ব্যতিক্রমী নকশা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, কাতার বিশ্বকাপের চোখ ধাঁধানো আট স্টেডিয়াম!
আর মাত্র চার দিন, তারপরেই কাতারে শুরু হবে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২। যে দেশে ফুটবলের তেমন কোনো অবকাঠামোই ছিল না, তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে একের পর এক চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম বানিয়েছে শুধুমাত্র বিশ্বকাপকে উপলক্ষ্য করে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির ইতিহাসে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা না থাকলেও, আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বকাপকে জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলার চেষ্টায় কোনো কমতি রাখেনি কাতার।
কাতারের আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো। দুই প্রান্তের দু'টি স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ দূরত্বও থাকবে ৫৫ কিলোমিটার। ফলে কোনো দর্শক একই দিনে একাধিক ম্যাচ দেখতে চাইলেও তার কোনো সমস্যা হবে না। মেট্রো, ট্রাম, বাসসহ একাধিক বিকল্প থাকবে হাতের কাছে।
কাতারের প্রতিটি স্টেডিয়ামেই সোলার প্যানেল ফার্ম থাকবে। থাকছে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে খেলা হলেও কাতারে গরম থাকবে। ফুটবলার এবং দর্শকদের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। বিশ্বকাপের জন্য কাতারের আটটি স্টেডিয়ামের সাজসজ্জা কেমন হয়েছে, চলুন দেখে নেওয়া যাক!
লুসাইল স্টেডিয়াম
উদ্বোধনী ম্যাচ এবং ফাইনাল-সহ মোট ১০টি খেলা হবে এখানে। দর্শকদের জন্য রয়েছে ৮০ হাজার আসন। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরি করে এবছরই এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়েছে। ঝাঁ চকচকে এই স্টেডিয়ামে রয়েছে অসংখ্যা সুযোগ-সুবিধা। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, বিশ্বকাপের পরেই স্টেডিয়ামের সব আসন বিক্রি করে দেওয়া হবে এবং স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হবে। কারণ লুসাইলে আর নতুন স্টেডিয়াম দরকার নেই বলে জানিয়েছে কাতার।
আল জানিয়ুব স্টেডিয়াম
এ স্টেডিয়ামে আসন সংখ্যা ৪০ হাজার। বিশ্বকাপের সাতটি ম্যাচ হবে এখানে। এটি আগে আল আকরা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। এই স্টেডিয়ামের ছাদ ঢাকা যায় এবং ভেতরে তাপমাত্রা ঠান্ডা করার উদ্ভাবনী ব্যবস্থা রয়েছে। সবসময় যাতে ম্যাচ আয়োজন করা যায়, তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আরবের বিশেষ নৌকার অনুকরণে এটি তৈরি করা হয়েছে।
এই স্টেডিয়ামের নকশা ছড়িয়ে পড়ার পরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তবে প্রবল সমালোচনা হলেও নকশা বদলানো হয়নি। সবার আগে এই স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজই শেষ হয়েছে কাতারে।
আল বায়াত স্টেডিয়াম
এ স্টেডিয়ামে একসঙ্গে খেলা দেখতে পারবে ৬০ হাজার দর্শক। প্রথম ম্যাচসহ আটটি ম্যাচ হবে এখানে। একটি সেমিফাইনালও অনুষ্ঠিত হবে এ স্টেডিয়ামে। এটি দেখতে মরুভূমির তাঁবুর মতো যা আরবদেশে প্রায়ই দেখা যায়। এখানেও ছাদ দিয়ে স্টেডিয়াম ঢাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
দোহার কেন্দ্রস্থলের থেকে সবচেয়ে দূরে এই স্টেডিয়াম। তবে স্টেডিয়ামের মধ্যে পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা এবং বাকি সব সুবিধা রয়েছে।
আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম
আসন সংখ্যা ৪০ হাজার। সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এখানে। প্রথমে এটির নাম ছিল আল-রায়ান স্টেডিয়াম। পরে নাম বদল করা হয় এবং কাতারের সংস্কৃতির আদলে তৈরি করা হয়েছে এই স্টেডিয়াম।
কাতারের মরুভূমির কাছাকাছি অবস্থিত এ স্টেডিয়ামের মরুভূমির সঙ্গে সাদৃশ্যও রয়েছে। রকম কিছু স্থাপত্য এই স্টেডিয়ামে দেখা যাবে। এ স্টেডিয়ামে তাপমাত্রা এখানে তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম
দর্শকাসন ৪০ হাজার। বিশ্বকাপের আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এখানে। কাতার ফাউন্ডেশন এলাকার মধ্যেই রয়েছে এই স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের পর কাতারের নারী দল পাকাপাকিভাবে এই স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে।
এই স্টেডিয়াম দেখতে অনেকটা হীরের মতো। তাই নাম দেওয়া হয়েছে 'মরুভূমির হীরে'। সকালে রোদ পড়লে স্টেডিয়ামটি চকচক করবে, রাতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকছে। গত বছর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল এখানে।
আল থুমামা স্টেডিয়াম
৪০ হাজার আসন সংখ্যার এই স্টেডিয়াম আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই স্টেডিয়ামটি 'গাফিয়া', অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের একটি বিশেষ টুপির আদলে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বকাপের পরেই এর দর্শকাসন কমিয়ে অর্ধেক করা হবে। আসনগুলো বিক্রি করা হবে উন্নত দেশগুলিতে। স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি মসজিদ এবং হোটেলও তৈরি করা হবে।
স্টেডিয়াম ৯৭৪
দর্শকাসন ৪০ হাজার। সাতটি ম্যাচ হবে। স্টেডিয়ামের অদ্ভুত নামকরণ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ৯৭৪টি শিপিং কন্টেনার দিয়ে এই স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে বলে এমন নামকরণ। বিশ্বকাপ হয়ে গেলেই এটি ভেঙে ফেলা হবে।
কাতারের সামুদ্রিক এলাকার পাশেই অবস্থিত এই স্টেডিয়াম এবং আশপাশের এলাকা সৌন্দর্যের বিচারে আলাদা করে নজর কাড়তে বাধ্য। স্টেডিয়াম ভাঙার সময় যাতে দূষণ না হয়, তা আলাদা করে ভাবা হয়েছে।
খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম
দর্শকাসন ৪৫,৪১৬। আটটি ম্যাচ হবে এখানে। এটিই একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটি কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার আগেই উদ্বোধন করে ফেলা হয়। এটি ১৯৭৬ সালে তৈরি হয়। এটি দেশের পুরুষ ফুটবল দলের স্টেডিয়াম।
এর আগে এশিয়ান গেমস, গালফ কাপ, এএফসি এশিয়ান কাপ এবং বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে। ২০০৯ সালে এই স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচ খেলে ব্রাজিল। ২০১৯ সালে এখানেই ক্লাব বিশ্বকাপ জেতে লিভারপুল।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা