সাগরপাড়ে রফিক ঝড়, থাকলো ঘূর্ণিও
'রহস্য কী'- ম্যাচের পর সাংবাদিকদের মনে হলো মোহাম্মদ রফিকের কাছে এটাই জানতে চাওয়া উচিত। যে ক্রিকেটার খেলা ছেড়েছেন ১৩ বছর আগে, এখনও তার হাতে এমন জাদু কীভাবে! কৌতুহলী না হয়ে উপায় কই! সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে কক্সবাজারে আয়োজন করা লেজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেন সেই দুর্বার রফিকেরই দেখা মিলল।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কিছুক্ষণের ব্যবধানে দুটি ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশের সাবেক এই ক্রিকেটার। একমি স্ট্রাইকার্সের হয়ে দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন এই বাঁহাতি, বল হাতে দেখিয়েছেন স্পিন ঘূর্ণি। জাতীয় দলের এক সময়ের এই প্রাণ ভোমরা দুই ম্যাচে ৩০ বলে করেছেন ৫১ রান, নিয়েছেন ৩ উইকেট।
প্রথম ম্যাচে বল হাতে ৫০ বছর বয়সী রফিক মনে করিয়ে দিয়েছেন তার সোনালী সময়ের কথাই। পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করা বাঁহাতি এই স্পিনার সাবেক ক্রিকেটারদের মিলন মেলায়ও সবার চেয়ে ভিন্ন, এখানেও তিনি অনন্য। একমি স্ট্রাইকার্সের হয়ে প্রথম ম্যাচে ২২ বলে মাত্র ১০ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি।
এরআগে ব্যাট হাতে তার সেই চিরচেনা শট খেলেছেন রফিক। আকাশে বল ভাসিয়ে শেখ কামাল স্টেডিয়ামের ছোট্ট সীমানা ছাড়িয়ে ফেলেছেন ঝাউবনের পাশে। ঝাউবন পেরেলোই সাগর, যেখানে সব সময়ই থাকে উত্তাল ঢেউ। রফিকও যেন সেই ঢেউয়ে তাল মেলালেন, ছন্দে ছন্দে হাঁকিয়ে গেলেন চোখ ধাঁধানো দারুণ কিছু ছক্কা।
লেজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটি হচ্ছে ভিন্ন ফরম্যাটে। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আয়োজন করা হয়েছে ১০ ওভার ১০ বলের খেলা (একটি ওভার ১০ বলের)। ৭০ বলের ম্যাচে কীভাবে ব্যাট চালাতে হবে, তা রফিককে নিশ্চয়ই বলে দিতে হয়নি। প্রথম দুই-একটি বল দেখলেন, এরপর উঁচিয়ে তুলে মারা শুরু। ১৩ বলে ৩ ছক্কায় ২২ রানের ঝড়ো ইনিংস।
দ্বিতীয় ম্যাচেও তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা। এবার ইনিংসটি আরও একটু বড় হলো, তবে কমলো ছক্কার সংখ্যা। ১৭ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় এই ইনিংসটি ২৯ রানের। বল হাতে নিলেন এক উইকেট। দুই ম্যাচেই জিতেছে রফিকের দল, প্রথম ম্যাচে তিনি ম্যাচ সেরা। এমন রফিককে দেখে তারই কোনো এক সতীর্থ বলে উঠলেন, 'কী রে তোর কী বয়স বাড়ে না?' মুচকি হাসলেন রফিক, তবে কোনো উত্তর দিলেন না।'
একইভাবে ম্যাচের পর রহস্য নিয়ে বেশি কিছু বললেন না বাংলাদেশের হয়ে ৩৩ টেস্ট, ১২৫ ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলা রফিক, 'রহস্যের কিছু নেই। এখানে সবার সাথে খেলছি। তাই জানি কার কী দুর্বলতা। আমি কী করি ওরা জানে, ওরা কী করে আমি জানি। প্রতি বছর এখানে যে একটা মিলন মেলা হয়, সেটাই কিন্তু বড় পাওয়া।'
সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল নামে একটি আসর আয়োজন করা হয় ২০১৭ সালে। পরের দুই বছরও হয় আসরটি। এবার নাম বদলেছে, খেলাও হচ্ছে ভিন্ন ফরম্যাটে। তবে সাবেকদের মিলন মেলা একই রকম আছে। এই আসরে সবাই একসঙ্গে হতে পারেন বলে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই সাবেক ক্রিকেটারদের।
রফিক যেমন বললেন, 'আমরা এর আগে দুই বছর খেলেছি। তবে এবারেরটা একদম ভিন্ন খেলা। তারপরেও হলো, ভালো লাগছে। বছরে একটা সময়ে আমরা সবাই এক সঙ্গে হই, এটা দারুণ ব্যাপার। ব্যস্ততার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা-কথা হয় না। এই টুর্নামেন্টটি সেসব ভুলিয়ে দেয়। এটা আমাদের দারুণ এক মিলন মেলা।'
আসরটি সরাসরি সম্প্রচার করছে বেসরকারি টিভি চ্যানেল টি-স্পোর্টস। ২০০৮ সালের পর আবারও টিভি পর্দায় রফিককে দেখতে পাচ্ছেন দর্শকরা। সাবেক এই ক্রিকেটার বলছেন, সব সময়ই দর্শকদের পাশে পেয়েছেন তিনি, 'যারা আমার দর্শক, দেশপ্রেমিক আছেন, ক্রিকেট পছন্দ করেন, তারা সব সময়ই আমাকে পছন্দ করেন। আমি চাই, সব সময় মাঠে থাকতে।'
৭০ বলের এই টুর্নামেন্টটির প্রথম দিনে মোট চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুটি ম্যাচে জিতেছে রফিক-পাইলটদের দল একমি স্ট্রাইকার্স। তারা হারিয়েছে জেমকম টাইটান্স ও বৈশাখী বেঙ্গলসকে। অপর দুই ম্যাচে জা'দুবে স্টার্সকে বৈশাখী বেঙ্গলস এবং এক্সপো রেইডার্সকে হারিয়েছে নারায়ণগঞ্জ ওয়ারিওর্স। সাবেকদের ক্রিকেটারদের এই টুর্নামেন্ট তিনদিনের। ২০ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে আসরটির।