সিনেমার ম্যারাডোনা
ফুটবলের মহানায়ক দিয়াগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে ফুটবল দুনিয়া। বুধবার ৬০ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই মহাবিস্ময়কর ফুটবলারকে ঘিরে নির্মিত হওয়া চলচ্চিত্রের সংখ্যাও কম নয়। সেখান থেকে নির্বাচিত কয়েকটির খোঁজ নিয়ে এ আয়োজন:
ম্যারাডোনা বাই কুস্তুরিৎসা
ম্যারাডোনাকে নিয়ে যত ডকুমেন্টারি হয়েছে, তার মধ্যে দুইবারের কান ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালের সর্বোচ্চ পদক পাম দি'অরজয়ী সার্বিয়ান চলচ্চিত্রকার এমির কুস্তুরিৎসার ডকুমেন্টারিটি সব বিবেচনাতেই অনেক বেশি ঋদ্ধ। 'ম্যারাডোনা বাই কুস্তুরিৎসা' নামের এই ডকুমেন্টারির প্রিমিয়ার হয় ২০০৮ সালের কান ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে।
৯০ মিনিট সময়ব্যাপ্তির এই ডকুমেন্টারিতে ম্যারাডোনার ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কের পরত পেরিয়ে অন্তস্তলের গভীরে হানা দিয়েছেন কুস্তুরিৎসা। আর চিরচেনা ম্যারাডোনা আবির্ভূত হয়েছেন যেন এ শতাব্দীর একজন প্রধান দার্শনিক ও চিন্তাবিদ হিসেবে। তার বৈপ্লবিক জীবনদর্শন সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে হোম-ভিডিও, বিরল ফুটেজ, অ্যানিমেশন, গান ও সাক্ষাৎকারের দারুণ সমারোহে।
দিয়াগো ম্যারাডোনা
ব্রিটিশ চলচ্চিত্রকার আসিফ কাপাডিয়ার বানানো এই ডকুমেন্টারি মুক্তি পেয়েছে গত বছর। ১৩০ মিনিট সময়ব্যাপ্তির ডকুমেন্টারিটিতেও দেখা মিলেছে ফুটবল মহাজাদুকরের কিছু বিরল ফুটেজের। এটিরও প্রিমিয়ার হয়েছে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।
মূলত ১৯৮৪ সালে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা থেকে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে ম্যারাডোনার নাম লেখানো এবং পরিণামে ক্লাবটিকে সিরি-এ ও উয়েফা কাপ (বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস লীগ) জেতানো ঘিরে আসিফের 'দিয়াগো ম্যারাডোনা'।
ম্যারাডোনা, দ্য হ্যান্ড অব গড
এটি কোনো ডকুমেন্টারি নয়; বরং বায়োপিক। দিয়াগোর জীবনের নানা গল্প নিয়ে এই সিনেমা বানিয়েছেন ইতালিয়ান চলচ্চিত্রকার মার্কো রিসি। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ইতালিয়ান সিনেমাটির মূল নাম 'Maradona - La mano de Dios'; তবে আন্তর্জাতিক শিরোনাম 'ম্যারাডোনা, দ্য হ্যান্ড অব গড'।
আর্জেন্টাইন ফুটবলারের শৈশব থেকে শুরু করে বর্ণিল জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ফুটে উঠেছে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের এই সিনেমায়। এখানে শিশু ম্যারাডোনা চরিত্রে গঞ্জালো আলার্কন, কৈশোর চরিত্রে আবেল আয়ালা ও যুবক রূপে মার্কো লিওনার্দি অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে, ম্যারাডোনার স্ত্রী ক্লাওদিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর্জেন্টাইন অভিনেত্রী জুলিয়েতা দিয়াজ।
লাভিং ম্যারাডোনা
মাদকের বাড়াবাড়ি, 'বেফাঁস' কথাবার্তা, উদ্ভট কাণ্ডকীর্তিসহ নানা ঘটনায় আজীবন তুমুল আলোচিত ছিলেন তিনি। স্বদেশি মহাবিপ্লবী চে গেভারা, কিউবা বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রো ও লাতিন আমেরিকান বিভিন্ন দেশের বামপন্থী নেতাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ভালোবাসা ও সমর্থন। বিপরীতে, আমেরিকার ইরাক আক্রমণসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন তিনি। সব মিলিয়ে স্বয়ং ফুটবল খেলাটিরও সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের নাম ম্যারাডোনা। হোন আপনি যেকোনো দলের সমর্থক, তাকে যেন ভালো না বেসে পারা যায় না!
সেই ভালোবাসা প্রকাশের জায়গা থেকেই তার স্বদেশি চলচ্চিত্রকার হাভিয়ের ভাসকেস বানিয়েছেন 'লাভিং ম্যারাডোনা'; মূল শিরোনাম, Amando a Maradona। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সময়ব্যাপ্তির এই আর্জেন্টাইন ডকুমেন্টারিতে ম্যারাডোনা ছাড়াও কথা বলেছেন তার স্বদেশি ব্রডকাস্টার আলেহান্দ্রো দলিনা, গায়ক চার্লি গার্সিয়া, আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুলিও গ্রনডোনা প্রমুখ।