ঘূর্ণি জাদুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়
স্পিন, স্পিন এবং স্পিন; মাহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। প্রথম তিন ওভারে এই তিন স্পিনার তুলে নিলেন একটি করে উইকেট। ইনিংসের বাকিটা সময়েও থাকলো স্পিন ঘূর্ণি। সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান দেখালেন 'পেস ঘূর্ণি'। ঘূর্ণিতে টি-টোয়েন্টিতে অবশেষে দমানো গেল অস্ট্রেলিয়াকে। ঘরের মাঠে চিরচেনা অস্ত্র স্পিনে কাবু করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে ২৩ রানে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। টস হেরে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৩১ রান তোলে। জবাবে ১১ রানেই তিন উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থামে ১০৮ রানে। বাংলাদেশের স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দেওয়া নাসুম আহমেদ ৪ উইকেট নিয়ে জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এই জয়ে সব ফরম্যাটেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ নিলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে জয়ে শুরু হয়েছিল, চক্রটা পূরণ হলো টি-টোয়েন্টি দিয়ে। ২০০৫ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে মিরপুরে টেস্ট এবং চার বছর বছর পর এই ভেন্যুতেই টি-টোয়েন্টিতে জিতলো বাংলাদেশ। তিন ফরম্যাটেই অজিদের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
১৩১ রান করে জিততে হলে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়তে হতো। টি-টোয়েন্টিতে এতো কম রান করে কখনও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ছোট সংগ্রহ গড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই স্কোরও ছিল ১৩৩ রানের। এবার আরও ২ রান করে অজিদের বিপক্ষে বিজয় নিশান ওড়ালো মাহমুদউল্লাহর দল।
বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ঝলমলে। ১৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার অ্যালেক্সে ক্যারিকে ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্ড করেন মাহেদী হাসান। পরের ওভারে আরেক স্পিনার নাসুম আহমেদের ছোবল। তার শিকার জস ফিলিপে। ১০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেন সাকিব আল হাসান। তৃতীয় ওভারে ময়জেস হেনরিকসকে ফিরিয়ে দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
১১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে দলের হাল ধরেন সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মিচেল মার্শ ও অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। যদিও এই জুটি বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেনি। দলীয় ৪৯ রানের মাথায় ওয়েডকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন নাসুম। মার্শের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়া ওয়েড ১৩ রান করে বিদায় নেন।
অ্যাস্টন অ্যাগার দ্রুতই থামেন। তাকে সাজঘরের পথ দেখান ম্যাচ সেরা নাসুম। ৪৫ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ রান করা মিচেল মার্শকে ফিরিয়ে অজিদের ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটিও দেন নাসুম। এরপর মিচেল স্টার্ক কেবল কিছু রান করেন। বাঁহাতি এই পেসারের ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। নাসুম ৪ ওভারে ১৯ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও মাহেদী।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩৩ বলে ৩টি চারে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মিচেল স্টার্ককে ছক্কা মারা নাঈম শেখ ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই ওপেনার ২৯ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ রান করেন। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার বাজে শট খেলে নিজের স্টাম্প ভেঙে সাজঘরে ফেরেন। ২ রান করে থামতে হয় তাকে।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০ বলে একটি ছক্কায় ২০ রান করে আউট হন। এরপর দ্রুতই ফেরেন ৩ রান করা নুরুল হাসান সোহান। ছয় নম্বরে নামা আফিফ হোসেন ধ্রুব শেষ বল পর্যন্ত ব্যাটিং করেন। ইনিংসের শেষ বলে স্টার্কের বলে বোল্ড হওয়া বাঁহাতি তরুণ এই ব্যাটসম্যান ১৭ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করেন।
জিম্বাবুয়ে সফরে অভিষেক হওয়া শামীম পাটোয়ারী বেশি সময় টিকতে পারেননি। বিশ্বজয়ী যুব দলের এই সদস্য ৪ রান করে আউট হন। মাহেদী হাসান ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি পেসার জস হ্যাজেলউড সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া মিচেল স্টার্ক ২টি এবং অ্যাডাম জ্যাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই একটি করে উইকেট নেন। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ৪ আগস্ট মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে।