১৫ বছর পর মিললো দ্বিতীয় জয়
অন্য প্রতিপক্ষ তো বটেই, জিম্বাবুয়ের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসকেও হাল্কা করে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। সাকিব আল হাসান জানিয়েছিলেন, এই দুই প্রতিপক্ষকে নিয়ে স্বস্তিতে থাকার ব্যাপারটি গণমাধ্যমের সৃষ্টি। প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেওয়া ডাচদের নিয়েও অস্বস্তি ছিল বাংলাদেশের। সেটা বাড়ে ব্যাটিংয়ের পর, চরম হতাশার ব্যাটিংয়ে মেলে সামান্য পুঁজি।
যদিও বোলিংয়ের কারণে এটাই শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হলো। ম্যাচসেরা তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিুজর রহমানদের দারুণ বোলিংয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হলো সাকিব আল হাসানের দলের। সোমবার হোবার্টে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যবধান কম হলেও সহজেই জিতেছে বাংলাদেশ। ডাচরা কখনই জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি। এই জয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হলো বাংলাদেশের। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর লম্বা সময়েও মূল পর্বে আর জয় পায়নি তারা। অবশেষে মূল পর্বে আরেকটি জয়ের দেখা মিললো।
প্রতিপক্ষ তুলনামূলক দুর্বল হলেও টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে হতাশার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ১৪৪ রান তোলে তারা। আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছাড়া কেউ-ই টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেননি। আফিফ ছাড়া কেউ-ই ৩০ রানের গন্ডি পেরোতে পারেননি। ছোট সংগ্রহের চেয়েও বেশি হতাশার ছিল ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরন। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন।
লক্ষ্য ছোট হলেও বাংলাদেশের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানদের। তাসকিন, হাসান, মুস্তাফিজদের দাপটের সামনে কলিন অ্যাকারম্যান ছাড়া কেউ-ই ডাচদের হয়ে ব্যাট চালাতে পারেননি। অ্যাকারম্যান ছাড়া আর একজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস ২০ ওভারে ১৩৫ রানে অলআউট হয়। ডাচদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করা তাসকিন।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা নেদারল্যান্ডসকে শুরুতেই দিক ভুলিয়ে দেন তাসকিন। ইনিংসের প্রথম দুই বলেই উইকেট তুলে নেন ডানহাতি এই পেসার। দলটির বিপদ আরও বাড়ে চতুর্থ ওভারে। রান আউট হয়ে ফেরেন ম্যাক্স ও'দাউদ। ১৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে ওঠা ডাচদের হতাশার সাগরে ডুবতে হয় এই ওভারেই। নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ এক থ্রোতে টম কুপারকে রান আউট করেন নুরুল হাসান সোহান।
জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া দলের হাল ধরেন অ্যাকারম্যান। যদিও অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বেজেই গেছে। কেবল ১৬ রান করা অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন। একাই লড়া অ্যাকারম্যান ৪৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন।
আগুনে বোলিং করা তাসকিন ৪ ওভারে ২৪ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। মুস্তাফিজ ও সাকিবের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে ৪ উইকেট নিলেন তিনি। কাঁপিয়েছেন হাসান মাহমুদও। তরুণ এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে নেন ২টি উইকেট। এ ছাড়া সাকিব ও সৌম্য একটি করে উইকেট নেন। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ২০ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন।
এর আগে ব্যাটিং করেত নেমে বাংলাদেশকে ভালোই শুরু এনে দেন দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। উদ্বোধনী জুটিতে ৫.১ ওভারে ৪৩ রান যোগ করেন এ দুজন। যা বাংলাদেশের জন্য এক প্রকার স্বস্তিই। কারণ টি-টোয়েন্টিতে ৩০ ইনিংস পর বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির রান ৪০ ছাড়ালো।
ভালো শুরুর স্বস্তি মিলিয়ে যেতে অবশ্য সময় লাগেনি। উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই শুরু হয়ে যায় আসা যাওয়ার মিছিল। সৌম্যর বিদায়ে হতাশার পর্বের শুরু। তুলে মারতে গিয়ে মিস হিটে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ১৪ বলে ১৪ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার। পরের ওভারে বিদায় নেন শান্ত। ২০ বলে ৪টি চারে ২৫ রান করা শান্তও মিস হিটে ক্যাচ তুলে আউট হন।
ধীর-স্থির শুরু করা লিটন কুমার দাসের আউটের ধরন আরও হতাশার। দুই ওপেনারের মতো তিনিও মিস শটে ক্যাচ তুলে আউট হন, করেন ১১ বলে ৯ রান। পরের ওভারেই বড় ধাক্কাটি আসে বাংলাদেশের ইনিংসে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দেন নেদারল্যান্ডসের ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার শারিজ আহমেদ। ফেরার আগে ৯ বলে ৭ রান করেন সাকিব।
ইয়াসির আলী রাব্বিও টিকতে পারেননি। ফুটওয়ার্কের দীনতায় ভেঙে যায় তার স্টাম্প। ৫ বলে ৩ রান করে পল ফন মিকিরেনের বলে বোল্ড হন তিনি। বিপদে পড়া দলের হাল ধরেন আফিফ ও নুরুল হাসান সোহান। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। এ সময়ে সোহান দেখেশুনে খেললেও আফিফ দ্রুত ব্যাট চালান। তার ব্যাটেই এগোতে থাকে বাংলাদেশ।
দলীয় ১২০ রানে ভাঙে এই জুটি, ১৮ বলে ১৩ রান করে আউট হন সোহান। এই ওভারে থামেন আফিফও। ফেরার আগে ২৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ইনিংস সেরা ৩৮ রান করেন তিনি। শেষ দিকে অল্প সময়ের জন্য ঝড় তোলেন মোসাদ্দেক। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১২ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ২০ রান করেন। নেদারল্যান্ডসের মিকেরেন ও বাস ডি লেডে ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান ফ্রেড ক্লাসেন টিম প্রিঙ্গেল, শারিজ আহমেদ ও লগান ফন বিক।