বিশ্বকাপের পর এবার কোন ফুটবল?
বিশ্বকাপ তো শেষ। এতোদিন না হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, জার্মানি-স্পেন, ফ্রান্স-ইংল্যান্ড নিয়ে গলা ফাটিয়েছেন। এখন কী করবেন? বিশ্বকাপে যে খেলোয়াড়দের খেলা ভালো লেগেছে তাদের খেলা কোথায় দেখবেন? আবার চার বছর অপেক্ষা করবেন? না, সেটি করতে হবে না। আপনার জন্যই আছে ক্লাব ফুটবলের চটকদার মশলা।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপই যাদের দেখা প্রথম বিশ্বকাপ বা যারা বিশ্বকাপ ছাড়া ফুটবলের খুব একটা খোঁজ-খবর রাখেন না, তাদের জন্য নিজের প্রিয় খেলোয়াড়দের দেখার সুযোগ এখন একমাত্র ক্লাব ফুটবল। ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে চার বছর ক্লাব ফুটবলের মঞ্চেই খুঁজে পাবেন এমবাপ্পে-রিচার্লিসন, আলভারেজ-এনসো ফার্নান্দেজ, আমরাবাত-মুসিয়ালাদের।
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর ফুটবল কীভাবে এবং কোথায় দেখবেন এরকম প্রশ্ন অনেকের মনেই জেগেছে। সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের ভালো লেগেছে, কোথায় এবং কীভাবে দেখতে পাবো তাদের খেলা?
কাতার বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র উঠেছিল শেষ ষোলোতে। সেখানে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩-১ গোলে হেরে বিদায় নিলেও, গ্রুপ পর্বে তাদের খেলা নিয়ে প্রশংসা করেছেন অনেকে। তারুণ্যনির্ভর দলটি গ্রুপ পর্বে হারেনি কোনো ম্যাচ।
২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হবে যুক্তরাষ্ট্র। তার আগে কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স আশা জোগাবে তাদের। যদি যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের ভালো লেগে থাকে এবং তাদেরকে অনুসরণ করতে চান, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লিডস ইউনাইটেডের খেলা দেখা।
যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক, টাইলার অ্যাডামস এবং ব্র্যান্ডন অ্যারনসন খেলেন এই দলটিতে। এমনকি লিডসের কোচও একজন আমেরিকান, জেসে মার্শ্চ। যুক্তরাষ্ট্র দলের সবচেয়ে নজরকাড়া খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিকের খেলা দেখতে হলে অনুরসণ করতে হবে প্রিমিয়ার লিগেরই ক্লাব চেলসিকে।
এছাড়া জিও রেইনাকে পাবেন জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ডে, ম্যাককেনিকে পাবেন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্তাসে।
আমার লাতিন ফুটবল শিল্প ভালো লেগেছে, তাদের ঘরোয়া লিগে কোন দলের খেলা দেখব?
আপনার যদি লাতিন ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মে থাকে, নিয়মিত তাদের ফুটবল শৈলী দেখতে চান, তাহলে আপনাকে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বড় ক্লাবগুলোর খেলা অনুসরণ করতে হবে।
লাতিন আমেরিকান ফুটবল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নিজেদের মধ্যেও নিয়মিত টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে। কোপা লিবার্তোদোরেস যার মধ্যে অন্যতম। আর্জেন্টিনার বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে রিভারপ্লেট, বোকা জুনিয়র্স। ব্রাজিলের লিগে আধিপত্য বিস্তার করা দলের মধ্যে রয়েছে ফ্লামেঙ্গো এবং পালমেইরাস।
আমার ফ্রান্সকে পছন্দ হয়েছে। কীভাবে তাদের খেলোয়াড়দের খেলা দেখব?
টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পথে ফাইনালে উঠেও পারেনি ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার কাছে হারতে হয়েছে তাদের, কিন্তু অনেকের মন জয় করে নিয়েছেন ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। বিশেষ করে কিলিয়ান এমবাপ্পে, ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও যিনি পরাজিতের দলে ছিলেন।
এমবাপ্পে সহ আরো ফরাসি খেলোয়াড়দের অনুসরণ করতে হলে দেখতে হবে পিএসজির খেলা। সেখানে একই সাথে আপনি পাবেন এমবাপ্পে, নেইমার এবং মেসিকে! ফরাসি ক্লাবটিতে খেলেন মরক্কোর আশরাফ হাকিমিও।
এছাড়া অলিভিয়ের জিরু এবং থিও হার্নান্দেজকে পাবেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে। জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে পাবেন উপামেকানো, লুকাস হার্নান্দেজ এবং বেঞ্জামিন পাভার্দকে। অউরিলিয়েন চুয়ামেনি খেলেন স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে, ইব্রাহিমা কোনাতেকে পাবেন ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে।
আমার ইউরোপ এবং লাতিন ছাড়াও অন্য অঞ্চলের খেলোয়াড়দের ভালো লেগেছে। তাদেরকে কীভাবে অনুসরণ করব?
শুধু যে এমবাপ্পে, মেসি কিংবা নেইমারদেরই ভালো লাগবে তা কিন্তু নয়। আফ্রিকা এবং এশিয়ার কোনো খেলোয়াড়কেও ভালো লাগাটা স্বাভাবিক। যদি দেখতে চান তেমনই কয়েকজন তারকাকে, তাহলে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে নিচের তালিকাটি-
হাকিম জিয়েশ (মরক্কো)- চেলসি, ইংল্যান্ড
সোফিয়েন আমরাবাত (মরক্কো)- ফিওরেন্তিনা, ইতালি
ইয়াসিন বুনু এবং এন নেসইয়েরি (মরক্কো)- সেভিয়া, স্পেন
সন হিউং মিন (দক্ষিণ কোরিয়া)- টটেনহাম হটস্পার্স, ইংল্যান্ড
রিতসু দোয়ান (জাপান)- ফ্রেইবুর্গ, জার্মানি
তাকুমা আসানো (জাপান)- বোচুম
মোহামেদ কুদুস (ঘানা)- আয়াক্স, নেদারল্যান্ডস
ইসমালিয়া সার (সেনেগাল)- ওয়াটফোর্ড, ইংল্যান্ড
এছাড়াও বিশ্বকাপে আলোচনায় থাকা হুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি, ইংল্যান্ড), এনসো ফার্নান্দেজ (বেনফিকা, পর্তুগাল), মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ, জার্মানি) রিচার্লিসনদেরকে (টটেনহ্যাম হটস্পার্স) দেখতে পাবেন বিভিন্ন ক্লাবে।
বিশ্বকাপ ফুটবল যদি আপনার মনে দাগ কেটে থাকে এবং এখন থেকে নিয়মিত ফুটবলের দর্শক হতে চান, আপনার জন্য উত্তেজনার পসরা নিয়ে বসে আছে ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্সের লিগগুলো। ক্লাব ফুটবলের সবথেকে মর্যাদাপূর্ণ আসর, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তো আছেই।
কাতার বিশ্বকাপে আপনার নজরে পড়া খেলোয়াড়দেরকে খুঁজে পাবেন এই লিগ এবং দেশগুলোতে। যদি তাদের অনুসরণ করতে চান, তাহলে তাদেরকে আরেকবার দেখতে চার বছর অপেক্ষা করতে হবে না আপনার।