অদূরদর্শী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার
একটু একটু করে যেন বাংলাদেশের উইকেট বুঝতে শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। প্রথম ম্যাচে প্রতিরোধহীন হার মেনে নেওয়া কিউইরা দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ লড়াই করে। খুব কাছে গিয়েও অবশ্য ৪ রানে হার মানে সফরকারীরা। তৃতীয় ম্যাচে আরেকটু উন্নতি হলো তাদের। এবার আর হার নয়, টি-টোয়েন্টিতে দারুণ ছন্দে থাকা বাংলাদেশকে হারের স্বাদ দিলো নিউজিল্যান্ড।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫২ রানে হেরে গেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। দারুণ এই জয়ে সিরিজে টিকে রইলো কিউইরা। সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে ১২৮ রান তোলে। জবাবে শুরুতেই দিক হারানো বাংলাদেশ ধুঁকে ধুঁকে কিছুটা পথ পাড়ি দেয়। মুশফিকুর রহিম এক পাশে অপরাজিত থেকে গেলেও অন্য পাশ গুঁড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৭৬ রানে। এটা টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরও (৭০) কিউইদের বিপক্ষে। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের চারটি সর্বনিম্ন স্কোরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (৭০, ৭৬, ৭৬, ৭৮)। ঘরের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। আগের সর্বনিম্ন ছিল ৯ উইকেটে ৮৫, ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
যে স্পিনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বাংলাদেশ, সেই স্পিনেই এবার তারা কুপোকাত। নিউজিল্যান্ডের তিন স্পিনারেই শেষ হয়ে গেছে ঘরের মাঠের দলটির ইনিংস। বল হাতে কিউইদের নেতৃত্ব দিয়েছেন এজাজ প্যাটেল। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার। কোল ম্যাকনকিও ছিলেন দারুণ। ৪ ওভারে ১৫ রানে ৩টি উইকেট নেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। একটি করে উইকেট নেন রাচিন রবীন্দ্র, স্কট কুগেলাইন ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম একটি করে উইকেট নেন।
নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অদূরদর্শী ব্যাটিং-ই হারের অন্যতম কারণ। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই বাজে শট খেলতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। বাকিরা উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালোই শুরু করেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও নাঈম শেখ। টি-টোয়েন্টি মেজাজেই খেলতে থাকেন এ দুজন। কিন্তু তাদের জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ২৩ রানে ম্যাকনকির শিকারে পরিণত হন লিটন। ১১ বলে ১৫ রান করে থামেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
প্রথম উইকেট নিতেই বাংলাদেশকে চেপে ধরে নিউজিল্যান্ড। এজাজ প্যাটেল ও ম্যাকনকি তাদের স্পিন ছোবলে মাহমুদউল্লাহর দলকে দিক ভুলিয়ে দেন। তাদের স্পিন ঘূর্ণিতে ৪৩ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মাঝে কেবল নাঈম ১৩ রান করেন। বাকিদের উইকেটে দাঁড়াতেই দেননি কিউই স্পিনাররা।
এরপর যা লড়াই করার, মুশফিকুর রহিম একাই করেছেন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৩৭ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। এরপরও পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেখ মেহেদী হাসান ১, সাকিব আল হাসান ০, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ হোসেন ধ্রুব ০, নুরুল হাসান সোহান ৮, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৮, নাসুম আহমেদ ০ ও মুস্তাফিজুর রহমান ৪ রান করেন।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে তেড়েফুঁরেই শুরু করেছিলেন ফিন অ্যালেন। আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকেও সাবলীল মনে হচ্ছিল। কিন্তু ভালো শুরুর এই আভাশ মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। এদিন বাংলাদেশ পেসারদের তোপে দিক হারিয়ে ধুঁকতে থাকে নিউজিল্যান্ড। পরে স্পিনারদের সামলাতেও কম বেগ পেতে হয়নি তাদের। এরপরও মাঝারি সংগ্রহ গড়ে কিউইরা।
এদিন উইকেট নিয়ে শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরের দুই উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এরপর দুই উইকেট নিয়েছেন দুই স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
প্রথম ও শেষ ওভারটি খরুচে হয়েছে, আছে অদ্ভুত মিলও। ইনিংসের প্রথম ওভারটি করেন শেখ মেহেদী। ডানহাতি এই অফ স্পিনার ১১ রান খরচা করেন। ইনিংসের শেষ ওভার করেন মুস্তাফিজ, বাঁহাতি এই পেসারের খরচাও ১১ রান।
১২৮ রানের ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যান ছক্কা মারতে পারেননি। পুরো ইনিংস মিলিয়ে ৪ হয়েছে ১৪টি। সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন হেনরো নিকোলস। ৩০ রান করা টম ব্লান্ডেলও নিকোলসের মতো অপরাজিত থাকেন।
এ ছাড়া ফিন অ্যালেন ১৫, রাচিন রবীন্দ্র ২০ ও উইল ইয়ং ২০ রান করেন। সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। একটি করে উইকেট পান শেখ মেহেদী, মুস্তাফিজ ও মাহমুদউল্লাহ। সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে ২৪ খরচা করে কোনো উইকেট পাননি।