বিদায় ঘণ্টা বেজে যাচ্ছে ডমিঙ্গোর!
বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েই বড় হার দেখেছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। ঘরের মাঠে টেস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২৪ রানের অস্বস্তির হারে যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচের। এরপর থেকে তিক্ত সব অভিজ্ঞতা হয়েছে ডমিঙ্গোর। দলকে ঠিক কক্ষপথে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ঘরের মাঠ কিংবা বিদেশের মাটি; সবখানেই দল ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থেকে গেছে।
কোচ হিসেবে তার সাফল্য বলতে ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি জয়, ২০২০ সালের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় এবং সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের 'দ্বিতীয় সারির' দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। এর বাইরে গত দুই বছরে পাকিস্তান, ভারত ও সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে নূন্যতম লড়াইও করতে পারেনি বাংলাদেশ।
লাগাতার ব্যর্থতায় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে যতোটা সমালোচনা হচ্ছে, ডমিঙ্গোকে নিয়ে তার চেয়েও বেশি আলোচেনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)।
বিসিবির কর্তারা এখনই সিদ্ধান্তে না পৌঁছালেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে ডমিঙ্গোর ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে। চাকরি বাঁচাতে আর বেশি সুযোগ দেওয়া হবে না প্রোটিয়া এই কোচকে। শ্রীলঙ্কায় দুটি টেস্ট ও ঘরের মাটিতে লঙ্কানদের বিপক্ষেই ওয়ানডে সিরিজের ফলের ওপর নির্ভর করছে ডমিঙ্গোর টিকে থাকা।
ডমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে তেমন উন্নতি নেই, আছে রাজ্যের হতাশা। স্বভাবতই কোচের কাজে সন্তুষ্ট নন বিসিবির নীতি-নির্ধারকরা। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খান তো বলেই দিয়েছেন, তার কাজে সন্তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই।
বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়কের কথায় স্পষ্ট, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি সিরিজে উন্নতির ছাপ না রাখতে পারলে ডমিঙ্গোর ব্যাপার সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি। তিনি বলেন, 'কোচের কাজে অবশ্যই আমরা সন্তুষ্ট নই। যদিও তার ব্যাপারে আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাবনা নেই বোর্ডের। সামনে দুটি সিরিজ আছে। এই দুটি সিরিজের পর তার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হবে।'
দুটি টেস্ট খেলতে আগামী ১২ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। এরপর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে লঙ্কানরা। এই দুটি সিরিজ শেষে ডমিঙ্গোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হবে। এরপর তার ব্যাপারে নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
অবশ্য কেবল ডমিঙ্গোর পারফরম্যান্সই নয়, অন্য কোচিং স্টাফদের কাজের মূল্যায়নও করবে বিসিবি। মনপুত না হলে তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আকরাম খান বলেন, 'নতুন বছরের চুক্তি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এ ব্যাপারে দেখার আছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি সিরিজের পারফরম্যান্স দেখতে চাই আমরা।'
যদিও কোচকে ভালো সার্টিফিকেটই দিচ্ছেন বিসিবির আরেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। তার মতে, কোচ পরিকল্পনা দেবেন, সেটা মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে ক্রিকেটার। এখানে সমন্বয়ের ব্যাপার আছে। ঠিক কী কারণে সমন্বয় হচ্ছে, তা জানা নেই খালেদ মাহমুদের।
তিনি বলেন, 'আমি তো ব্যক্তিগতভাবে জানি ভালো কোচ। কাছ থেকে আমি যখন দেখব, তখন আরও ভালো বোঝা যাবে। অবশ্যই আমরা চিন্তা ভাবনা করেই ডমিঙ্গোকে নিয়েছিলাম। সে ভালো কোচ অবশ্যই। পারফরম্যান্স তো কোচের ওপর নির্ভর করবে না। এটা সম্পূরক ব্যাপার, সবাইকে করতে হবে। খেলবে খেলোয়াড়রা, কোচরা না।'
'কোচ তো হাজার পরিকল্পনা দিতে পারে। মাঠে যদি বাস্তবায়ন করতে না পারেন, তাহলে ওই পরিকল্পনা দিয়ে লাভ কী? কোচ পরিকল্পনা দিতে পারে, ট্রেনিং দিতে পারে, খেলোয়াড়দের ভালো খেলতে হবে। আবার খেলোয়াড়রা ভালো খেলছে কিন্তু পরিকল্পনা ভালো হচ্ছে না, তাহলে আবার হবে না। এটা আসলে সম্পূরক ব্যাপার। আমার কাছে মনে হয় এখানে সমন্বয়ের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জানি না কেন এমন হচ্ছে, বারবার কেন হচ্ছে।' যোগ করেন খালেদ মাহমুদ।