বিমানে চেপে টুর্নামেন্টে যাচ্ছেন, সাইড বেঞ্চ গরম করছেন, কিন্তু মাঠে নামার সুযোগই হচ্ছে না তাদের!
বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো প্রায়ই যেকোনো খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একজন খেলোয়াড় দলে ডাক পাওয়ার পর যে উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা দেখা যায়, টুর্নামেন্টের তিনটি ম্যাচে খেলার নিশ্চয়তা না থাকাটা সেই আনন্দে ভাটা ফেলে।
কাতার বিশ্বকাপের জন্য সব দলের স্কোয়াড ২৩ জন থেকে বাড়িয়ে ২৬ জন করা হয়েছে। এই বাড়তি খেলোয়াড়দের নিয়ে ইংল্যান্ডের গ্যারেথ সাউথগেটের বেশ কয়েকজনের অভিযোগ রয়েছে, যা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
প্রাক্তন নিউ ক্যাসল ইউনাইটেড মিডফিল্ডার রব লি ইউরো '৯৬-এর জন্য স্ট্যান্ডবাই তালিকায় নাম তুলেছিলেন। পুরো টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে দলে ছিলেন, তা-ও খেলার সুযোগ পাননি।
লি বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, '২৮ বছর বয়সে আমার অভিষেক হয়েছিল, সেটা এখন আর কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে সম্ভব হবে না। '৯৮ সালে যখন গ্লেন [হডল] আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমি তার জন্য ব্যাক উইংয়ে খেলতাম। পাশাপাশি মিডফিল্ডাররা বসে পড়লে তখন একটু খেলার সুযোগ পেতাম। আমার খেলার বহুমুখী অবস্থানের জন্য আমি কিছু সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম যে আমি দলে থাকব না। দলে কেউ আহত হলে বা খেলায় কৌশলগত পরিবর্তন হলে আমার খেলার সুযোগ আসত।'
তিনি আরও বলেন, 'কিছু খেলোয়াড় নির্দিষ্টভাবে সেট করা থাকে। এটি কখনই বদলায় না। ম্যানেজাররা যা-ই বলুক না কেন, আপনি যত ভালো পারফর্মই করেন না কেন, দলে আপনার অবস্থান নিশ্চিত নয়।'
যে-কেউ নিশ্চয় চাইবেন তার দল ভালো করুক, কিন্তু স্কোয়াডে থাকলে খেলোয়াড় হিসেবে খেলার সুযোগটা চাওয়াও যৌক্তিক। নিজ দেশের হয়ে খেলা একটি সম্মানের বিষয়, একই সাথে গৌরবেরও। আর যদি বিজয়ী দলের অংশ হওয়া যায় তবে তা সারা জীবনের অর্জন হয়ে থাকবে।
নিউক্যাসলে একটি চমৎকার মৌসুমের পর বর্ষসেরা পিএফএ প্লেয়ার হিসেবে ইউরো '৯৬-এ যাওয়ার সুযোগ পান লেস ফার্দিনান্দ। নিজেকে টেরি ভেনাবলসের অধীনে স্ট্রাইকারদের সাথে চমকপ্রদ ছন্দেও খুঁজে পান। মৌসুমের আগপর্যন্ত অ্যালান শিয়ারার দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো গোল করেননি, কিন্তু টেডি শেরিংহামের সাথে ম্যাচের জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
ফার্ডিনান্দ বলেন, 'টেরি স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে অ্যালান তার পছন্দের তালিকায় ছিল। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমি নিশ্চিতভাবে খেলার সুযোগ পাব। মূল দলে আমি ছিলাম না। ভেনেবলের খেলার অবস্থান ছিল দৃঢ়। আমি যত ভালো খেলি না কেন আমার অবস্থান ছিল অনিশ্চিত। যখন পুরোনো কথা মনে করি, টের পাই, ইংল্যান্ড টিমে আমার ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত হয়েছিল ম্যানেজমেন্টের জন্য। তারা ভেবেছিল আমি এবং অ্যালান একসাথে খেলতে পারব না, কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি যে আমরা পারব।'
এই বিশ্বকাপের জন্য সাউথগেটের বাছাই নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু ইউরো ২০০০-এ ইংল্যান্ডের সহকারী ডেরেক ফাজাকারলে বলেছেন, স্কোয়াডে জায়গা নিশ্চিত করার জন্য ক্লাব ফুটবলের পারফর্ম্যান্স একটি বড় মানদণ্ড। ইংল্যান্ডের টিম ম্যানেজার সবকিছু খেয়াল রেখেই দল নির্বাচন করেন। একজন খেলোয়াড়েরও দলের জন্য কী অবদান আছে, তা খুঁটিয়ে দেখা হয়।
লি স্বীকার করে নিয়েছেন যে একটি টুর্নামেন্টে একজন বেঞ্চের খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা কঠিন। ফুটবল মাঠের খেলা, এখানে আপনি যা পারফর্ম করবেন তা দিয়েই আপনাকে বিচার করা হবে।
পরিবার থেকে দূরে থেকে সতীর্থদের সঙ্গে ম্যাচে ড্রেসিংরুম শেয়ার করাসহ পুরো আয়োজনটাই একটা বিশেষ সময়। কঠোর অনুশীলন করে কেউ ম্যাচ না খেলে লম্বা বিশ্রামে থাকবেন, এটা কাম্য নয়। একজন যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিলেন, কিন্তু যুদ্ধ করানো হলো না—এতে নিঃসন্দেহে প্রশিক্ষণটা বৃথা যাচ্ছে। বিমানে করে ২৬ জনের স্কোয়াড নিয়ে এসে প্রত্যেককে খেলানো প্রায় অসম্ভব। তবে যারা খেলার সুযোগ পান না, এই খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারের গতি কে ফেরাবে?
'ইংল্যান্ড দলের প্রশিক্ষণ ততটা কঠিন নয়, টুর্নামেন্ট এলেই কেবল খেলাগুলো দ্রুত একটির পর একটি আসে। অন্য সময়ে দল বেশ ভারমুক্ত থাকে। ম্যানেজমেন্টকে এই বিষয়টি আরও বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।'
ফাজারকালির মতে, 'কাতারে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টটির পরিসর একটু ছোট। খেলার মাঝে ব্যবধান কম। ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়ের কোনো অঘটন ঘটলে তাকে পুনরায় দলে ফেরানো একটু কঠিন। তাতেও খুবজোর ১১ থেকে ১৮ জন খেলোয়াড় সুযোগ পাবে। বাকিরা?'
ফার্ডিনান্দ বলেছেন, খেলার সময় সীমিত হলেও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটাই মুখ্য। তিনি বলেন, 'আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জানতাম যে আমি খেলার শুরুতেই সুযোগ পাব না। কিন্তু এটুকু জানতাম যে, খেলার সুযোগ পেলে যেকোনো ম্যাচেই প্রভাব ফেলতে পারব। আমার দুর্ভাগ্য, আমি খেলে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছি।'
- গ্রন্থনা: মাহমুদুল হাসান সাফিন