ডেভিডসন, ম্যালেটের মৃত্যুতে শোকের ছায়া অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে। মারা গেছেন অ্যালান ডেভিডসন ও অ্যাশলে ম্যালেট।
দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মেনেছেন ৭৬ বছর বয়সী টেস্ট স্পিনার ম্যালেট। অন্যদিকে কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ডেভিডসন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ৯২ বছর বয়সে।
ডেভিডসন ছিলেন একজন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার এবং মারকুটে লোয়ার মিডল-অর্ডার ব্যাটার। তাকে মনে করা হতো "ক্রিকেটের সেরা খেলোয়াড়দের একজন," এবং একইসাথে "খেলাটির অন্যতম প্রভাবশালী ও ভালোবাসার ব্যক্তিত্ব"।
"অ্যালান ছিলেন আমাদের এই খেলার একজন বিশালাকার ব্যক্তিত্ব," বলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান রিচার্ড ফ্রয়েডেনস্টাইন।
"এটি শুধু অস্ট্রেলিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করা সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবেই নয়, পাশাপাশি এই খেলার প্রশাসক, মেন্টর ও দাতা হিসেবেও তার ইতিবাচক প্রভাবের কারণেও।"
১৯৫৩ সালে অ্যাশেজ সফরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় ডেভিডসনের। তিনি মোট ৪৪টি টেস্ট খেলেন। ২০.৫৩ গড়ে ১৮৬টি উইকেট নেন তিনি। সেরা পরিসংখ্যান ছিল ৭-৯৩। এছাড়াও ব্যাট হাতে ১,৩২৮ রান করেন তিনি।
বেশ কয়েকটি ইনজুরি কাটিয়ে উঠে ডেভিডসন খেলার মাঠে নিজের সেরা সময়টা পার করেন ১৯৫০'র দশকের শেষে থেকে ১৯৬০'র দশকের গোড়ার দিকে। ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিচি বেনো।
অস্ট্রেলিয়া দলের একটি স্বর্ণযুগে খেলেছেন তিনি, যখন তিনটি অ্যাশেজ সিরিজ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত সফরে গিয়েও সফল হয়। তখনকার দিনে ডেভিডসন পরিচিত ছিলেন ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার হিসেবে।
এরপর তিনি ৩৩ বছর কাটান ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে, ২০ বছর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে, এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের নির্বাচক হিসেবে।
এদিকে ম্যালেটও পরিচিত ছিলেন একজন খুবই বিনয়ী ব্যক্তি হিসেবে, যিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের উন্নতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
চুপচাপ স্বভাব সত্ত্বেও "রাওডি" ডাকনাম পাওয়া এই ক্রিকেটারের ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়। সব মিলিয়ে তিনি ৩৮টি টেস্ট খেলে ২৯.৮৪ গড়ে ১৩২টি উইকেট লাভ করেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একজন ফিঙ্গার স্পিনার হিসেবে এখনও সেরা ফিগারের মালিকানা রয়েছে ম্যালেটের দখলে। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে ৫৯ রানের বিনিময়ে ৮ উইকেট নেন তিনি।
তবে ভারতের বিপক্ষে তার কৃতিত্বই সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমের সফরে তিনি ২৮টি উইকেট পান, যার বদৌলতে অস্ট্রেলিয়া লাভ করে ভারতের মাটিতে এক বিরল সিরিজ জয়।
"অ্যাশলে ম্যালেট ছিলেন একজন চমৎকার খেলোয়াড়, সকলের প্রিয় সাংবাদিক এবং উঁচুদরে নন্দিত লেখক," বলেন ফ্রয়েডেনস্টাইন।
"অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে তিনি কেবল একজন খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, একজন দারুণ স্টোরিটেলার হিসেবেও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এই খেলার শ্রেষ্টতম কিছু মুহূর্ত তার লেখার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রেখেছেন, যেগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষ উপভোগ করবে।"
খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করার পর ম্যালেট অনেক তরুণ স্পিনারকে কোচিং করান। নিজ দেশে স্পিন অস্ট্রেলিয়া প্রোগ্রামের পাশাপাশি তিনি শ্রীলঙ্কাতেও একটি স্পিন অ্যাকাডেমি গড়ে তোলেন।
তিনি অসংখ্য বইও লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ব্যাটিং গ্রেট ভিক্টর ট্রাম্পার ও স্পিন জাদুঘর ক্ল্যারি গ্রিমেটের জীবনী।
- সূত্র: এএফপি