পোল্যান্ড বাধা পেরিয়ে ইতিহাস গড়তে চান পোলিশ বংশোদ্ভূত সৌদি কোচ হার্ভে রেনার্ড
গত মঙ্গলবার কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে রেফারি যখন শেষ বাজি বাজালেন, তখন যেন নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সৌদি আরবের ফুটবলাররা। কারণ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই যে তারা হারিয়েছেন দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে! আর ঠিক ওই মুহূর্তেই 'গ্রিন ফ্যালকন'রা এও বুঝে গিয়েছিলেন যে বিশ্বকাপে তাদের পরবর্তী ম্যাচটা হবে সৌদি আরবের নতুন এক ইতিহাস লেখার সুযোগ!
আজ শনিবার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় পোল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে সৌদি আরব। তবে সৌদি আরবের কোচ হার্ভে রেনার্ডের জন্য পোল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা বরাবরই 'ফুটবলের চাইতেও বেশি কিছু'।
ক্যারিয়ারে সর্বসাকুল্যে সাতটি ক্লাব ও পাঁচটি দেশের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন ৫৪ বছর বয়সী হার্ভে রেনার্ড। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারানোর পরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন এই ফরাসি কোচ। ফিফা ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং বিচারে অন্যতম দুর্বল দল সৌদি আরবই যখন লাতিন আমেরিকান পরাশক্তি আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে উড়িয়ে দিল, সারা বিশ্ব তখন স্তম্ভিত। কিন্তু এ জয়ের নেপথ্য নায়ক যে রেনার্ড, তা আর কারো বুঝতে বাকি নেই।
তবে সৌদি আরবের ভক্তদের মতো এখনই উল্লাসে মত্ত নন কোচ রেনার্ড। আর্জেন্টিনার শেষ ষোলতে যাওয়ার লড়াইকে কঠিন করে দিলেও, নিজেদেরও জিততে হবেই- এমন চিন্তা মাথায় নিয়েই পোল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে 'দ্য গ্রিন ফ্যালকন'রা। সৌদি আরবের লাখো ফুটবলভক্তের দৃষ্টি এখন এই ম্যাচটির দিকে। চেসওয়াফ মিখনিয়েউইচের দলের বিরুদ্ধে জিতে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করলেই নকআউট পর্বে পৌঁছে যাবে সৌদি আরব। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে পৌঁছাতে পেরেছিল সৌদি আরব।
কিন্তু হার্ভে রেনার্ডের কাছে সৌদি আরব বনাম পোল্যান্ডের ম্যাচটা শুধুই শেষ ষোলতে পৌছানোর লড়াই নয়, বরং তার মনের একটি গোপন ইচ্ছার সাথেও জড়িত। ফ্রান্সের অ্যাক্স-লে-বান শহরে জন্ম নিলেও, নানাবাড়ির সূত্রে রেনার্ডের শেকড় গেঁথে আছে পোল্যান্ডে।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে রেনার্ডের নানাবাড়ির সবাই পোল্যান্ডের উজ শহর থেকে পালিয়ে আসেন। ফ্রান্সে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছরের মাথায় রেনার্ডের মায়ের জন্ম হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ ড্রতে সেই পোল্যান্ডের সাথেই একই গ্রুপে জায়গা পায় রেনার্ডের দল।
গ্রুপ ড্র-এর পর টিভিপি স্পোর্টকে হার্ভে রেনার্ড বলেছিলেন, "আমার মনে হয় আমার মা আজ ভীষণ খুশি হয়েছেন। এই ড্র আমি আমার মাকে উতসর্গ করছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সংযোগ রয়েছে এমন একটা দলের বিপক্ষে খেলতে পারা অবশ্যই বিশেষ কিছু। কোনো একদিন হয়তো আমি এই দলটির কোচও হতে পারি, আর তা হলে সেটা দারুণ ব্যাপার হবে।"
তখন রেনার্ডকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি কি আসলেই পোল্যান্ডের কোচ হতে চান কিনা। কারণ পোল্যান্ডের আগের কোচ পাওলো সুসা দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মাথায় পদত্যাগ করার পর গত ক্রিসমাসে পোল্যান্ডের কোচের পদটা ফাঁকাই ছিল।
কিন্তু রেনার্ডের জবাব ছিল, "না, না। আমি এখনই কোচ হওয়ার জন্য প্রার্থী নই। কিন্তু একদিন হয়তোবা আমি পোলিশ কোচ হতে পারবো!"
আজকের ম্যাচের মাধ্যমে এ নিয়ে পঞ্চমবার পোল্যান্ডের মুখোমুখি হবে সৌদি আরব। এর আগে দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। তবে আজ কাতারের আল রাইয়ান এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে রেনার্ড ও মিখনিয়েউইচের দলের মধ্যে কে পরবেন বিজয়ীর মালা তা দেখার জন্য আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
ইতোমধ্যেই আগের ম্যাচে মেক্সিকোর সাথে ড্র করায় কোচ মিখনিয়েউইচের 'অ্যান্টি-ফুটবল' কৌশলের সমালোচনা করেছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মিখনিয়েউইচ সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা মেক্সিকোর সাথে যেভাবে খেলেছি, সৌদির সাথেও সেভাবেই খেলবো। দলে খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।"
সূত্র: ডেইলি মিরর