বিশ্বকাপজয়ী দলের ৮ জনই দিনাজপুর বিকেএসপির
আকবর আলীকে দেখলে যে কেউ বলবে, ছেলেটি কম কথার মানুষ। এমনকি সতীর্থ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও এমনটি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বিশ্বজয়ী এই অধিনায়ক নাকি বেশ চাপা স্বভাবের। অথচ ছোট বেলায় মাইক্রোফোন দেখলে কথা বলার জন্য সবার আগে ছুটে যেতেন আকবর। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) দিনাজপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের শিক্ষকরা প্রিয় ছাত্রকে নিয়ে এমনটাই বললেন।
বাংলাদেশ যুবাদের বিশ্ব জয়ে সব জায়গার মতো বিকেএসপির দিনাজপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রেও বইছে আনন্দের জোয়ার। ২০২০ যুব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে ৮ জনই ক্রিকেটের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এই কেন্দ্র থেকে। প্রিয় ছাত্ররা বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পর এখানকার শিক্ষকরা স্মৃতির পাতা উল্টে দেখছেন আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন!
আকবর আলী, পারভেজ হোসান ইমন, প্রান্তিক নওরোজ নাবিল, শাহীন আলম, হাসান মুরাদ, আশরাফুল ইসলাম সিয়াম, শামীম পাটোয়ারী ও তানজিম হাসান সাকিব- এই ৮ ক্রিকেটার ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিকেএসপির দিনাজপুর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই অধ্যয়ন করেছেন। কিন্তু এই কেন্দ্রে সেসময় এসএসসি পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা না থাকায় ছাড়পত্র নিয়ে ৭ জন ঢাকায় ভর্তি হন। শুধু শাহীন আলম এই কেন্দ্র থেকেই ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করেন।
রংপুরের মোস্তফা আলী ও সাহিদা বেগমের ছেলে আকবর আলী (ক্যাডেট নং-৬৪) এবং কক্সবাজারের নাজিম উদ্দিন ও রাশেদা বেগমের ছেলে হাসান মুরাদ (ক্যাডেট নং-৬৬) এই কেন্দ্রে ভর্তি হন ২০১২ সালে, বের হয়ে যান ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। চাঁদপুরের আব্দুল হামিদ ও বীণা বেগমের ছেলে শামীম পাটোয়ারী (ক্যাডেট নং-৭১৩) ভর্তি হন ২০১৫ সালে। পিরোজপুরের বাদশা নওরোজ ও ডলি আক্তারের ছেলে প্রান্তিক নওরোজ নাবিল (ক্যাডেট নং-৭১৫) ভর্তি হন ২০১৫ সালে, বের হন ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। সিলেটের গৌছআলী ও সেলিনা পারভীনের ছেলে তানজিম হাসান সাকিব (ক্যাডেট নং-৭৬১) ২০১৬ সালে ভর্তি হয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বের হন।
এ ছাড়া কুড়িগ্রামের শাহাদাত আলী ও সাটিনা বেগমের ছেলে শাহীন আলম (ক্যাডেট নং-৭৯৬) ভর্তি হন ২০১৭ সালে, বের হন ২০১৯ সালের মার্চে। চট্টগ্রামের সিরাজ বাবুল ও কুসুম আক্তারের ছেলে পারভেজ হোসেন ইমন (ক্যাডেট নং-৬৬৩) এই কেন্দ্রে ভর্তি হন ২০১৩ সালে, বের হন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ঢাকার মাহবুবুল করিম ও আমেনা খাতুনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সিয়াম (ক্যাডেট নং-৭৪৫) ভর্তি হন ২০১৬ সালে; ২০১৯ সালের মার্চে কেন্দ্রটি থেকে বের হন তিনি।
দিনাজপুর বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে এতজন ক্রিকেটার যুব বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ায় বেজায় খুশি এখানকার শিক্ষক ও ক্রিকেট কোচরা। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া ক্রিকেটারদের জীবনের প্রথমার্ধ্বে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছেন বলে তারা গর্বিতও।
আঞ্চলিক কেন্দ্রটির উপ-পরিচালক আখিনুর জামান বলেন, ‘তারা এখান থেকে অনেক কিছু শিখে গেছে। এখানে বেসিক ডেভেলপমেন্টের কাজ করেছে। এখান থেকে ঢাকায় গিয়ে তারা পরবর্তী প্রশিক্ষণ নিয়ে যুব বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে নৈপুণ্যের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে। এজন্য আমরা সত্যিই গর্বিত।’
এখানকার প্রধান শিক্ষক ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আকবর আলীসহ ৮ ক্রিকেটার এখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম করেছে। পরে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আকবর আলীসহ কয়েকজন ঢাকায় চলে যায়। এখানে থাকা অবস্থায় আকবরের পারফরমেন্স ভালো ছিল। সব সময় নিজেকে সামনের দিকে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। খেলাপাগল ছেলে সে। এখানে থাকার সময় মাইক্রোফোন হাতে পেলেই সবার আগে গিয়ে কথা বলত। শেখার প্রতি প্রবল কৌতূহল ও আগ্রহ ছিল তার।’
কেন্দ্রটির কোচ ইফরান জাহান সোহাগ বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অংশ নেওয়া আমাদের ৮ সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ইমন ও হাসান মুরাদসহ ৪-৫ জন ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামে ছিল। বিকেএসপিকে তারা গর্বিত করেছে।’