লিটন-রনির পর তাসকিনের শাসন, জিতলো বাংলাদেশ
আগে ব্যাটিং করতে নেমে চললো লিটন কুমার দাস ও রনি তালকুদারের শাসন। খুনে ব্যাটিং করে গেলেন দুজনে। সঙ্গে শামীম পাটোয়ারী, সাকিব আল হাসানদের অবদান। তাতে ফুলেফেঁপে ওঠে বাংলাদেশের স্কোরকার্ড। কিন্তু বৃষ্টির হানায় নতুন লক্ষ্য মেলে আয়ারল্যান্ডের। যেখানে শুরুতে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু হাসান মাহমুদের বোলিংয়ে ফেরে স্বস্তি, এরপর তাসকিন আহমেদের আগুনে বোলিংয়ের সঙ্গে সাকিবের স্পিন জাদু। এক ম্যাচে অনেক রোমাঞ্চ জিতে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলো বাংলাদেশই।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। ২-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটেও দারুণ শুরু করলো।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। দুর্বার শুরুর পর আরও কিছুক্ষণ দলকে পথ দেখান লিটন ও ম্যাচসেরা রনি। এরপর সাকিব ও শামীমের ব্যাটে ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে বাংলাদেশ ২০৭ রান তুললে বৃষ্টি শুরু হয়। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর বৃষ্টি আইনে ৮ ওভারে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০৮। তাসকিনের বোলিং তোপে ৫ উইকেটে ৮১ রানের বেশি তুলতে পারেনি আইরিশরা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে আয়ারল্যান্ড। প্রথম ওভারে নাসুম আহমেদকে বোলিংয়ে টেনে বিপাকে পড়ে যান সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের ওভার থেকে ১৮ রান তোলেন পল স্টার্লিং ও রস এডেয়ার। দ্বিতীয় ওভারেও চলে তাদের ঝড়, মুস্তাফিজুর রহমানের করা ওভার থেকে ১৬ রান তোলেন স্টার্লিং-এডেয়ার।
তৃতীয় ওভারে গিয়ে স্বস্তি ফেরান হাসান মাহমুদ। তরুণ এই পেসার ৫ রান খরচায় তুলে নেন ১৩ রান করা এডেয়ারের উইকেট। এর পরের ওভারে বল হাতে শাসন করে আইরিশদের কোণঠাসা করে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের এই গতি তারকা টানা দুই উইকেটসহ ৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন।
ফিরিয়ে দেন লরক্যান টাকার, জর্জ ডকরেল ও ৮ বলে ৪টি চারে ১৭ রান করা স্টার্লিংকে। ৩.৫ ওভারে ৪০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আইরিশরা। এরপর হ্যারি টেক্টর ১২ বলে ১৯ ও গ্যারেথ ডেলানি ১৪ বলে ২১ রান করলেও দলের হার ঠেকাতে পারেননি। আগুনে বোলিং করা তাসকিন ২ ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন। একটি উইকেট নেন হাসান। মুস্তাফিজ ২ ওভারে ১৬ ও সাকিব ১ ওভারে ৫ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই চড়াও হন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন ও রনি। শুরুতে মিস টাইমিং হলেও সময়ের সাথে সাথে মানিয়ে নেন এই দুই ব্যাটসম্যান। শুরু হয় লিটন-রনি ব্যাটিং শাসন, তাদের খুনে ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন আয়ারল্যান্ডের বোলাররা। অসাধারণ সব শটে মুড়ি-মুড়কির মতো রান তোলা লিটন-রনি পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দলের স্কোরকার্ডে যোগ করেন ৮১ রান। অবিচ্ছিন্ন উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যায় পেছনের সব সংখ্যাকে। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৬ রান। ২০১৩ সালে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৫ লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে এই রান তোলে বাংলাদেশ, যদিও ৬ ওভারের মধ্যেই পড়েছিল ৪ উইকেট। প্রায় ১০ বছর পর সেই স্কোর ছাড়ানোর দিনে পাওয়ার প্লেতে লিটন ১৯ বলে ৪০ ও রান ১৭ বলে ৩৮ রান করেন। দুজন মিলে মারেন ৭টি চার ও ৫টি ছক্কা। ১৪৮ টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে খুব একটা দাপুটে নয়। পাওয়ার প্লেতে কেবল ৬বার ৭০ বা তার বেশি রান করেছে বাংলাদেশ। যার চারটিই ২০১৮ সালে।
উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলা লিটন ও রনি উদ্বোধনী জুটিতে ৭.১ ওভারে ৯১ রান তোলেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দশম হাফ সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন লিটন। জাদুর হাতে খেলা দারুণ সব শটে ২৩ বলে ২০৪. ৩৪ স্ট্রাইক রেটে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ রান করে আউট হন লিটন। তার বিদায়ের পরও থামেনি রনির তাণ্ডব। নাজমুল হোসেন শান্তকে অন্য প্রান্তে রেখে খুনে ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি।
প্রায় আট বছর পর দলে ফেরা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। জাতীয় দলের হয়ে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা রনির এটাই প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। লিটনের বিদায়ে বাংলাদেশের রান তোলার গতি কিছুটা কমলেও রনি তা একই তা অনেকটা পুষিয়ে নেন। ১১তম ওভারে গিয়ে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ, ১৩ বলে একটি ছক্কায় ১৪ রান করে আউট হন শান্ত।
এরপর শামীম পাটোয়ারীকে নিয়ে এগোতে শুরু করেন রনি। ১২ ওভারে ২ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৯ রান, ১২তম ওভার থেকেই আসে ১৮ রান। এরপর অবশ্য রান তোলার গতি কমে আসে। পরের দুই ওভার থেকে ১৫ রান, হারাতে হয় একটি উইকেট। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া রনি ১৪তম ওভারের শেষ বলে আউট হন। এর আগে ৩৭ বলে ১৭৬.৩১ স্ট্রাউক রেটে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৭ রানের চোখ জুড়ানো এক ইনিংস খেলেন।
রনির বিদায়ের পর শামীম ও তাওহিদ হৃদয় ১৩ বলে ১৮ রানের জুটি গড়েন। উইকেটে গিয়েই হাত খুলে খেলা শামীম কার্যকর ইনিংস খেলতে পারলেও হৃদয় তা পারেননি। ২০ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩০ রান করে আউট হন শামীম। ওয়ানডে অভিষেকেই আলো ছড়ানো হৃদয় ৮ বলে একটি ছক্কায় ১৩ রান করে বিদায় নেন।
এর আগেই উইকেট যোগ দেওয়া সাকিব ঝড়ো ব্যাটিং করেন। ১৩ বলে ৩টি চারে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মেহেদী হাসান মিরাজ ১ বলে একটি চারে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আয়ারল্যান্ডের ক্রেইগ ইয়ং ৪৫ রানে ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান হ্যারি টেক্টর, ার্ক এডেয়ার ও এই সফরে এখন পর্যন্ত আইরিশদের সফলতম বোলার গ্রাহাম হিউম।