অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস
২০০৫ সালের পর ২০১৭; ১২ বছরের অপেক্ষা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটি জয়ের দেখা পেতে এই অপেক্ষা একটু বেশিই কিনা! ওয়ানডের পর টেস্টেও জয়, কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে চারবারের দেখায় শুধু হতাশাই মিলেছে। টেস্ট জয়ের চার বছর পর প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়। এরপর অজিদের বিপক্ষে কেবলই বাংলাদেশের বিজয়ের গল্প। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও বিজয় নিশান ওড়ালো বাংলাদেশ।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। সিরিজে বাংলাদেশ এখন ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে। বাকি দুটি ম্যাচ এখন নিতান্তই নিয়ম রক্ষার। বাংলাদেশ চাইলে এখন অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার দিকে দৃষ্টি দিতেই পারে।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে ৯ উইকেটে ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাই দলকে পথ দেখিয়েছেন। শেষের দিকে বল হাতে ইতিহাস গড়েন নাথান এলিস। অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি এই পেসার। যা টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ঘটনা।
জবাবে খারাপ শুরুর পরও চাপ সামলে নেওয়া অস্ট্রেলিয়াকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নেন এই সিরিজের সব ম্যাচেই রানের দেখা পাওয়া মিচেল মার্শ। অবশ্য তার হাফ সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। সফরকারীদের ইনিংস থেমে যায় ১১৭ রানে। ২০ ওভারের ম্যাচে এটাই অস্ট্রেলিয়ার জন্য সর্বনিম্ন লক্ষ্য, যেটা তাড়া করতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে এই ফরম্যাটে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রান করেও জিতলো বাংলাদেশ।
পুরো ম্যাচ থেকেই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলেছে দুই দলই। স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি বাংলাদেশের মুখে। এই হাসি ছিনিয়ে আনার পেছনে দুজনের নাম বড় করে; মাহমুদউল্লাহ ও মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচ সেরা মাহমুদউল্লাহর ৫২ রানের ইনিংসটি ছিল মহা কার্যকর। এরপর বল হাতে অজিদের রীতিমতো শাসন করেছেন মুস্তাফিজ।
বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদরা, কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচা করেন বাঁহাতি এই পেসার। শেষ দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার যখন ২৩ রান দরকার, ১৯তম ওভারটি করতে যান মুস্তাফিজ। এই ওভারে অ্যালেক্স ক্যারি ও ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে রীতিমতো বোকা বানিয়ে ফেলেন মুস্তাফিজ। মাত্র ১ রান দেন তিনি। শেষ ওভারে ২২ রান তাড়ায় মাহেদী হাসানের ওভার থেকে ১১ রান তোলে সফরকারীরা।
যেকোনো ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টানা তিনটি মাচ জিতলো বাংলাদেশ। যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো টানা তিন ম্যাচ জিতলো তারা। এর আগে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে এ নিয়ে সাতটি সিরিজ জয়ের সাফল্য জমা পড়লো দলটির ঝুলিতে (এর মধ্যে তিনটি সিরিজ ছিল একটি ম্যাচের)।
উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে রান তাড়া করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। ইনিংস উদ্বোধন করেন বেন ম্যাকডারমট ও অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। এই দুজন দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। দলীয় ৮ রানেই ওয়েডকে ফিরিয়ে দেন নাসুম আহমেদ।
প্রথম উইকেট হারানোর চাপ অবশ্য সহজেই কাটিয়ে তোলেন এই সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া ম্যাকডারমট ও দারুণ ছন্দে থাকা মিচেল মার্শ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রান যোগ করেন এ দুজন। সাকিব আর হাসানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ২১ বলে ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন ম্যাকডারমট।
কিছুক্ষণ পরই ময়জেস হেনরিকসকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। এবারও দলকে চাপ বুঝতে দেননি আগের দুই ম্যচে ৪৫ রান করে করা মিচেল মার্শ। অ্যালেক্স ক্যারিকে নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। এবার যদিও বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি তার। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি করে শরিফুলের শিকার হন তিনি। ৪৭ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৫১ রান করে থামেন তিনি।
এরপর দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি ও ড্যান ক্রিশ্চিয়ান দলকে জয়ের হাসি এনে দিতে পারেননি। ক্যারি ২০ ও ক্রিশ্চিয়ান ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। শরিফুল ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও নাসুম।
বৃষ্টি হানার ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন মাহমুদউল্লাহ। শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো, দলীয় ৩ রানেই নেই দুই ওপেনার। তখন মনে হচ্ছিল, আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাহলে ভুলই হয়ে গেল। সেই ভুল ঠিক করতে মাহমুদউল্লাহই রাখেন বড় অবদান। তার ব্যাটেই লড়াইয়ের পূঁজি পায় বাংলাদেশ।
নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফিরে যান। ৩ রানেই দুই উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। যদিও এই জুটি বড় হয়নি। দলীয় ৪৭ রানে থামেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুক্রবার ১৫ বছর পূর্ণ করা সাকিব। এর আগে ১৭ বলে ৪টি চারে ২৬ রান করেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহই ব্যাট হাতে যা লড়াই করেছেন। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে ৫৩ বলে ৪টি চারে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি। আফিফ হোসেন ধ্রুবও ভালো শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান রান আউট হয়ে থামেন। এ ছাড়া নুরুল হাসান সোহান ১১ রান করেন।
ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহকে ফেরান এলিস। এরপরের দুই বলে টানা দুই উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টির হ্যাটট্রিক রেকর্ড বইয়ে নতুন পাতা যোগ করেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অভিষিক্ত বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন ডানহাতি এই অজি পেসার। ম্যাচে এই ৩ উইকেটেই পয়েছেন তিনি। এ ছাড়া জস হ্যাজেলউড ও অ্যাডাম জ্যাম্পা ২টি করে উইকেট নেন। ৃ