নেইমারদের কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন মেসির আর্জেন্টিনা
একটি করে ফাইনাল আসে আর বিষাদের কাব্য লেখা হয়। ফুটবলকে দুই হাত ভরে দেওয়া লিওনেল মেসির হাত শূন্যই থেকে যায়। ফুটবলের প্রায় সব রেকর্ড পায়ে লোটানো মেসি সাদা-আকাশী জার্সিতে থেকে যান বিবর্ণ। এবার আর একই গল্প নয়। এবার সময় বিজয় কেতন ওড়ানোর। মারাকনায় লেখা হলো বিজয়ের সেই গল্প। ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুললো আর্জেন্টিনা। অবশেষে মেসির হাতে উঠলো একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা।
বাংলাদেশ সময় রোববার ভোরে ব্রাজিলের ঐতিহাসিক মারকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। আনহেল ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় লিওনেল স্কালোনির দল। এরপর আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলে পুরো ম্যাচে, আর গোলের দেখা মেলেনি।
লাতিন অঞ্চলের সবচেয়ে জমজমাট এই আসরে এটা আর্জেন্টিনার রেকর্ড ১৫তম শিরোপা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর কোপার শিরোপা জিতলো আলবিসেলেস্তেরা। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে এই আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সর্বশেষ শিরোপা জেতার পর চারবার কোপার ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু একবারও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি আলবিসেলেস্তেদের। এবার অপেক্ষা ফুরালো তাদের।
এটা ছিল কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যকার চতুর্থ ফাইনাল। আগের তিন শিরোপার লড়াইয়ে ব্রাজিল দুইবার ও আর্জেন্টিনা একবার শেষ হাসি হাসে। শেষ দুইবারই আর্জেন্টিনাকে হতাশায় ডুবিয়েছিল সেলেসাওরা। এবার আর সেই হতাশা নয়, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতলো আর্জেন্টিনা।
পিছিয়ে পড়ে আক্রমণের ধার বাড়ানো ব্রাজিলই বল দখল ও আক্রমণ সাজানোয় এগিয়ে ছিল। পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখেন নেইমার-রিচার্লিসনরা। গোলমুখে ১৪টি শট নেয় ব্রাজিল, এর মধ্যে ২টি ছিল লক্ষ্যে। ৪০ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখা আর্জেন্টিনার নেওয়া ৬টি শটের ২টি ছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচের শুরু থেকে দুই দলই গতিময় ফুটবল খেলতে থাকে। তবে কেউই পরিষ্কার আক্রমণ সাজাতে পারছিল না। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ হলেও বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে হানা দিতে পারছিল না কেউই। তৃতীয় মিনিটেই আর্জেন্টিনার গঞ্জালো মন্তিয়েলকে ফাউল করায় হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের ফ্রেড।
১৩তম মিনিটে আর্জেন্টিনার ডি-বক্সে ঢুকে পড়ে ব্রাজিল। কিন্তু ঠিকমতো বলে শট নিতে পারেননি নেইমার। ২০তম মিনিটে সতীর্থের বাড়ানো বল খুঁজে নেয় নেইমারকে। তিনি বল বাড়ান মন্তিয়েলকে। কিন্তু তার নেওয়া শট আটকে যায় আর্জেন্টিনার রক্ষণে দেয়ালে।
২২তম মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডি পলের লম্বা করে বাড়ানো পাস থেকে বল পান আনহেল ডি মারিয়া। ডান প্রান্ত থেকে ছুটে গিয়ে ব্রাজিলের গোলরক্ষক মোরায়েসের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি।
২৬তম মিনিটে কাসেমিরোর দুর্বল শট ফিরিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ২৯তম মিনিটে আর্জেন্টিনার পাল্টা আক্রমণ। কিন্তু ডি মারিয়ার শট ফিরিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন মার্কিনিয়োস। ৩৩তম মিনিটে মেসির দুর্বল শট বার ঘেসে বেরিয়ে যায়। ৩৪তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেইমারের ফ্রি-কিক আর্জেন্টিনার রক্ষণ দেয়ালে আটকে যায়। ৪২তম মিনিটে আর্জেন্টিান ডি-বক্সে ব্রাজিলের এভারটনের শট, আটকে যায় আর্জেন্টিনার রক্ষণ দেয়ালে।
৪৩তম মিনিটে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের দারুণ এক ক্রস, কিন্তু সেই ক্রস থেকে বল নিয়ে বল নিয়ে শট নিতে পারেননি ব্রাজিলের কেউ। ৪৬তম মিনিটে লাউতারো মার্তিনেসের বাড়ানো বল ব্রাজিলের ডি-বক্সে পায়ে নিতে পারেননি মেসি। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
৪৯তম মিনিটে বল নিয়ে গিয়ে ডি মারিয়াকে বাড়ান মেসি। কিন্তু পিএসজি তারকার নেওয়া শট ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ফিরিয়ে দেয়। ৫২তম মিনিটে আর্জেন্টিনার জালের ঠিকানা খুঁজে পায় ব্রাজিল। কিন্তু রিচার্লিসনের গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়।
৫৪ মিনিটে নেইমারের বাড়ানো বল খুঁজে নেয় রিচার্লিসনকে। দারুণ শটও নেন তিনি। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টিনার পোস্টের অতন্দ্র প্রহরী মার্তিনেজ। গোলশোধে মরিয়া অবিরত আক্রমণ সাজাতে থাকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
৬৩তম পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সের বাইরে কারিকুরিতে বল নিয়ন্ত্রণে রেখে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন মেসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি তিনি। তার শট নেওয়ার আগেই বল কেড়ে নেয় ব্রাজিলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। ৬৬তম মিনিটে ডি মারিয়া, মেসির পা ঘুরে বল পান গুইদো রদ্রিগেজ। কিন্তু তার নেওয়া শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
৬৯তম মিনিটে নেইমার বল নিয়ে আর্জেন্টিনার ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন, সেখানে জটলা পেকে যায়। লাউতারো মার্তিনেজ লম্বা শটে দলকে বিপদমুক্ত করেন। ৮০তম মিনিটে নেইমার বল নিয়ে ছুটলে তাকে বাজেভাবে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ওতামেন্দি। ৮৩তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে গাবির নেওয়া শট ফেরান আর্জেন্টিনার জার্মান পাজেল্লা।
৮৫তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে আরেকটি দারুণ শট নেন গাবি। লাফিয়ে উঠে ফেরান মার্তিনেজ। ৮৭তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সে ফাঁকা জায়গায় বল পান মেসি। তার সামনে ছিলেন কেবল ব্রাজিলের গোলরক্ষক। কিন্তু শট নিতে পারেননি আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড, পড়ে যান তিনি। যোগ করা সময়ে দি পলের শট ফেরায় ব্রাজিলের রক্ষণ দেয়াল। এরপর আর গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই।