আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স: ফাইনালের মাহন্দ্রেক্ষণের প্রহর গুনছেন ভক্তরা
দোহায় এক স্মরণীয় বিশ্বকাপ ফাইনালের অপেক্ষায় মুহূর্ত গুনছেন ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনার ফুটবল ভক্তরা। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২২ এর শেষ ম্যাচ।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স চায় তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি নিজেদের কাছেই রাখতে। অন্যদিকে, দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাও তৃতীয়বারের মতো ট্রফি ছিনিয়ে নিতে আত্মবিশ্বাসী। দুই দলের বিশ্বকাপ জেতার ইতিহাসই সমান। বিবিসি অবলম্বনে।
১৯৯৮ সালে যখন ফ্রান্স প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ট্রফি ঘরে তোলে, তখন দলের অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান দলের কোচ দিদিয়ে দেশম। এরপর, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স।
এদিকে, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের আশা ও স্বপ্ন প্রায় পুরোটাই বর্তেছে লিওনেল মেসির কাঁধে। তর্কাতীতভাবে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার মেসির শেষ বিশ্বকাপ এটি। ভক্তদের আশা, চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায় নেবেন ৩৫ বছর বয়সী বিশ্বসেরা এই খেলোয়াড়।
বিশ্বকাপ জ্বরে বুয়েন্স আয়ার্স
ফাইনালে ওঠার পর পরই বিশ্বকাপ ঘরে তোলার প্রস্তুতিতে মেতে উঠেছে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বাজার-দোকান-বার কিংবা ক্লাব, সব জায়গায় সেজেছে পতাকা ও আর্জেন্টিনার জার্সিসহ ফুটবলের নানান প্রতীকে।
অর্থনৈতিকভাবে গভীর সংকটে থাকলেও ফুটবল আনন্দ উদযাপনে কোনো কমতি নেই আর্জেন্টিনায়। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিতে দেশটির হাজারও মানুষ কষ্টে থাকলেও তা ভুলে এখন সবার মনোযোগ মেসির শেষ বিশ্বকাপে। সমর্থকরা মনেপ্রাণে চান, জয়ের মুকুট যেনো শেষ বেলায় মেসির মাথায়ই ওঠে।
বুয়েন্স আয়ার্সের ক্লাব মালিক লুইস সারনি বিবিসিকে বলেন, "দেশটি যখন অর্থনৈতিক ধাক্কায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে, তখন এই বিশ্বকাপই আমাদের একত্র করেছে; বিশ্বের সেরা ফুটবলার আছে আমাদের, মেসি। তাকে সবাই পছন্দ করে, বিশ্বজুড়ে রয়েছে তার ভক্ত।"
আর্জেন্টাইন তরুণ মার্টিন রোজাস থাকেন ফ্রান্সে। তবে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি তিনি পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে বাড়ি ফিরে গেছেন।
"আমার স্বপ্ন, আমি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দেখবো; এটি মেসির শেষ বিশ্বকাপ, তার জন্য এটিই শেষ সুযোগ," যোগ করেন রোজাস।
কাউন্টডাউন শুরু প্যারিসে
বিশ্বকাপ ফাইনালের জ্বর পৌঁছে গেছে প্যারিসেও।
গত সাত বিশ্বকাপে এটি ফ্রান্সের চতুর্থ ফাইনাল। উচ্ছ্বসিত সমর্থকরা বিশ্বকাপে ফ্রান্সের পার্ফরমেন্স নিয়ে তুলে ধরেছেন নানান পরিসংখ্যান। বলছেন, সবশেষ ১০টি বিশ্বকাপ ম্যাচে কোনো লাতিন আমেরিকান দলের কাছে হারেনি ফ্রান্স।
সর্বশেষ পরাজয়টি ছিল ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার কাছে। তবে, এবারের ফাইনালে আর্জেন্টাইনদের হারাতে আত্মবিশ্বাসী ফরাসিরা।
বছরের শুরুতেই কিলিয়ান এমবাপ্পের দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ে বলেছিলেন, লাতিন ফুটবল ইউরোপের মতো অত 'উন্নত' নয়, কারণ সেখানে প্রতিযোগিতার স্তর এখন অনেক 'নিচে'।
লাতিন আমেরিকান দল হিসেবে সর্বশেষ ২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয় এবং ১৯৮৬ সালের পর থেকে আর্জেন্টিনা আর চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার বিষয়ে এ মন্তব্য করেছিলেন এমবাপ্পে।
গতবারের বিশ্বকাপে শেষ ১৬'র ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা। ৪-৩ গোলের ব্যবধানে সেই ম্যাচ জিতেছিল ফ্রান্স। এমবাপ্পে নিজেই দুই গোল করেছিলেন। ফলে আর্জেন্টিনাকে আরও একবার হারাতে প্রায় শতভাগ আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামছে ফরাসিরা।
এদিকে, তাদের আত্মবিশ্বাস আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং তার স্ত্রী ব্রিজিত ইতোমধ্যেই রউনা দিয়েছেন কাতারের উদ্দেশ্যে। ম্যাচ চলাকালীন তাদের সঙ্গে থাকবেন বিশ্বকাপের প্রথম নারী রেফারি স্টেফানি ফ্রেপোর্টসহ বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিদল।