সাম্বা থামিয়ে ক্রোয়েশিয়ার রূপকথা
কোন জায়গা থেকে শুরু করবেন? লিভাকোভিচের টাইব্রেকার বীরত্ব, লভ্রেন-গাভারদিওলদের বুক চিতানো রক্ষণ, লুকা মদরিচের ৩৭ বছর বয়সেও চিতার ক্ষিপ্রতায় ১২০ মিনিট দৌড়ানো অথবা ব্রুনো পেতকোভিচের ১১৭ মিনিটের সমতাসূচক গোল, ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার এই জয়কে চাইলে দেখতে পারেন উপরের যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকে।
যেভাবেই দেখুন না কেন, এই জয় পুরো ক্রোয়েশিয়ার জয়। এই জয় আরেকবার প্রমাণ করল, শুধু প্রতিভা বিচ্ছুরিত সৌন্দর্যই নয়, ফুটবল মাঝেমধ্যে শ্রমসাধ্য চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞারও পূজারি।
ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট নেইমার-রিচার্লিসন-ভিনিশিয়ুসদের নিয়ে গড়া ব্রাজিলের আক্রমণভাগকে নখদন্তহীন করে রাখলেন ক্রোয়েশিয়ার দুই সেন্টার ব্যাক, দেয়ান লভ্রেন এবং জসকো গাভারদিওল। যে কয়বার এই দুইজনকে পার হয়ে যেতে পারল ব্রাজিল, ঠেকে গেল লিভাকোভিচ দেয়ালে।
এরপর ৩০ মিনিট অতিরিক্ত খেলার প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে নেইমারের জাদুতে একবার মনোযোগ ভঙ্গই হল ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগের। অবশ্য নেইমারের মতো খেলোয়াড়কেই বা কতক্ষণ আটকে রাখা যায়!
তাতে কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি ক্রোয়াটরা, সেটা যে তাদের রক্তেই নেই! অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই তাই ব্রাজিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তারা।
বয়স যে তার কাছে নিতান্তই একটা সংখ্যা, সেটা আবারও দেখালেন লুকা মদরিচ। ৩৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার পুরো ম্যাচে যে কারো থেকে বেশি দৌড়েছেন, সেই অবস্থাতেও ১১৬ মিনিটে দুই ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়ের চাপের মধ্যে থেকে যেভাবে বল পাহারা দিয়ে বের করে এনে ঠান্ডা মাথায় মাঝামাঠে ছেড়ে দিলেন, সেখান থেকেই গোলের উৎস খুঁজে পায় ক্রোয়েশিয়া।
ব্রুনো পেতকোভিচ, বদলি নামার পর থেকেই ডি-বক্সের ভেতর ঘুরঘুর করছিলেন একটা সুযোগের আশায়। বারবার সতীর্থদের দেখাচ্ছিলেন তাকে একবার ভালো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য।
সেটি পেতকোভিচ পেলেন ১১৭ মিনিটে, আরেক বদলি খেলোয়াড় মিরোস্লাভ অরসিচের বাড়ানো বল ডি-বক্সের শুরুর প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ের এক স্পর্শে পাঠালেন অ্যালিসনের সীমানার বাইরে। ১-১!
টাইব্রেকারে গেল ম্যাচ, সেখানে জাপান ম্যাচের নায়ক লিভাকোভিচের আরেকবার ডানা মেলে দেওয়া জয়ের পথে এগিয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়াকে।
এবার নিয়ে তিনবার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠল ক্রোয়াটরা, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথমবার শেষ চারে উঠার পর টানা দুই বিশ্বকাপে এই কৃতিত্ব দেখাল তারা। যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হওয়ার কেবল ৩২ বছর হয়েছে দেশটির, এই অল্প সময়ে বিশ্ব ফুটবলে যা অর্জন করেছে ক্রোয়েশিয়া, তাতে কুর্নিশ করা ছাড়া উপায় নেই।