আবারও কিউই কান্না, টি-টোয়েন্টির নতুন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
একটি করে ফাইনাল আসে আর একটি করে বিষাদের কাব্য লেখা হয়। যেখানে দুঃখিনী দলটির নাম নিউজিল্যান্ড। নিশ্বাস দূরত্বে থাকা শিরোপাও হয়ে ওঠে বিভ্রম, যেন তা ধু ধু মরুভূমিতে কেবলই মরীচিকা। এবার হয়তো দুঃখ ঘুচবে কিউইদের; ক্রিকেটের আলোচনায় বলা হচ্ছিল এভাবেই। কিন্তু না, হারই অমোঘ নিয়তি তাদের। দাপুটে ক্রিকেট খেলে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া।
রোববার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে রেকর্ড গড়ে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা সপ্তমবারে টি-টোয়েন্টির শিরোপা ঘরে তুললো, ক্রিকেট বিশ্ব পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন। এটা ছিল তাদের দ্বিতীয় ফাইনাল। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে শিরোপা হারিয়েছিল অজিরা।
অন্য দিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে যোগ হলো আরও একটি আক্ষেপের অধ্যায়। ২০১৫ সাল থেকে এর শুরু। সেবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই হেরেছিল কিউইরা। এরপর ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারে তারা। এবার সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শোধ নিলেও অজিদের বিপক্ষে পরাজিত সৈনিকই থেকে যেতে হলো উইলিয়ামসন, গাপটিল, বোল্টদের। আরও একবার তাদের সান্ত্বনা রানার্স আপের তকমা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে বলতে গেলে একাই পথ দেখান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করার দিনে কয়েকটি রেকর্ড গড়ে দলের রান অনেক এগিয়ে দেন তিনি। অধিনায়কের ব্যাটে ৪ উইকেটে ১৭২ রানের রেকর্ড সংগ্রহ দাঁড় করায় কিউইরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
চোখের সামনেই শিরোপা, কিন্তু সেটা ছুঁতে রেকর্ড গড়ে জিততে হবে। অস্ট্রেলিয়া দেখেশুনে ব্যাটিং করেও ভালো শুরু করতে পারেনি। শুরুর চাপও অবশ্য বুঝতে হয়নি তাদের। ডেভিড ওয়ার্নার ও ম্যাচসেরা মিচেল মার্শের দারুণ জুটিতে জয়ের পথেই থাকে অজিরা। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে ২ উইকেটে ১৮.৫ ওভারে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান নায়োকোচিত ইনিংস খেলা মার্শ।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১৫ রানে ফিরে যান অ্যারন ফিঞ্চ। অধিনায়কের বিদায়ের চাপ যদিও বুঝতে হয়নি অজিদের। দ্বিতীয় উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়েন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। এই জুটিতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় ছয়টি আইসিসি ট্রফির মালিক হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এর আগে ৩৮ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৩ রানের মহাকার্যকর এক ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি এই ওপেনার। এবারের বিশ্বকাপে ৩টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৮.১৬ গড়ে ২৮৯ রান করেছেন তিনি। যা আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দারুণ ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ের পুরস্কার হিসেবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পরও অজিরা কোনো চাপ টের পায়নি। তৃতীয় উইকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ৬৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন মার্শ। ডানহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ৫০ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৭ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। ১৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার যাওয়া দুটি উইকেটই নেন কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট।
এর আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ভালো ছিল না। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট মাত্র ৫৭ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। ততোক্ষণে অবশ্য উইকেটে থিতু হয়ে গেছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এরপরই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন তিনি।
৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেন। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার দ্বিতীয় সেরা ইনিংস। এই ফরম্যাটে উইলিয়ামসনের সেরা ইনিংস ৯৫, ভারতের বিপক্ষে। এই ইনিংসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ফাইনালে তার ইনিংসটিই অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
উইলিয়ামসনের ব্যাটিং শো-এর দিন কিউই অন্য ব্যাটসম্যানরাও রানের দেখা পান, যদিও কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। মার্টিন গাপটিল ২৮, ড্যারিল মিচেল ১১, গ্লেন ফিলিপস ১৮, জিমি নিশাম ১৩ ও টিম সেইফার্ট ৮ রান করেন। দারুণ বোলিং করা অজি পেসার জশ হ্যাজেলউড মাত্র ১৬ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। একটি উইকেট পান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা।