ওয়াসার পানিতে মল, আর্সেনিক ও ব্যাকটেরিয়া
রাজধানীর পুরার ঢাকার পাতলা খান লেন, সদরঘাট ও কাজীপাড়া এলাকার ওয়াসার পানিতে মলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছে আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাবিসহ বিশেষজ্ঞ কমিটি। এছাড়া এই তিন এলাকায় ওয়াসার পানিতে ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া ও আর্সেনিকের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
গত ২১ মে হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানির উৎস, ১০টি বিতরণ জোন, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেন।এদের মধ্যে পরে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৩৪টি স্থান থেকে। সেগুলো আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাবি অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর আটটি নমুনাতে দূষণ পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের দেয়া এক নির্দেশে গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবি’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১৮ এপ্রিল ওই কমিটির নামের তালিকা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে সেই ধারাবাহিকতায় আদালত গত ২১ মে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য আদালতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিটকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তানভীর আহমেদ।
প্রতিবেদনটি আগামী রবিবার (৭ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হবে।
প্রসঙ্গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবি।
এতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হচ্ছে।
এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে ২০ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’ এ ছাড়া টিআইবির এই প্রতিবেদনকে তিনি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করেন।
তাকসিম এ খানের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। তারা নিরাপদ পানির দাবি করে আসছেন।এরই অংশ হিসেবে ২৩ এপ্রিল তাকে ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত খাওয়ানোর কর্মসূচি নেন জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান।