বিশ্বজয়ী কোচদের বদলে ফেলল বিসিবি
দীর্ঘ এক সফর। যে সফরে অনেক পরিকল্পনা, চেষ্টা আর পরিশ্রমের ফসল হিসেবে মিলেছে বিশ্বসেরার মুকুট। আকবর আলীদের হাতে উঠেছে বিশ্বকাপের শিরোপা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বজয়ের মিশনে যুব দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন কোচিং স্টাফরাও।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর যুব ক্রিকেটারদের পাশাপাশি কোচিং স্টাফদের স্তুতিতেও মেতে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দলের প্রতি তাদের অবদানের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন বিসিবির কর্তারা। যদিও সেই কোচিং স্টাফ বদলে যেতে সময় লাগলো না।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচিং স্টাফে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে বিসিবি। বিশ্বজয়ী দুই কোচকে সরিয়ে নতুন দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগে ব্যাটিং কোচ না থাকলেও এই পদটি যোগ করা হয়েছে।
আকবরদের দলের বোলিং কোচ ছিলেন মাহবুব আলী জাকি। তার জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক পেসার তালহা জুবায়ের। ফিল্ডিং কোচ ছিলেন ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স। তাকে সরিয়ে যুবাদের ফিল্ডিং শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ সেলিমকে।
এরআগে যুব দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা মেহরাব হোসেন অপিকে দেওয়া হয়েছে ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব। তবে প্রধান কোচ হিসেবে আছেন নাভিদ নওয়াজই। বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কান এই কোচের সঙ্গে নতুন চুক্তি করে বিসিবি। ট্রেইনার হিসেবে রিচার্ড স্টনিয়ারকে আবারও বেছে নিয়েছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিশ্বজয়ের পথটা চেনা হয়ে গেছে, ২০২২ যুব বিশ্বকাপেও শক্তিশালী দল পাঠাতে চায় বিসিবি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) চার সপ্তাহের আবাসিক ক্যাস্প আয়োজন করেছে বিসিবি। ক্যাম্পের জন্য সোমবার ৪৫ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করা হয়েছে। এই দলটি নিয়ে যাত্রা শুরু হবে নতুন কোচিং স্টাফদের।
দারুণ সফল হওয়ার পরও কোচিং স্টাফে কেন রদবদল? এমন প্রশ্নে বিসিবির গেম ডেভেলপমন্টের ম্যানেজার আবু ইমাম মোহাম্মদ কায়সার জানালেন, সামর্থ্যবান তরুণ কোচদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দেশি মানসম্মত কোচিং স্টাফের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকেই এমন উদ্যোগ। তবে পুরনো কোচরা যে দারুণ কাজ করেছেন, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই বিসিবির।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মোহাম্মদ কায়সার বলেন, 'ডিকেন্স ভাই এবং জাকি ভাই অসাধারণ কাজ করেছেন যুব দলের সঙ্গে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই যুব দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে আমাদের যে তরুণ কোচিং স্টাফ আছেন, তাদেরকেও আমরা আস্তে আস্তে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি। তারাও যেন নিজেদের উন্নত করতে পারেন। আশা করছি এটাও আমাদের ভালো কাজে লাগবে।'
মানসম্মত কোচিং স্টাফ তৈরি করতে যুব দলকে ভালো প্ল্যাটফর্ম মনে করে বিসিবি। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের মানসম্মত কোচিং স্টাফ বাড়ানোর জন্য এভাবে ভাবছি। একটা সুযোগ তো দিতেই হবে, সেখানে নতুনরাও থাকবেন। সেটার অংশ হিসেবে অন্যান্য কোচদের উন্নত করতে আমাদের এই প্রক্রিয়াটা। প্রধান কোচ, ট্রেইনার আগের দুজনই আছেন। তাদের সঙ্গে নতুন চুক্তি হয়েছে।'
নতুনদের সুযোগ দিতে গিয়ে পুরনোদের ভুলে যেতে চায় না বিসিবি। ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, সালাউদ্দিন জাকিদের অন্য দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চায় বিসিবি। মোহাম্মদ কায়সার বলেন, 'জাকি-ডিকেন্স ভাইরা তো খুব ভালো কাজ করেছেন। উনাদের আমরা অন্য কোথাও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারব। তারা অনেক অভিজ্ঞ, তাদের সেই অভিজ্ঞতা আমরা অন্য দলেও কাজে লাগাতে পারব।'
সামর্থ্যবান তরুণদের সুযোগ দেয়ার পক্ষে বিসিবি। মোহাম্মদ কায়সার বলেন, 'আমাদের অনেক সামর্থ্যবান তরুণ কোচ আছেন। ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা তরুণ কোচদের সুযোগ দিচ্ছি, দলের সঙ্গে যুক্ত করছি। আমরা উনাদের উপরও বিশ্বাস রাখছি যে, উনারাও যথেষ্ট ভালো কাজ করবেন। কারণ তাদের সেই সামর্থ্য আছে। কোচ হিসেবে প্রকাশ পেয়ে গেলে আশা করি তারাও ভালো করবেন।'
ব্যাটিং কোচ হিসেবে মেহরাব হোসেন অপিকে নিয়োগ দেওয়া হলেও এটাকে অতিরিক্ত পদ হিসেবে দেখছে বিসিবি। মোহাম্মদ কায়সারের ভাষায়, 'আমরা চাই সর্বোচ্চ সমর্থন দিতে। খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল যতো সাপোর্ট আছে, আমরা নিশ্চিত করছি। একজনকে অতিরিক্ত হিসেবে রাখা হয়েছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিদেশি কোচদের আসার ব্যাপারটা এখনও নিশ্চিত নয়। খেলোয়াড়রা যেন কোনো ধরনের সাপোর্ট কম না পায়, সেই চিন্তা থেকেই এমন করা।'
যুব দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে আগামী ২৩ আগস্ট থেকে বিকেএসপিতে শুরু হবে স্কিল ক্যাস্প। চলবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরআগে ফিটনেস ট্রেনিং সেশন করে করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে যুব ক্রিকেটারদের ক্যাম্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগামী ১৫ থেকে ১৯ আগস্টের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করা হবে সব ক্রিকেটারের।