তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ সাকিব, সঙ্গে আর্থিক জরিমানা
মাঠে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করার শাস্তি পেলেন সাকিব আল হাসান। শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ম্যাচ চলাকালীন স্টাম্পে লাথি মারা, দুই হাতে স্টাম্প তুলে আছাড় মারা ও অন ফিল্ড আম্পায়ারের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় প্রিমিয়ার লিগে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধসহ সাকিবকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম)।
শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের শাস্তি ঘোষণা করেন বিসিবি পরিচালক ও সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম। সাকিবের বিরুদ্ধে লেভেল-৩ পর্যায়ের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ এনেছেন ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল চৌধুরী। ম্যাচ রেফারিই সাকিবকে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ও আর্থিক জরিমানা করেছেন। সাকিব শাস্তি মেনে নেওয়ায় কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।
সাকিবের শাস্তি প্রসঙ্গে কাজী ইনাম জানান, ম্যাচের দুই অন ফিল্ড আম্পায়ার ইমরান পারভেজ ও মাহফুজুর রহমান এবং ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল আলম রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সাকিবকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তির নোটিশ দুপুরে সাকিবের কাছে পাঠানো হলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করেন। শাস্তি মেনে না নিলে তখন শুনানি অনুষ্ঠিত হতো।
নিয়ম অনুযায়ী একই ম্যাচে লেভেল-৩ পর্যায়ের অপরাধ দ্বিতীয় বারের মতো করলে নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে ২ থেকে ৫ ম্যাচ নিষিদ্ধ ও কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। দুই অপরাধের জন্যই সাকিবকে নূন্যতম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। প্রথম অপরাধের জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ ও দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দ্বিতীয় অপরাধের জন্য দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ ও তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারকে।
ঘটনাটি শুক্রবারের। এদিন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের দেওয়া ১৪৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করছিল আবাহনী লিমিটেড। ওভারের পঞ্চম ওভার করছিলেন সাকিব। এই ওভারের শেষ ডেলিভারিটি আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের পায়ে লাগলে এলবিডব্লিউর আবেদন করেন সাকিব।
আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় দুই সেকেন্ডের ব্যবধানে আম্পায়ারকে আক্রমণ করে বসেন সাকিব। লাথি মেরে স্টাম্প ভেঙে আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপনের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। এ সময় আম্পায়ারকে গালি-গালাজ করেন মোহামেডান অধিনায়ক। তার সতীর্থরা এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এখানেই থামেনি সব। পরের ওভারে আরও ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করেন সাকিব। এই ওভারটি করতে আসেন মোহামেডানের অফ স্পিনার শুভাগত হোম। প্রথম দুই বলে দুটি চার হজম করতে হয় তাকে। ওভারের পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি শুরু হয়, উইকেট ঢাকার নির্দেশ দেন আম্পায়ার। এ সময় এক্সট্রা কভার থেকে দৌড়ে এসে দুই হাতে দুই স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন সাকিব।
এরপরও সাকিবকে থামানো যাচ্ছিল না। গালি-গালাজ করতে করতে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মাঠের বাইরে গিয়ে আরেকটি অঘটনের জন্ম দেন তিনি। আঙুল তুলে কিছু একটা বলে যাচ্ছিলেন তিনি, তেড়ে যাচ্ছিলেন আবাহনীর ড্রেসিং রুমের দিকে। এ সময় আবাহনীর কোচ সুজনকেও সাকিবের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়।
এটাই প্রথম নয়, এরআগে বহু বিতর্কে সাকিবের নাম জড়িয়েছে। সেসবের শাস্তি হিসেবে কয়েকবার নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত পাওয়া সাকিব কদিন আগেই বিসিবির জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙে আলোচনায় আসেন। ক্ষমা চেয়ে সে যাত্রায় পার পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এবার ক্ষমা চেয়ে রেহাই মিললো না তার।