এক ম্যাচ আগেই কোহলিদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
প্রথম ওয়ানডের দুঃস্বপ্ন ফিরে এলো দ্বিতীয় ম্যাচেও। ব্যাট হাতে টপ অর্ডাররা সেই হতাশার গল্পই লিখলেন। দল যখন মাঝ দরিয়ায়, আবারও কাণ্ডারী হয়ে দেখা দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার তার সঙ্গী অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনের ব্যাটে মিললো লড়াইয়ের পুঁজি। জবাবে দিক হারালেও আশা জাগালেন শ্রেয়াস আইয়ার, অক্ষর প্যাটেলরা। কিন্তু সেই আশা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া রোহিত শর্মা ৯ নম্বরে নেমে তুললেন ঝড়, হাতে থাকা ম্যাচ ছুটে যাওয়ার দশা। শেষ বল পর্যন্ত চেষ্টা চালালেন ভারত অধিনায়ক। যদিও ব্যবধান থেকেই গেল, রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে শেষ হাসি হাসলো বাংলাদেশ।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিলো ঘরের মাঠের দলটি। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সিরিজ জয়। ২০১৫ সালে প্রথমবারের ভারতের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এরপর সাত বছরে আর দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হয়নি। সেই হিসেবে ঘরের মাঠে টানা দুইবার ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচেও টসভাগ্য পক্ষে আসে বাংলাদেশের। টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। রাতে কঠিন হয়ে যায় বলে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশ এদিনও চরম অগোছালো শুরু করে। রক্ষা হয় ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সপ্তম উইকেটের রেকর্ড জুটিতে। তাদের ব্যাটে ৭ উইকেটে ২৭১ রান তোলে বাংলাদেশ।
জবাবে শুরুতে দিক হারানোর পরও শ্রেয়াস ও অক্ষরের ব্যাটে লড়াইয়ে থাকে ভারত। কিন্তু এ দুজনের বিদায়ে ম্যাচ কঠিন হয়ে যায় কোহলিদের জন্য। চোটগ্রস্ত আঙুল নিয়েই নয় নম্বরে মাঠে নামতে হয় রোহিতকে। একটু দেখেশুনে থিতু হয়েই ভারত অধিনায়ক রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন। যদিও তা যথেষ্ট হয়নি, ৯ উইকেটে ২৬৬ রানে থামে ভারত। ৩৮ ওয়ানডেতে এ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে সাতটি ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
ম্যাচের আসল উত্তেজনার শুরু ৪৬তম ওভারে। এবাদত হোসেনের করা এই ওভারে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন রোহিত, এই ওভার থেকে ওঠে ১৮ রান। পরের ওভারে একটি বল করে চোটের কারণে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। তার ওভার পূর্ণ করা খরচা করেন মাত্র ১ রান। পরের ওভারটি আরও দাপুটে, মুস্তাফিজুর রহমানের ৫টি ডেলিভারি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি মোহাম্মদ সিরাজ। শেষ বলটি ব্যাটে লাগলেও রান নেননি রোহিত।
এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মেইডেন নিয়ে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেন মুস্তাফিজ। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ভারতের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪০ রান, বাংলাদেশ তখন হয়তো জয়ের গন্ধ পাচ্ছিল। কিন্তু তখনই রোহিত ঝড়ের শুরু ও বাংলাদেশের খেই হারানো। মাহমুদউল্লাহর করা প্রথম বলেই রোহিতের ছক্কা। দ্বিতীয় বলটি ওয়াইড, সঙ্গে আরও ২ রান। দুই বলেই চলে যায় ৮ রান। এরপর আরও হতাশা, রোহিত ক্যাচ তুললেও ফেলে দেন এবাদত হোসেন। জীবন পেয়ে পরের বলে আবার ছক্কা রোহিতের। এরপর দুই রান এবং পঞ্চম বলে আবারও ক্যাচ ছাড়া, এবার ক্যাচ ছাড়েন বিজয়। শেষ বলে সিরাজকে বোল্ড করেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষ ওভারে ভারতের দরকার পগে ২০ রান। প্রথম বলটি ডট যাওয়ার পর মুস্তাফিজকে টানা দুটি চার মারেন রোহিত। এরপর আবার একটি ডট, পঞ্চম বলে গিয়ে ছক্কা। শেষ বলে ছয় রানের দরকার পড়লে তা আর তুলতে পারেননি আঙুলে ব্যান্ডেস লাগিয়ে মাঠে নামা রোহিত। ভারত অধিনায়ক মাত্র ২৮ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে ভারতকে লড়াইয়ে রাখা শ্রেয়াস ১০২ বলে ৮২ রান করেন। অক্ষর ৫৬ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৬ রান করেন। বাকিদের কেউ ১৫ রানের গন্ডিও পেরোতে পারেননি। দলটির তারকা ব্যাটসম্যান কোহলি ৬ বলে ৫ রান করে আউট হন। বাংলাদেশের পেসার এবাদত সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। আগে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি করা মিরাজ বল হাতেও দারুণ করেন, ৬.১ ওভারে তার শিকার ২ উইকেট। সাকিব আল হাসান ২টি এবং মুস্তাফিজ ও মাহমুদউল্লাহ একটি করে উইকেট নেন।
দারুণ জয়ে শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়েই সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে। কিন্তু ব্যাট হাতে ইনিংসের মাঝপথে না যেতেই লক্ষ্য মুছে যাওয়ার দশা। ১৮ ওভারে ৬৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে জিতলেও ব্যাটিং নিয়ে হতাশার শেষ ছিল না। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই পরিণতি হচ্ছিল। এখান থেকে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ।
শুরুতে কিছুটা সময় নিয়ে উইকেটে থিতু হন এই দুই ব্যাটসম্যান। এরপর শুরু হয় তাদের লড়াই। দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে পরে আরও অনেকটা সময় দলকে পথ দেখিয়ে যান। সপ্তম উইকেটে ১৬৫ বলে ১৪৮ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ। ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে এটাই বাংলাদেশের সেরা জুটি।
মহাকার্যকর এই জুটি গড়ার পথে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। কিছুক্ষণ পর মাহমুদউল্লাহও ছুঁয়ে ফেলেন ৫০। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর আরও কিছুটা সময় লড়াই চালিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। দলের দুঃসময়ে হাল অভিজ্ঞ এই বাটসম্যান শেষ পর্যন্ত ৯৬ বলে ৭টি চারে ৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন।
তার বিদায়ে ইনিংসের বাকিটা সময় সামলান মিরাজ, এ সময় সঙ্গে পান নাসুম আহমেদকে। বাঁহাতি এই স্পিনারের সঙ্গেও অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানের জুটি গড়েন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। নাসুম ১১ বলে ১৮ রানে অপরাজি থাকেন। তবে মিরাজ শেষটায় ঝড় বইয়ে দেন, অসাধারণ সব শটে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ৮৩ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০০ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন তিনি। ওয়ানডে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করলেন মিরাজ।
এর আগে লিটন কুমার দাস থেকে শুরু করে এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব; কেউই পারেননি দলকে ঠিক পথে রাখতে। বিজয়, শান্ত, মুশফিকরা সাবলীল শুরু করলেও পরে হতাশই করেছেন। ১১ বলে ৯ রান করেন বিজয়। লিটন ৭ রান করেন ২৩ বলে। থিতু হয়েও শান্ত ৩৫ বলে ২১ রান করে আউট হন। সাকিব ৮ রান করতে খরচা করেন ২০ বল। ২৪ বলে ১২ রান করেন মুশফিক। আফিফ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ভারতের ওয়াশিংটন সুন্দর ৩টি এবং মোহাম্মদ সিরাজ ও উমরান মালিক ২টি করে উইকেট নেন।