কাতারে স্বপ্নের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে পারবেন মেসি?
লিওনেল মেসির অমরত্ব নিয়ে আলোচনা আছে। যদিও কারও কারও চোখে তিনি সর্বকালের সেরা, আবার কারও চোখে 'এলিয়েন'। তবে সর্বকালের সেরার প্রশ্নের উত্তর মেলাতে মেসির নামের একটি বিশ্বকাপ শিরোপা দেখতে চান সবাই। একবার নিশ্বাস দূরত্বে গিয়েও সোনালী শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। এবার দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ আর্জেন্টিনাকে পথ দেখিয়ে ৩৬ বছর পর শিরোপা এনে দিতে পারবেন মেসি? কাতারে কে জিতবে বিশ্বকাপ, এটার পর এই প্রশ্নটি বেশিরভাগ আলোচনার টেবিলে থাকছে।
রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী আর্জেন্টাইন এই ফুটবল জাদুকর কম শিরোপায় চুমু আঁকেননি। কিন্তু সেসব বার্সেলোনার হয়ে। স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে সবই জেতা হয়েছে তার, যেখানে বেশিরভাগ সময়ে কাণ্ডারীর ভূমিকায় থেকেছেন তিনি। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে একটি শিরোপা হয়ে উঠেছিল তার জন্য পরম আরাধ্যের। সেই শিরোপা মিলেছে গত বছর, চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপার শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন মেসি।
তাতে ঘোচে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরা, সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন মেসি। কিন্তু এটা কেবল লাতিন অঞ্চলের শ্রেষ্টত্বের মুকুট, মেসির তো চাই বিশ্ব শিরোপা। সে লক্ষ্যেই এবার রক্ষণভাগ থেকে শুরু করে মাঝমাঠ, আক্রমণভাগ; সব বিভাগে ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়ে কাতার মিশনে গেছেন মেসি। দলের চাওয়ার মতো যেকোনো মূল্যে শিরোপা জিততে প্রস্তুত ৩৬ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এবারের বিশ্বকাপই শেষ মিশন, সেটা আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি। দলের দীর্ঘ দিনের অপেক্ষা, সঙ্গে নিজের শেষ সুযোগ; সব মিলিয়ে কেবল সোনালী শিরোপাতেই চোখ মেসির।
এক নজরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ রেকর্ড:
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ১৭তম
শিরোপা: দুটি
সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (১৯৭৮, ১৯৮৬)
বিশ্বকাপের ম্যাচ রেকর্ড: ৮১ ম্যাচ; ৪৭ জয়, ১০ ড্র ও ২৪ হার
বিশ্বকাপে গোল: ১৩৭ (তৃতীয় সর্বোচ্চ)
সর্বোচ্চ জয়: ৬-০, প্রতিপক্ষ- পেরু (১৯৭৮)
যার ওপরে নজর থাকবে: লিওনেল মেসি
ফিফা র্যাঙ্কিং: তিন নম্বর
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ম্যাচ:
সৌদি আরব (২২ নভেম্বর)
মেক্সিকো (২৬ নভেম্বর)
পোল্যান্ড (৩০ নভেম্বর)
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দল:
আর্জেন্টিনাকে বদলে দেওয়ার অন্যতম রূপকার লিওনেল স্কালোনি। ছয়টি ব্যর্থ চেষ্টার পর তার হাত ধরেই শিরোপার হাসি হেসেছে লাতিন অঞ্চলের এই ফুটবল পরাশক্তি। সর্বশেষ ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত আছে মেসিদের দেশ। দারুণ এই সাফল্যে স্কালোনির ওপর দীর্ঘমেয়াদে ভরসা রাখার পরিকল্পনা আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের। এতে নিজের মতো করে দল গোছানোর স্বাধীনতা মিলেছে তার, যে স্বাধীনতার ফর হিসেবে এবার ফেবারিট হয়ে কাতার বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে আর্জেন্টিনা।
২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ার পর আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে হোর্হে সাম্পাওলির স্থলাভিষিক্ত হন স্কালোনি। দুই বছরের মাথায় কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতা ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ পরে জেতেন ফিনিলাসিমাও। ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে সহজেই হারিয়ে আরেকটি শিরোপা জেতে আলবিসেলেস্তেরা। আর এই পথচলার মাঝে আর্জেন্টিনা দলটি পরিণত হয়েছে অন্যতম শক্তিধর হিসেবে।
আক্রমণভাগে সব সময়ই শক্তিশালী ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগের দুর্বলতায় গোল হজম করতে হতো তাদের। কোচ হিসেবে এই জায়গায় পরিবর্তন করাটা ছিল স্কালোনির প্রথম পদক্ষেপ। সাফল্যের পথ মারাতে বয়সী খেলোয়াড়দের বিদায় জানিয়ে তরুণ ও শিখতে ক্ষধার্থ ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়েছেন স্কালোনি।
গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, সেন্টার-ব্যাক ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো এবং মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলের সমন্বয়ে আর্জেন্টিনা দলের শক্ত মেরুদণ্ড তৈরি করেছেন, তাতে দলের চেহারাই বদলে গেছে। এ ছাড়াও আর্জেন্টাইন কোচ এমন খেলোয়াড়দের খুঁজে পেয়েছেন, যারা লিওনেল মেসির কাঁধ থেকে কিছুটা হলেও চাপ সরিয়ে নিতে সক্ষম। দলটিতে আছেন আনহেল দি মারিয়া, লাউতারো মার্তিনেস, পাওলো দিবালা, লেয়ান্দ্রো পারেদেসের মতো ফুটবলাররা।
কোচকে নিয়ে মেসির ভাষ্য, 'স্কালোনি আমাদের একজন। তিনিই জাতীয় দল নির্বাচন করেছেন। তিনিই সেই মানুষটা, যিনি বিশ্বাস করেছিলেন, কঠিন মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি আমাদের আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন, দলে নতুন মানুষ নিয়ে এসেছেন। তিনি সব সময় জানতেন যে তিনি কী চান, আর আমরা বড় হয়েছি। ২০১৯ কোপা আমেরিকা থেকে আমরা বড় একটি লাফ দিয়েছি।'
প্রত্যাশা:
বিশ্বকাপ মিশনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে গত কয়েক বছর ধরে রসদ যুগিয়েছে আর্জেন্টিনা। অনেক পরিশ্রমের ফল হিসেবে মিলেছে বর্তমান দলটি। যে দলটি আছে দারুণ ছন্দে, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ায়ও তারা রীতিমতো উদাহরণস্বরূপ। এমন একটি দলের চাওয়া যে কেবলই শিরোপা, তা বলাই বাহুল্য। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আবার শিরোপা জয় করতে মরিয়া তারা। দিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসির হাতে সোনালী শিরোপাটি দেখতে যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত পুরো আর্জেন্টিনা দল।
আর্জেন্টিনা স্কোয়াড:
গোলরক্ষক: এমিলিয়ানো মার্তিনেস, হেরোনিমো রুলি ও ফ্রাঙ্কো আরমানি।
ডিফেন্ডার: নাহুয়েল মোলিনা, গনসালো মনতিয়েল, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, হেরমান পেস্সেইয়া, নিকোলাস ওতামেন্দি, লিসান্দ্রো মার্তিনেস, মার্কোস আকুনিয়া, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো ও হুয়ান ফয়েথ।
মিডফিল্ডার: রদ্রিগো দি পল, লেয়ান্দ্রো পারেদেস, আলেক্সিস মাক আলিস্তের, গিদো রদ্রিগেস, আলেহান্দ্রো গোমেস, এনসো ফার্নান্দেস, এসেকিয়েল পালাসিওস ও থিয়াগো আলমাদা।
ফরোয়ার্ড: আনহেল দি মারিয়া, লাউতারো মার্তিনেস, হুলিয়ান আলভারেস, পাওলো দিবালা, আনহেল কোরেয়া ও লিওনেল মেসি।
কোচ: লিওনেল স্কালোনি