস্কি: হ্যাঁ। তারিখটাও বলে দিতে পারি। কারণ লেখাটা কী নিয়ে ছিল, তা আমি জানি। লেখাটা ছিল বার্সেলোনার পতন নিয়ে। কাজেই সেটা ছিল ১৯৩৯ সালের ফেব্রুয়ারি। প্রবন্ধটা যে খুব একটা ভালো হয়নি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে লেখাটা ছিল ইউরোপে—জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া ও বার্সেলোনায় ফ্যাসিবাদ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে। ১০ বছর বয়সি আমার দৃষ্টিতে তখন মনে হচ্ছিল পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছিল ফ্যাসিবাদকে যেন রোখা অসম্ভব।
প্রশ্ন: আমি পড়েছি, ছোটবেলায় আপনি এক চাচার সঙ্গে একটা দোকানে কাজ শুরু করেন, খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। অথবা তাকে সাহায্য করতেন। জানতে চাই, ওই কাজ আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
চমস্কি: এই প্রশ্নটাতে বেশ ভালো পরিমাণে বিদ্রুপ আছে, মর্মান্তিক বিদ্রুপ। আমি বেড়ে উঠেছি মহামন্দার কালে। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমি ছিলাম শিশু। আমার পরিবার ছিল অভিবাসী, বেশিরভাগ সময়ই বেকার থাকতে হতো। মন্দার কারণে ভীষণ ভুগতে হয়েছিল। তবে আশা, আকাক্সক্ষা আর প্রত্যাশার একটা আবহ ছিল, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে। শ্রমিক আন্দোলন তখন ফের জেগে উঠছে। ১৯২০-এর দশকে বলপ্রয়োগ করে এ আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এটি ফের মাথাচাড়া দিচ্ছিল। শ্রমিকদের মিছিল-মিটিং ছিল, রাজনৈতিক দল ছিল, ছিল উগ্র রাজনৈতিক দল। বিতর্ক, আলোচনা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছিল। 'আমরা সবাই একসঙ্গে এখান থেকে বেরোতে পারব', এরকম একটা মনোভাব ছিল।
পৃথিবীর বস্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সঙ্গিন অবস্থা ব্রাজিলের বস্তিগুলোর। আমি ওখানে গিয়েছি। এই বস্তিগুলো চালায় বাইকার গ্যাং, ড্রাগ কার্টেগুলো। পুলিশও ভীষণ উগ্র। কিন্তু যে ক্রিমিনাল গ্যাংগুলো বস্তি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, মহামারির সময় সেই গ্যাংগুলোই সংকট মোকাবিলায় মানুষকে সংগঠিত করেছে। বস্তিগুলোতে বহু মানুষের খাওয়ার পানি নেই। গ্যাংগুলো মানুষের কাছে অন্তত পানি আর টিকা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। অভাবীদের সাহায্য করার জন্য কাজ করছে। কোনো বৃদ্ধ যদি খাবার আনতে না পারেন, তাকে খাবার দিয়ে আসছে। এরকম ঘটনা ঘটছে মাঠ পর্যায়ে। এবার নেতৃত্বের পর্যায়ে তাকান। তারা কী করছে? টিকার ওপর নিজেদের একচেটিয়া অধিকার কায়েম করছে। তারা দাবি করছে, অতিধনী বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কর্পোরেশনগুলোর উচিত নিওলিবারেল শাসন তাদের যে মাত্রাতিরিক্ত পেটেন্ট অধিকার দিয়েছে, তা ধরে রাখা।
সত্যি বলতে কী, ১৯৩০-এর দশকে যা যা ঘটেছে, তার প্রভাবে পরবর্তী সময়ে এসেছে ফ্যাসিবাদ—ফ্রাঙ্কো, মুসোলিনি, হিটলার, অন্যান্য ছোটখাটো চরিত্র। ওটাই ছিল ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্রে মহামন্দার প্রতিক্রিয়ায় এসেছে সামাজিক গণতন্ত্র। শ্রমিক আন্দোলনের ফলে করা নিউ ডিল, রুজভেল্টের নিউ ডিল, জনচাপ প্রভৃতি সামাজিক গণতন্ত্রের পথ দেখায়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গ্রহণ করে ইউরোপ। সেসব ৯০ বছর আগের কথা। বর্তমানের দিকে তাকান, এখন অন্যান্য সংকট দেখা দিয়েছে, অত্যন্ত গুরুতর সংকট। ইউরোপ এখনও কোনোমতে সামাজিক গণতন্ত্রের একটা রূপ আঁকড়ে ধরে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে প্রোটো-ফ্যাজিসমের দিকে, আমাদের শৈশবে যা ঘটেছিল তার একেবারে উল্টোটা ঘটছে।
প্রশ্ন: মহামারির ব্যাপারে কী বলবেন? মহামন্দা এবং ইউরোপ-আমেরিকার ওপর তার প্রভাবের কথা বললেন, কিন্তু মহামারিও কি 'আমরা সবাই একসঙ্গে এখান থেকে বেরোতে পারব' ধরনের মনোভাব তৈরি করতে পারবে?
চমস্কি: পারা উচিত। তার কিছু লক্ষণও দেখা গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে লক্ষ করলে দেখবেন, মানুষ একে অপরকে সাহায্য করছে। দুনিয়ার বেশিরভাগ অংশেই অনেক দরিদ্র এলাকায় স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো অভাবীদের সাহায্য করার জন্য, কখনও কখনও খুবই দারুণ উপায়ে, এক হয়েছে। পৃথিবীর বস্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সঙ্গিন অবস্থা ব্রাজিলের বস্তিগুলোর। আমি ওখানে গিয়েছি। এই বস্তিগুলো চালায় বাইকার গ্যাং, ড্রাগ কার্টেগুলো। পুলিশও ভীষণ উগ্র। কিন্তু যে ক্রিমিনাল গ্যাংগুলো বস্তি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, মহামারির সময় সেই গ্যাংগুলোই সংকট মোকাবিলায় মানুষকে সংগঠিত করেছে। বস্তিগুলোতে বহু মানুষের খাওয়ার পানি নেই। গ্যাংগুলো মানুষের কাছে অন্তত পানি আর টিকা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। অভাবীদের সাহায্য করার জন্য কাজ করছে। কোনো বৃদ্ধ যদি খাবার আনতে না পারেন, তাকে খাবার দিয়ে আসছে। এরকম ঘটনা ঘটছে মাঠ পর্যায়ে। এবার নেতৃত্বের পর্যায়ে তাকান। তারা কী করছে? টিকার ওপর নিজেদের একচেটিয়া অধিকার কায়েম করছে। তারা দাবি করছে, অতিধনী বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কর্পোরেশনগুলোর উচিত নিওলিবারেল শাসন তাদের যে মাত্রাতিরিক্ত পেটেন্ট অধিকার দিয়েছে, তা ধরে রাখা।
প্রশ্ন: শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইউরোপেও কট্টর ডানপন্থিরা ভোটে জিতছে কেন?
চমস্কি: ওরা সবকিছুর দখল নিয়েছে। মানে সবসময়ই সিস্টেমে ওদের দাপট ছিল, স্পেনেও। তবে গত ৪০ বছরে ক্ষমতা ও সম্পদ দখলের লড়াইয়ে ওরা অভূতপূর্ব জয় পেয়েছে। কয়েকটা সংখ্যা দেখুন কেবল। যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত নামী আধা-সরকারি কর্পোরেশন র্যান্ড কর্পোরেশন কর্মজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে সম্পত্তির স্থানান্তর নিয়ে একটা সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাদের হিসাবে দেখা গেছে, কর্মজীবী শ্রেণির পকেট থেকে ৫০ ট্রিলিয়ন, হ্যাঁ ৫০ ট্রিলিয়ন ডলার চুরি করে অতিধনী এবং কর্পোরেট খাতের মালিক ও চালনাকারীদের পকেটে পোরা হয়েছে। এটা মূর্তিমান বাস্তব। আর এই হিসাবে অনেকটাই কমিয়ে বলা হয়েছে। কর স্বর্গসহ জনগণকে লুটপাট করার আরও অনেক উপায়ের দরজা খুলে দিয়েছিলেন রিগ্যান। ...বিপুল সম্পত্তি পুঞ্জীভূত করা হয়েছে, কিন্তু সেই সম্পদ গেছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের পকেটে। ইউরোপে এটা ঘটেছে আরেকভাবে। ইউরোপের কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচিগুলো কর্মজীবী ও দরিদ্র শ্রেণিকে ভীষণ বাজেভাবে আঘাত করেছে, ধনীকে করেছে আরও ধনী—যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মতো অত তীব্রভাবে নয়, তবে এটা ঘটেছে। এর ফলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ, প্রতিরোধ, যার নাম জনতুষ্টিবাদ। নতুন এই জনতুষ্টিবাদ প্রচলিত জনতুষ্টিবাদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। ...আর এর ফায়দাই লুটেছে ট্রাম্পের মতো নেতারা।
প্রশ্ন: ইউএস ক্যাপিটলে হামলার এক বছর পেরিয়েছে। এ হামলার পরিণতি কী?
চমস্কি: ক্যাপিটলে চালানো হামলা ছিল একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা। নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার যে দাবি হামলাকারীরা করেছিল, তা স্পষ্টই এসেছিল ট্রাম্পের কাছ থেকে। কাজেই তারা স্লোগান তুলল, চলো ক্যাপিটলে, দেশকে কারচুপির নির্বাচন থেকে বাঁচাই। একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চেষ্টাকে ক্যু বলা হয়। এই ক্যু প্রায় সফল হয়ে গিয়েছিল বলা চলে। ...তবে এই ক্যু আরেকটি 'সফট ক্যু' ঘটিয়ে দিয়েছে আমাদের চোখের সামনেই। প্রতিদিনই আমরা এ নিয়ে খবর পড়ি। রিপাবলিকানরা খুব সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করছে, পরবর্তী ক্যু যেন সফল হয়। কাজটি তারা করছে অত্যন্ত সুসংগঠিত পদ্ধতিতে, একেবারে খোলাখুলি, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারা চেষ্টা করছে, যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, তারা যেন ডানপন্থী রিপাবলিকান হয়। যারা 'ভুল' ভোট দেবে, তাদের ভোট যেন গণনা করা না হয়, তা নিশ্চিত করবে এই পর্যবেক্ষকরা। রিপাবলিকান পার্টি আর রাজনৈতিক দল নেই। এটা এখন নব্যফ্যাসিবাদী দল। যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সমাজ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবেও উন্নত, কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে বাকি সব ক্ষেত্রে প্রাক্-আধুনিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। ওই প্রাক্-আধুনিক অংশই ট্রাম্পের ভোটার। আর তিনি খুব প্রভাববিস্তারকারী জননেতা। মার্কিন সমাজের উপরিভাগের ঠিক নিচেই যে বিষের স্রোত বইছে, তা ওপরে তুলে আনতে পেরেছেন তিনি। ...এই গোষ্ঠীটাই ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিল, এবং এখন পরিকল্পনা করছে আগামী হামলা যেন সফল হয়। আমেরিকান গণতন্ত্র গুরুতর বিপদে আছে।
প্রশ্ন: বাইডেন প্রশাসন কি আপনার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রগতিশীল হয়েছে?
চমস্কি: সত্যি বলতে কী, আমার খুব বেশি আশা ছিল না। তবে আমি যতটা আশা করেছিলাম, দেশীয় কর্মসূচিগুলো তারচেয়ে ভালো এগিয়েছে। আসলে এসব কর্মসূচির অনেকটাই বার্নি স্যান্ডার্সের পরিকল্পনা, যিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে প্রগতিশীল অংশের প্রতিনিধি। বাজেট বিভাগে পরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তিনি। বাইডেনের প্রধান কর্মসূচির [বিল্ড ব্যাক বেটার] উদ্যোগও স্যান্ডার্সই নিয়েছিলেন। সমাজকল্যাণে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো সাধারণ ব্যাপারগুলোর কথাই ধরুন। যুক্তরাষ্ট্র ও দুয়েকটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসহ পৃথিবীর গোটা ছয়েক দেশে এই ছুটি নেই। বাকি সব দেশেই আছে। যুক্তরাষ্ট্রে? উঁহু, এই ছুটি আপনি পাবেন না। রিপাবলিকানরা? শতভাগ এই ছুটির বিরোধিতা করেছে। [সিনেটর জো] মানচিনের মতো ডেমোক্রেটরা এই ছুটি আটকে দিয়েছে। এই হলো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ।
তাদের হিসাবে দেখা গেছে, কর্মজীবী শ্রেণির পকেট থেকে ৫০ ট্রিলিয়ন, হ্যাঁ ৫০ ট্রিলিয়ন ডলার চুরি করে অতিধনী এবং কর্পোরেট খাতের মালিক ও চালনাকারীদের পকেটে পোরা হয়েছে। এটা মূর্তিমান বাস্তব। আর এই হিসাবে অনেকটাই কমিয়ে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন: চাকরির ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
চমস্কি: চাকরি কী? সিংহভাগ মানুষের জন্য চাকরি হচ্ছে আপনি যতক্ষণ জেগে থাকেন, তার বেশিরভাগ সময়ই একজন মনিবের হুকুম তামিল করা। এই মনিবরা এমন আদেশ দিতে পারে, যা খোদ স্ট্যালিন কল্পনাও করতে পারেননি। স্ট্যালিন মানুষকে বলতে পারতেন না, তুমি পাঁচ-মিনিটের বাথরুমে যাওয়ার বিরতি নিতে পারবে কিংবা তুমি তোমার পাশের মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। আপনার মনিব যদি দয়ালু হয় তাহলে হয়তো একটু ব্যতিক্রম হতে পারে, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণই মনিবের সিদ্ধান্ত। একেই বলে চাকরি। আজকাল অধিকাংশ মানুষ ভাবে ওটাই বুঝি প্রথাসিদ্ধ আচরণ। ...শিল্পবিপ্লবের প্রথম ধাপে কর্মজীবী শ্রেণি তিক্তভাবে এই স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করেছে। এই স্বৈরতন্ত্র তাদের মর্যাদা, তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছিল। সেই বিরোধিতা আজ আবার ফিরে আসছে। বহু মানুষ একই কথা বলছে। সত্যি বলতে কী, বহু লোক, যারা চাকরিতে ফিরে যেতে অস্বীকার করছে, তারা তাদের নিজেদের মতো করে এ কথা বলছে।
প্রশ্ন: কোনো ধরনের কর্তৃত্ব ছাড়া কি সুসংগঠিত অর্থনীতি পাওয়া সম্ভব?
চমস্কি: নিশ্চয় সম্ভব। এই বিষয়টির খুব ভালো উদাহরণ হলো স্পেন। সমন্বিত শিল্পগোষ্ঠী মন্দ্রাগনকে দেখুন। ১৯৫০-এর দশক থেকে আছে এই শিল্পগোষ্ঠী। এটি শ্রমিক-মালিকানাধীন, ব্যাপকভাবে শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত। হ্যাঁ, এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি পাবেন। কিন্তু অংশগ্রহণকারীদেও হাতেই শিল্পগ্রুপ নিয়ন্ত্রতিত হওয়া উচিত—এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এই সফল, দীর্ঘস্থায়ী শিল্পগোষ্ঠীটি।